এক নজরে

Republic Day Tableau: আবারও “ব্রাত্য” বাংলা

By admin

January 15, 2022

কলকাতা ব্যুরো: আবারও বঞ্চিত বাংলা। সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লির রাজপথে দেখা যাবে না বাংলার ট্যাবলো। কিন্তু কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র তা এখনও স্পষ্ট নয়। এবিষয়ে এখনও কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে কোনও চিঠিও দেওয়া হয়নি। তবে এই সংক্রান্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রকের সাম্প্রতিক বৈঠকে ডাক পাননি বাংলার প্রতিনিধিরা। যা থেকে কার্যত স্পষ্ট সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানীর রাজপথে দেখা মিলবে না বাংলার ট্যাবলোর। আর কেন্দ্রের এমন আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া মিলেছে সমস্ত মহল থেকেই। বসু পরিবার থেকে রাজ্যের শাসকদল, সকলেই নিন্দা করেছেন এই সিদ্ধান্তের। 

সরকারি সূত্রে খবর, এবার সাধারণতন্ত্র দিবসের থিম, “আজাদি কা অমৃত মহোৎসব।” স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে এই থিম কেন্দ্রের। আর এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের ফোকাস ছিল–নেতাজি কারণ, এবার সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী। ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, স্বাধীনতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে বাংলা-নেতাজি। তারপরেও সাধারণতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো থেকে কেন বাদ পড়ল বাংলা?

কেন্দ্রীয় সূত্র বলছে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ভোটমুখী উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের ট্যাবলোকে ছাড় দিয়েছে। অথচ উত্তরপ্রদেশের ট্যাবলোর থিম কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও উত্তরাখণ্ডের থিম কেদারনাথ। দু’টি থিমই ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক-বাহক হলেও স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে কার্যত কোনও সম্পর্ক নেই তাদের। স্বাভাবিকভাবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

সরকারি সূত্রের খবর, এবারের ট্যাবলোয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলার বিপ্লবী, বিশেষ করে দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভূমিকা তুলে ধরতে চেয়েছিল বাংলা। নকশা ছিল থ্রি-ডি। সেই ট্যাবলোয় তুলে ধরা হত নেতাজির পতাকা উত্তোলন থেকে রবীন্দ্রনাথ-সুভাষের যুগলবন্দী। থাকত আজাদ হিন্দ বাহিনীর ইতিহাসও। ঠিক ছিল, চলন্ত ট্যাবলোর সঙ্গে ৬৫ সেকেন্ডের জন্য বাজবে ‘কদম কদম বাড়ায়ে যা’। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বলেই ধরে নিয়েছে বাংলা। অথচ নেতাজিকে সম্মান জানাতে তাঁর জন্মদিবস থেকে সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন শুরু করছে কেন্দ্র। কিন্তু নেতাজির রাজ্যের ট্যাবলো বাদ পড়ছে। 

জানা গিয়েছে, ট্যাবলোর থিম-রাজ্যের পরিকল্পনা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে প্রতিরক্ষামন্ত্রক। ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই সমস্ত বৈঠকে ডাক পেয়েছে বাংলা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণবশত জানুয়ারির প্রথম থেকে সেই সমস্ত বৈঠকে ডাক পায়নি বাংলা। ২৩ জানুয়ারি ট্যাবলোর চূড়ান্ত ড্রেস রিহার্সাল। তার আগে বাংলাকে বৈঠকে না ডাকায় কেন্দ্রের বার্তা কার্যত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে কোনও পক্ষই কোনও বিবৃতি দেয়নি।

উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে ২০২০ সালেও এই ঘটনা ঘটেছিল। সে বছর আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়েছিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প “কন্যাশ্রী”। সেই প্রকল্পের ট্যাবলো তৈরি করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সাধারণতন্ত্র দিবসে দিল্লির রাজপথের অনুষ্ঠান থেকে বাদ পড়েছিল বাংলা। সেই সময় বলা হয়েছিল রাজ্য সরকারের প্রচারমূলক ট্যাবলো বানিয়ছে বাংলা। অথচ একুশের বিধানসভা ভোটের আগে ২৬ জানুয়ারির অনুষ্ঠানে দিল্লির রাজপথে বাংলার ট্যাবলোর দেখা মিলেছিল। যা দেখে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, তবে কি ভোটের আগে বঙ্গবাসীর মন জয় করতেই বাংলার ট্যাবলোকে সাধারণতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে স্থান দিয়েছিল কেন্দ্র? উত্তর অজানা।

ইতিমধ্যে এই বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন নেজাতি সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু। তাঁর কথায়, নেতাজিকে সম্মান করার আগে তাঁর আদর্শকে বুঝতে হবে। তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়িত করতে হবে। কিন্তু বর্তমানের বিভেদমূলক রাজনীতি দেশের অন্দরে বিভেদ তৈরি করছে। নেতাজির ট্যাবলো না থাকলে সাধারণতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ অর্থহীন।

নিন্দা করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্য সচেতক সুখেন্দশেখর রায়-ও। টুইটারে তিনি লেখেন, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নেতাজির লড়াইকে অসম্মান করল। লজ্জাজনক।

তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাংলার সঙ্গে চিরকালই এই ধরনের আচরণ করা হয়। এই ধরনের চেষ্টা বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বাংলার মানুষকে অপমান। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। এই ট্যাবলো যেন বাতিল না করা হয় সেই নিয়ে আবার কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হবে।