কলকাতা ব্যুরো: এসএসসি গ্রুপ ডি নিয়োগ মামলায় সিবিআই অনুসন্ধানের (Inquiry) নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সিবিআই অনুসন্ধান করে ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে জানাবে কোর্টে। তারপরে তদন্তের নির্দেশ বিবেচনা করা হবে। এসএসসি বলেছে, তারা প্যানেল বাতিলের পর নিয়োগ সুপারিশ করেনি। আর সোমবার পর্ষদ হলফনামায় বলেছে তারা যাবতীয় সুপারিশ পত্র এসএসসি থেকে পেয়েছে। এটা বিস্ময়ের। তাহলে কোন অদৃশ্য হাত এই সব করলো? আগামী ২৪ ডিসেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ সোমবার এই নির্দেশ দেয়। সোমবার ৫০০ জনের তালিকা জমা নিল আদালত। কবে তাঁরা নিয়োগ হয়েছেন, সেটা জানাতে হবে। সোমবার শুনানি চলাকালীন এজলাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একের পর এক তিরষ্কার করেছেন। একদিকে ছিল কমিশন, অন্যদিকে বোর্ড। কমিশন যে সুপারিশ করেনি বলে বারবার দাবি করেছে, সোমবার হলফনামা দিয়ে বোর্ড জানাল কী ভাবে সেই সুপারিশ হয়েছিল। এদিন পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট জমা পড়েছে আদালতের কাছে। ইতিমধ্যে সফট কপি জমা পড়েছে, পেন ড্রাইভ দেওয়া হয়েছে। তার পরও কমিশন কী করে বলছে সুপারিশ করেনি, সে প্রশ্ন ওঠে এজলাসে।

একই সঙ্গে এদিন বোর্ডের পক্ষ থেকে হলফনামা জমা পড়ে। সেখানে বলা হয়, কমিশনের পক্ষ থেকে যে সুপারিশ এসেছিল তার সফট কপি আছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কাছে। তারা গ্রুপ সি ও ডির নিয়োগ সেখান থেকেই করেছেন। পেন ড্রাইভে তার তথ্য আছে। বিচারপতি জানতে চান, কমিশনের সুপারিশ যদি না-ই থাকে, তা হলে কার অদৃশ্য হাত এখানে রয়েছে? কার সুপারিশে ২৫ জন চাকরি পেলেন। দু’বছর হতে চললো তাঁরা সে চাকরি করছেন।

পাশাপাশি বিচারপতি বলেন, এই ঘটনার জন্য তিনি ‘সিবিআই এনকোয়ারি’ চান। এর কারণ যে রাজ্য পুলিশে অনাস্থা —এমনটা নয়। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তিনি অসম্মান করতে চান এমনও নয়। যেহেতু এ ক্ষেত্রে একটা বড় ষড়যন্ত্র চলছে, মানুষের স্বার্থে তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে কোথাও গিয়ে সিবিআইয়ের অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্য পুলিশের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়। তাই তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কথা বলেছেন।

রাজ্যের পক্ষ থেকে আইনজীবী সম্রাট সেন বিচারপতিকে অনুরোধ করেন অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতিকে দিয়ে এর তদন্ত হোক। কিন্তু সিবিআই নয়। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, রাজ্যের তদন্তকারী সংস্থার উপর আমাদের কোনও অসম্মান নেই। কোনও বিশেষ রাজনৈতিক দলকেও অসম্মান করছি না। কিন্তু অপরাধীরা রাজনৈতিক দলের ছাতার তলায় আশ্রয় পায়। চাকরির ক্ষেত্রে এটা মানা যায় না। শুধু জানতে চাই কী ভাবে এটা হল। যারা জড়িত তারা রাজনৈতিক দলের কোনও পদে আছেন কি না। নিয়োগ প্যানেল থেকে এদের সরিয়ে দেওয়া হবে।

কমিশনের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, তৃতীয় এজেন্সি দিয়ে তদন্ত করানো হোক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত কোথায় হতে পারে সেটা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। রাজ্যের পক্ষ থেকে এজি গোপাল মুখোপাধ্যায় অনুরোধ করেন, সিবিআই হলেও কোনও বিশেষ টিম হাইকোর্ট দ্বারা তৈরি হোক। তারা তদন্ত করুক। তাও খারিজ করে দেওয়া হয়।

এই মামলায় প্রথমবারের জন্য এজি সওয়াল করেন। তিনি বলেন, আরেকটু সময় দেওয়া হোক। আরেকবার তাঁদের হলফনামা দিতে দেওয়া হোক। কিন্তু আদালত সময় নষ্ট করতে নারাজ। আদালতের এই নির্দেশ নিঃসন্দেহে নজিরবিহীন বলছে ওয়াকিবহাল মহল। কারণ, রাজ্য সরকারেরই কমিশন, বোর্ড। অথচ কমিশন এক কথা বলছে, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ অন্য কথা বলছে।

বিচারপতি বলেন, সিবিআই ডিরেক্টরকে এ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার কথা বলব। অন্তত ডিআইজি-এর নিচের কোনও আধিকারিক যেন সেখানে না থাকেন। কমিটি পরিচালনা করবেন জয়েন্ট ডিরেক্টর। কেউ যেন ছাড় না পান। প্রাথমিক রিপোর্ট ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে জমা দিতে হবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version