কলকাতা ব্যুরো: সুপ্রিম কোর্টের পর এবার কলকাতা হাইকোর্টেও জোর ধাক্কা খেলো বিজেপি। ধোপে টিকল না বিজেপির আবেদন। পুলিশ কাজ করেনি, এক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে না। ভোটের আগের দিন বাকি কোনও প্রার্থীদের এই ধরণের অভিযোগ পেলে তাদের নিরাপত্তা নির্দিষ্ট করতে হবে। কলকাতা পুরসভার ভোট কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে করানো হোক, বিজেপির এই আবেদন খারিজ করে এমনটাই জানালো কলকাতা হাইকোর্ট।
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে কলকাতা পুরভোট করানোর আর্জি নিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপির চার প্রার্থী। তবে বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট মামলার শুনানিতে তা খারিজ করল আদালত। চার প্রার্থী ছাড়া ১৪৪টি ওয়ার্ডের আর কোনও প্রার্থী এমন অভিযোগ বা আবেদন করেননি, বলে জানায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। আর মূলত এই কারণেই মামলা খারিজ হয়েছে হাইকোর্টে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, চার আবেদনকারীর বয়ানই প্রায় একরকম। একই মর্মে তারা আবেদন করেছেন।
এছাড়া এদিন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের বাসিন্দাকে বুথে পোলিং এজেন্ট করতে দেওয়ার আবেদন বিবেচনা করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। ব্যক্তিগতভাবে বিজেপির ওই আবেদনকারী প্রার্থীর বিষয়টি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে বিবেচনা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। এবার থেকে সংশ্লিষ্ট বুথের বাসিন্দাকে সেই বুথে পোলিং এজেন্ট করার বিধি চালু করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই বিজ্ঞপ্তি চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেন বিজেপির ১১৬ নাম্বার ওয়ার্ডের প্রার্থী স্বপ্না ব্যানার্জি।
বৃহস্পতিবার আদালতে মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী এস কে কাপুর সওয়াল করেন, মানুষ পথে নামতে ভয় পাচ্ছে। ৬০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে পারেন। পুলিশের উচিত সঠিক ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের ভয় দূর করা। অন্যদিকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী রত্নাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, এটি মাত্র চারজনের অভিযোগ। যারা পুলিশ কমিশনারকে বলেছে। নির্বাচন কমিশনকে অভিযোগ করেনি। সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছে। তার পর ১১ ডিসেম্বর এঁদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। যা যা অভিযোগ পেয়েছে, কমিশন সেইসবের নিষ্পত্তি করেছে। ১৪ ডিসেম্বর সিসিটিভির নির্দেশ এসেছে। হাইকোর্টের নির্দেশে সেগুলিও বসানো হবে।
পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের আরও ব্যাখ্যা, ত্রিপুরার কমিশন কিছু করলেই এরাজ্যকেও তেমন করতে হবে এমন নয়। ১৪৪ জন প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৪ জন অভিযোগ করেছেন। ১৩ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র সচিব সহ পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে কমিশনের বৈঠকে সুষ্ঠু উপায়ে ভোটের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কেন্দ্রের তরফে বলা হয় কলকাতা পুরভোটে দেওয়ার মতো যথেষ্ট বাহিনী তাদের আছে। আদালতের নির্দেশ পেলে পেলে তা দিতে পারে তারা। আর রাজ্যের পক্ষ থেকে জিপি অনির্বাণ রায় বলেন, এটা কোনো জনস্বার্থ মামলা নয়। রাজ্য পুলিশ নির্বাচন করতে পারছে না, এমন নয়। মাত্র চারজনের অভিযোগ এটা। সেই বিষয়টি দেখা হোক।
সমস্ত পক্ষের সওয়ালের পর বিচারপতি রাজশেখর মান্থার সিঙ্গল বেঞ্চ জানায়, তিনটি অভিযোগ অনেকটা একই বক্তব্যে লেখা। আদালত মনে করছে, পুলিশ কাজ করেনি, এক্ষেত্রে এটা মনে হচ্ছে না। ভোটের আগের দিন বাকি কোনও প্রার্থীদের এই ধরণের অভিযোগ পেলে তাদের নিরাপত্তা নির্দিষ্ট করতে হবে। এজির আশ্বাসই যথেষ্ট। যেহেতু কমিশন এক্ষেত্রে মনে করছে না কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন আছে। তাই আপাতত বাহিনীর দাবি খারিজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কমিশন এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা আরেকবার দেখবে ভুয়ো ভোটার আছে কি না।
এদিনের মামালার রায় নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, তাঁরা আলোচনা করে পরের পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি যোগ করেন, যে অবাধ পরিবেশে ভয়মুক্ত ভোট করার দায়িত্ব স্টেট ইলেকশন কমিশনের। তারা করতে পারবে বলে আমাদের ভরসা নেই। না করতে পারলে রাস্তা তো খোলা আছে। আইনি লড়াই হবে। ভোট লুঠ করলে গোটা রাজ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বোমা পড়লে, বিরোধী প্রার্থী আক্রান্ত হলে তার দায় বর্তাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপর।