কলকাতা ব্যুরো: গত প্রায় দেড় বছরের স্থবির অবস্থা দূর করে পর্যটনকে ঘুরে দাঁড় করাতে গুটিগুটি পায়ে জোট বাঁধছেন পর্যটন প্রেমীরা। আর সেই বন্ধুর পথে কাটা সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বন্ধু হয়ে এগিয়ে এসেছেন কিছু পর্যটন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান। পর্যটনের কোন বিশেষ দিন হয় না, এই স্বাভাবিক কথাটা মাথায় রেখেও তারা ভ্রমণপিপাসুদের ইচ্ছে ও চাহিদা মাথায় রেখে গ্রাম্য পর্যটনে জোর দিচ্ছেন। তাই ফের হোম স্টে গুলিকে ঘুরে দাঁড় করানোর চেষ্টা।
[masterslider id=”2″]
শহুরে আতিথেয়তা, স্টার হোটেলের পরিষেবা থেকে দূরে গ্রাম্য পরিবেশে একেবারে প্রকৃতির মাঝে থেকে শ্বাস নিতে চাইছেন সবাই। যেখানে সবুজের মাঝে দিন কাটবে, যেখানে পড়তে হবে না মাস্ক, তা থুতনিতে নামালেও গেল গেল রব উঠবে না। বর্তমান আবহে তেমন পরিবেশ উপহার দিতেই ওয়াল্ড ট্যুরিজম ডে-কে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম সংক্ষিপ্ত ভাষায় অ্যাক্ট।
লক্ষ্য, শহুরে পর্যটককে একেবারে নির্মল পরিবেশে কয়েকটা দিন কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া। আর এই ভাবনা থেকেই সংগঠনের আহ্বায়ক রাজ বসুর ডাকে একজোট হয়েছেন হোম স্টে মালিকরা। গত দেড় বছরে মহামারী অনেকেরই ব্যবসা বন্ধ করেছে। আপাতত এ রাজ্যের ডুয়ার্স, তরাই, পাহাড়ের সঙ্গেই সিকিমের হোম স্টে মালিকদের নিয়ে তিনি এক নতুন ভাবনা নিয়েছেন। আশা, ফের ব্যবসা ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। সেই আশায় বুক বেঁধেছেন অন্যরাও। সেই উদ্যোগে শনিবার শিলিগুড়ির মৈনাক টুরিস্ট লজে শুরু হয়ে গেল হোম স্টে কংগ্রেস। এ রাজ্যের পাহাড় এবং ডুয়ার্স মিলিয়ে প্রায় ২২০০ হোম স্টে ছিল। কিন্তু গত দের বছরের সংকটজনক আবহে অন্তত ২০০ হোমস্টে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাকিদের বেশিরভাগই বন্ধের অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। সিকিমের প্রায় ৭০০ হোমস্টে রয়েছে। কিন্তু তাদের অবস্থাও একই।
অথচ এই শনিবার উদ্যোক্তারা যে ঘোষণা করলেন, তাতে একদিকে ভ্রমণপিপাসু, অন্যদিকে হোম স্টের সঙ্গে যুক্ত মালিকরা সুদিন ফেরার আশা করতেই পারেন। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, দুর্গাপূজার পাঁচ দিনের জন্য সব হোম স্টে বুকিং হয়ে গেছে। ফলে এখনো শহুরে অঞ্চলে যে ভয় জাঁকিয়ে বসে রয়েছে, সেই আবহাওয়ায় বেড়াতে যাওয়া নাগরিকের কাছে এক সুখের খবর হতেই পারে। যেখানে বেড়াতে গেলে খুব বেশি বিধিনিষেধ প্রয়োজন হবে না। কারণ এই লকডাউনের এবং মহামারী আবহে পর্যটনপ্রেমী ব্যবসায়ীদের কাছে এত মানুষ নির্ঝঞ্ঝাটে করোনা থেকে দূরে একটু শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জায়গা খুঁজে দেওয়ার আবদার করেছেন, যার থেকে উৎসাহ পেয়েছেন তারাও। তাদের ভাবনা থেকেই ইতিমধ্যে এইসব হোম স্টে গুলির সঙ্গে যুক্ত মালিক ও কর্মীদের দেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণ। যেখানে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে কিভাবে অতিথিকে দিতে হবে তার আদর আপ্যায়ন সেই পথ খুঁজে দেওয়া হয়েছে। আর সে ক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা তো রয়েছেই।
