মৈনাক শর্মা
দেশের সভ্যতা বিকাশের জন্য প্রাথমিক দরকার বৈদেশিক আক্রমণ থেকে নাগরিক সুরক্ষা। আর এই সুরক্ষা ও দেশের শান্তিপূর্ণ শাসন ব্যবস্থার লক্ষে গড়ে ওঠে রাজতন্ত্র। কিন্তু পরবর্তীকালে মানবাধিকার ও রাজার সৈরাচারিতার বিপক্ষে গড়ে ওঠে গণতন্ত্র। অর্থাৎ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত তাদের মধ্যেই একজন হবে প্রশাসক। জনগণ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তাদের জনাদেশ দ্বারা পরিবর্তন বা প্রত্যাবর্তন করতে পারবে তাদের প্রশাসকে। আর ক্ষমতায় থাকা পূর্ব প্রশাসক জনাদেশ মেনে নিজের ক্ষমতা তুলে দেবে নতুন নির্বাচিত প্রার্থীকে। কিন্তু জনাদেশকে অমান্য করে নিজের আধিপত্য বজায় রাখবার প্রচেষ্টাও করেছে বহু প্রশাসক সম্প্রতি এমনই ঘটনার সাক্ষী রইলো পৃথিবীর প্রাচীন গণতান্ত্রিক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
পরাজয়ের লজ্জা ঢাকতে নির্বাচনের পদ্ধতির উপর আস্থা না রেখে নিজের ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ মার্কিন তারকা রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তার জেরেই গত সপ্তাহে ট্রাম্প অনুগতদের আগ্রাসনের শিকার হয় রাজধানী ওয়াসিংটন।.প্রশাসক ট্রাম্পের উস্কানি মূলক বক্তব্যে রণক্ষেত্রের রূপ ধারণ করে মার্কিন হোয়াইট হাউস। ট্রাম্পের কীর্তির উপর সরব হয় বিরোধীরা। তার জেরে বাতিল হয় ফেইসবুক, টুইটের এর মতো সোশ্যাল এপ্লিকেশন থেকে ট্রাম্পের একাউন্ট। নব নিবাচিত রাষ্ট্রপতি বিডেন ও ট্রাম্পের ক্ষমতার বিনিময় না হলে গনতন্তের ধারায় বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন অবস্থায় বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে পদচ্যুত করার লক্ষে মহাঅভিযোগ (impeachment ) পদ্ধতির লক্ষে বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি।
মহাঅভিযোগ এর মধ্যে ট্রাম্পের ক্ষমতাচ্যুতি আদপে সম্ভব ?
ভারতের সংসদের লোকসভা ও রাজ্যসভার মতই আমেরিকাতেও দুটি কক্ষ। যার প্রথম কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভ ও দ্বিতীয় কক্ষ সেনেট্। যার একটি কক্ষে ডেমোক্রেটিক পার্টি ও অপর কক্ষ সেনেটে ট্রাম্পের দল রিপাবলিক দের দখলে রয়েছে। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ২৫ তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী মহাঅভিযোগ প্রস্তাব রাখা হয় প্রথম কক্ষ হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভে। যা সর্ব সম্মতিতে উত্তীর্ণ হলে প্রস্তাবটি দ্বিতীয় সিনেটে যাবে। মহাঅভিযোগ প্রস্তাব যদি সিনেটেরও সম্মতি লাভ করে, তবেই রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের ক্ষমতা চলে আসবে উপরাষ্ট্রপতি কাছে।. কিন্তু প্রথম কক্ষে সর্ব সম্মতি লাভ করলেও ট্রামের সমর্থিত রিপাবলিক পার্টির আধিপত্যে থাকা দ্বিতীয় কক্ষ সিনেটে প্রস্তাবটি সম্মতি না পাওয়ার কারণ বেশি। সেক্ষেত্রে আমেরিকার গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভবিষৎ চিন্তার সম্মুখীন রয়েছে।
গত বুধবারের হওয়া ঘটনা প্রশ্ন তুলছে আমেরিকার প্রশাসাণের উপরেও। শুধু তাই নয়, ট্রাম্প সমর্থকদের কয়েকজন পারলামেন্টের অধ্যক্ষ পেলোসির অফিসও ভাঙচুরের চিত্র সামনে আসে। যার ফলে নিন্দায় সরব হয় বাকি গণতান্ত্রিক দেশ গুলি। গণতান্ত্রিক দেশে জনাদেশকে সম্মান করে শক্তি স্থানান্তর হলো, সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষত্রে বিশ্বের প্রাচীন গণতান্ত্রিক ও উন্নত দেশ আমেরিকাতে এইরূপ চিত্র দেখলে ভবিষ্যতে বাকি প্রজাতান্ত্রিক দেশ গুলতেও পড়তে পারে এর প্রভাব। সেক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ার মতো দেশ গুলির মতনই, নামমাত্র গণতান্ত্রিক পরিবেশের পরিকাঠামো দেখা যেতে পারে ভবিষতে।