কলকাতা ব্যুরো: ক্রিকেট মাঠে হার না মানা বাংলার মহারাজ ঘায়েল কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে। সরকারের থেকে বাণিজ্যিক কাজে যেভাবে নিউ টাউনে জমি নিয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, তাতে বিস্মিত হাইকোর্ট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ গোটা প্রক্রিয়ায় তুমুল সমালোচনা করেছে রাজ্য সরকারের। একইসঙ্গে সরকার অধীনস্থ সংস্থা হিডকোকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে হাইকোর্টের।
বাদ যাননি ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভও। শুধু সমালোচনা করে থেমে থাকেনি হাইকোর্ট। দু’পক্ষকেই জরিমানা করেছে। রাজ্য সরকার এবং হিডকোকে পৃথকভাবে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে। একইসঙ্গে হিসেবে সৌরভ গাঙ্গুলী ও তার সংস্থাকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা বাবদ দিতে হবে। সব পক্ষকেই আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটির তহবিলে টাকা জমা দিতে হবে। রাজ্য সরকার এবং হিডকো কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন এই বেআইনি জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে এক বা একাধিক অফিসার অভিযুক্ত, তাহলে জরিমানার টাকা তাদের থেকেও আদায় করতে পারে রাজ্য এবং হিডকো।
রাজ্যের থেকে জমি নেওয়া নিয়ে আগেই বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন সৌরভ। হাইকোর্টে দায়ের করা মামলায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের বক্তব্য, প্রথমে নিউটাউনের অ্যাকশন এরিয়া তিনে, ছোট একটি জমি স্কুল তৈরীর জন্য সৌরভকে দেওয়া হয়। কিন্তু তার থেকে পরিমাণে বড় জমি চেয়ে রাজ্যের কাছে আবেদন করেন ক্রিকেটার সৌরভ। একই সঙ্গে তার আবেদন, জমির দাম কমাতে হবে। এরপর রাজ্য সরকার নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া দুয়ে সৌরভ কে দুই একরের বেশি জমি দেয়। অথচ আগের যে জমির জন্য ১১ কোটি টাকা দাম ধার্য করেছিল রাজ্য, এখন এই বেশি জমির জন্যই তার কাছে মাত্র ছয় কোটি টাকা দাম নেওয়া হয়। হাইকোর্টের ভাষায়, আগের দামের প্রায় অর্ধেক দামে তাকে জমি কেন দেওয়া হলো তার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
যাবতীয় তথ্য প্রমাণ দিয়ে হাইকোর্টে ২০১৬ সালে মামলা দায়েরের পর গতবছর সৌরভ সরকারকে সেই জমি ফিরিয়ে দেন। যদিও হাইকোর্ট সোমবার রায় দিতে গিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আছে, তা যেমন মানা হয়নি, তেমনই তা ফেরানো হল কোন আইনে, আদালতের কাছে স্পষ্ট নয়, তাও। মামলাকারীর পক্ষে অনিন্দ্য লাহিড়ী অভিযোগ করেছেন, কোন বিধি না মেনে সৌরভকে জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার।
হাইকোর্ট তার রায়ে জমি লেনদেনে অস্বচ্ছতা হয়েছে বলে জানিয়ে দিয়েছে। একইসঙ্গে হাইকোর্টের বক্তব্য, এদেশে ক্রীড়াবিদদের একটা আলাদা কদর রয়েছে। আর যারা খেলার ক্ষেত্রে দেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছেন, তাদের প্রতি সম্মান আরো বেশি জানানো হয়। সেই দিক দিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় দেশের একজন সম্মানীয় ক্রীড়াবিদ। কিন্তু তিনি এই খেলা আগামী প্রজন্মকে যদি আরো বেশি শেখানোর কথা ভাবতেন, সে ক্ষেত্রে তিনি রাজ্য বা দেশে ক্রিকেটের যেসব পরিকাঠামো রয়েছে, তা ব্যবহার করতে, সেই সব জায়গায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। একেবারেই বাণিজ্যিকভাবে তিনি কিছু করতে গিয়ে সরকারের কাছে জমি চেয়েছেন। অথচ তার জন্য সরকার বিধি মেনে কোন দরপত্র ডাকার প্রয়োজন বোধ করেনি। যা সরকারি জমি বিলির ক্ষেত্রে একেবারেই বেআইনি। ফলে মামলা চলার মধ্যে জমি ফিরিয়ে দিলেও, বাংলার মহারাজের জমি বিতর্কে কিছুটা হলেও ভাবমূর্তিতে কালি লাগলো বলে মনে করছেন তার শুভাকাঙ্খীরা।