আগামী সোমবার পর্যটন দিবস। সেই দিনটিকে মাথায় রেখেই উত্তরবঙ্গ তথা পাহাড়, সিকিমকে সঙ্গে নিয়ে রাজ বসুর মতো পর্যটনপ্রেমী ব্যবসায়ীরা খুঁজে ফেলেছেন, বেশ কিছু ছোট ছোট ঠিকানা। যার কিছু চালু ছিল আগেই, আর কিছু এখন জনপ্রিয়তার পথে। সেই সুখ ইয়ং শেরওয়ানি, চারকোল, কাফের, লেপচা খা, রায়মাটাং, বক্সা দুয়ার, জয়ন্তী, আট মাইল, রাজা ভাতখাওয়ার মত পর্যটক কেন্দ্র গুলি আবার আগামী ১ অক্টোবর থেকে ফিরে যাচ্ছে পুরনো পথেই অর্থাৎ পর্যটকরা অনেকটাই নির্দ্বিধায় এবং নির্ভাবনায় যেতে পারবেন প্রকৃতির মাঝে থাকা কোলাহল থেকে দূরের ছোট ছোট গ্রাম এলাকায়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার ভাইচুং ভুটিয়া সিকিমের গ্রামের বাড়ির এলাকায় থাকার ব্যবস্থা হল আপনার। কেমন লাগবে? একেবারে প্রকৃতির মধ্যে প্রাণ খুলে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ। গাছপালা, পাখি আর আপনার পরিবার। এমন পরিবেশে দুটো দিন কাটিয়ে আশা এ এক অন্যরকম ভাবনা। কারণ পাহাড়ের বহু মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য যেতেন ভিনদেশে বা ভিন রাজ্যেও। গত বছরের পরিস্থিতি তাদের ঘরমুখো হতে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু তারা এখানে কাজ পাচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে তারাও এখন নতুন করে কাজের সুযোগ পেয়েছেন।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন এন্ড ট্যুরিজম তিনদিনের যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে, এর একটা দিক যদি বাহ্যিক হয়, তাহলে অপরদিকে অন্তভাবনা, অর্থাৎ উত্তরবঙ্গ, পাহাড় এবং প্রতিবেশী রাজ্যের প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে কর্মসংস্থানের রাস্তা করে দেওয়াই এর লক্ষ্য। আর এই পথে প্রতিবেশী নেপাল এবং ভুটানের গ্রামাঞ্চলেও যাতে এই ভাবেই হোম স্টে মানুষের আগ্রহ জাগায়, লক্ষ্য সেইদিকেই।
প্রসঙ্গত, বিশ্ব পর্যটন দিবসকে সামনে রেখে শনিবার শিলিগুড়ির মৈনাক ট্যুরিস্ট লজে ‘হোম স্টে কংগ্রেস’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানেই উত্তরবঙ্গের পর্যটনকে আরও আকর্ষণীয় ও পর্যটকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে বেশ কিছু নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়া। করোনা মহামারির আবহে ও পরবর্তী সময়ে উত্তরবঙ্গের পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করে তুলতে ও হোম স্টে পর্যটনকে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে শনিবার থেকে তিন দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন দিবস উৎসবের সূচনা হলো শিলিগুড়িতে। উৎসবের সূচনা করেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এবং গুরুবাস পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ভাইচুং ভুটিয়া।