কলকাতা ব্যুরো: সিবিআই মঙ্গলবার বেআইনি কয়লা খনি তদন্ত করে যাওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে বুধবার বারাবনির বেগুনিয়া বেআইনি খাদান ধসে তলিয়ে গেল বাড়ি হলে বেআইনি কয়লা খনি গিয়ে বিপদ দাঁড়ান আশঙ্কা আরো একবার সত্যি হলো।
“কয়লা ময়লা ” বলতেন রানীগঞ্জ কয়লা খনি অঞ্চলের সি, পি, এম নেতা প্রয়াত সংসদ হারাধন রায় l অথচ ওই বাম জামানায় অবৈধ কয়লার কারবার খনি অঞ্চলে চলেছে রমরমিয়ে। রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল ও ই, সি, এলের কিছু অসাধু আধিকারিক, সিআইএসএফ এবং পুলিশ ও এক শ্রেণীর সংবাদিকদের নিয়মিত মাসহারা দিয়ে চলতো এই অবৈধ কয়লার ব্যবসা। রাজ্যে পালাবদলের পর বেশ কিছু মাস এই অবৈধ কারবার বন্ধ থাকলেও, তার পর থেকেই এই কারবার বাম জামানাকেও ছাড়িয়ে যায় l
বাম জমানায় ইসিএলের উপর সমস্ত দায় চাপিয়ে শুধু এলাকায় ধস, গ্যাস ও আগুনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেন বামফ্রন্টের নেতারা। খনি অঞ্চলের ধস, গ্যাস ও আগুনের সমস্যাকে ইস্যু করে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারে বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখতেন বামেরা। অবশ্যই অবৈধ কয়লার কারবারিদের আড়াল করে। কারণ এই অবৈধ কয়লা কারবারিরাই আসলে খনি অঞ্চলের রাজনৈতিক দলগুলির ভাগ্য ও ভাড়ার নিয়ন্ত্রক।
রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলে অবৈধ কয়লা কারবারের সিন্ডিকেটের পরিচালক পরিবর্তন হয়েছে মাত্র l আর পরিবর্তন হয়েছে নজরানা পাঠানোর স্থান, অবিভক্ত বর্ধমান থেকে কলকাতায় l ট্রাডিশন সেই একই।
প্রয়াত সংসদ হারাধন রায় অবৈধ কয়লা নিয়ে মুখর হয়ে ছিলেন বলে তাকে পার্টি অব্যহতি দেয় বলে মনে করেন বহু সিপিএম নেতা l তারই মাঝে হারাধন রায় খনি অঞ্চলের ধস, গ্যাস ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের দাবীতে আমৃত্যুকাল মামলা লড়েছেন সুপ্রীম কোর্টে l
অধিক উৎপাদানের লক্ষে ই, সি, এলের বেপরওয়া কয়লা উত্তোলনের পাশাপাশি কয়লা মাফিয়াদের দীর্ঘ দিনের যথেচ্ছ কয়লা উত্তোলন খনি অঞ্চলের ধস, গ্যাস ও আগুনের অন্যতম কার। রাজ্যের শাসক দলসহ কোন রাজনৈতিক দলই খনি অঞ্চলের এই ভয়বাহ সমস্যাকে জাতীয় স্তরে ইস্যু করতে না পাড়ায় খনি অঞ্চল আজ ধংসের পথে l আসলে শাসক বা বিরোধী সব দলের কাছেই বেআইনি কয়লা মধুভান্ডের মত। সকলেরই প্রভাব অনুযায়ী রয়েছে বখরা। তাই যেচে কেউই সেই মধুভাণ্ড ভাঙতে নারাজ। তাতে ধস হোক, আগুন লাগুক আর মানুষের মৃত্যু–যাই হোক না কেন।
অবৈধ খনিতে মৃত্যু, একের পর এক জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া, বনাঞ্চল ধ্বংস ও বায়ু দূষণে জেরবার খনি অঞ্চল। গত সোম ও মঙ্গলবারের খনি অঞ্চলে অবৈধ খনিতে সিবিআই হানা খনি অঞ্চলের “না বলতে পারা মানুষ”দের অস্ফুট স্বরের সম্মিলিত ধ্বনি l
সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা অন্ডাল, রানীগঞ্জ, বাড়াবনিতে গিয়ে হতবাক। খাদান থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ কয়লা তোলার পরেও কিছু কয়লা তার গায়ে থাকার কথা। না হলে ধ্বস নামবে। অথচ সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা গিয়ে দেখেছেন, সেসব খাদান থেকে চেচে পুছে কয়লা তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন সেসব খাদান জলভরা পুকুর। এই অঞ্চলে কিভাবে প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কালো কারবারিরা কয়লার কালো ব্যবসা চালায় সে ব্যাপারে আরো বেশি করে এখন নিশ্চিত সিবিআই।
যদিও বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকা বেআইনি কারবারে হঠাৎ সিবিআই হানায় অনেকের কাছেই এটা রাজনৈতিক হাতিয়ার এর মত মনে হচ্ছে। কেন্দ্রের শাসকদল রাজ্যের শাসকের কালো পয়সার এই রাস্তা বন্ধ করতেই হঠাৎ কয়লার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। তবে যাদের জীবন বিপন্ন এখানে, তারা মনে করেন, দেরিতে হলেও এই তদন্ত শুরু হওয়ায় অন্তত এবার ইসিএলের সরকারি আধিকারিকরা একটু সতর্ক হবেন। তাহলেই অনেকটা বন্ধ হওয়া সম্ভব এই কালো কারবার।