কলকাতা ব্যুরো: কেন্দ্রীয় বাহিনী না দিলে কমিশনের চেয়ারম্যান কি শান্তিতে ভোট করাতে ব্যাক্তিগত দায়িত্ব নিচ্ছেন? পুরভোটে বাহিনী নিয়োগ মামলায় বুধবার এমনই প্রশ্ন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের। এদিন দীর্ঘ তিন ঘণ্টা ধরে শুনানির পর অবশ্য রায়দান স্থগিত রাখলো আদালত। মামলার রায় ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে।
এদিন শুনানিতে সওয়াল করেন নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র। তিনি বলেন, বিধাননগর পুরভোটের জন্য সিনিয়র আইপিএস অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যাপ্ত বাহিনী দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ খুবই কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। ২০১৬ সালের পরিস্থিতি এখন আর নেই। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পুলিশ রুটমার্চ করছে। আইনশৃঙ্খলার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। প্রতি বুথে সশস্ত্র পুলিশ থাকবে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলার কোনও অবনতি হলে তার দায় কমিশন নেবে। কমিশনের দায়িত্ব, শান্তিপূর্ণ ভোট করানো।
এরপরই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে? তিনি আরও বলেন, কলকাতা পুরসভা ভোটের সময়ও কমিশন একই কথা বলেছিল। কিন্তু ভোটের পর অশান্তি নিয়ে অনেক মামলা দায়ের হয়েছে আদালতে। একটি মামলার দৃষ্টান্ত দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, একটি মামলায় বলা হচ্ছে, প্রার্থীকে মারধর করা হয়েছে।
তারপরই কমিশনের আইনজীবীকে তাঁর প্রশ্ন, আপনি নিশ্চিত করছেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে। কিন্তু ব্যর্থতার দায় কে নেবে? আবেদনে বলা হচ্ছে, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলে ভোটাররা সাহস পাবে। ওই দাবির কি সমালোচনা করছেন?
এরপর সওয়াল করেন মামলাকারীর আইনজীবী আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী। তিনি বলেন, বিধাননগরে বোমাবাজি, ভাঙচুর সব হয়েছে। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন তার জন্য আমি সওয়াল করছি। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ২০১৬ সালে ভোট হয়েছিল। সেই ভোট শান্তিপূর্ণ ভাবে হয়েছে। যদি কেন্দ্রীয় বাহিনী না দেওয়া হয় তবে ভোটাররা ভোট দিতে বেরোবেন না। রাজ্য পুলিশ দিয়ে ভয়মুক্ত পরিবেশ তৈরি সম্ভব নয়। তাই সব দিক বিচার করে কেন্দ্রীয় বাহিনী দেওয়া হোক।
একই দাবি জানান বিজেপির আইনজীবী পিঙ্কি আনন্দও। তিনিও বিধাননগরের অশান্তির প্রসঙ্গ এদিন তুলে ধরেন। এরপর সওয়াল করেন বামেদের আইনজীবী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। সওয়ালে তিনি বলেন, আদালতের নজরদারিতে শান্তিপূর্ণ ভোট হোক। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হলেও আমাদের আপত্তি নেই। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন অনুযায়ী, কোনও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে একটির বেশি বুথ হলে যে কোনও বুথ থেকেই পোলিং এজেন্ট হওয়া যায়। তবে এক সঙ্গে গণনার আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এরপর কমিশনের আইনজীবীকে বলেন, এক দিকে বলছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের অনেক ক্ষেত্রে সীমিত ক্ষমতা রয়েছে। আবার আপনারা শান্তিপূর্ণ ভোট করাতেও সক্ষম। আর সব কিছুর দায়ও নিচ্ছেন? এক সঙ্গে গণনা কেন করতে চাইছেন না? কলকাতা পুরভোটের সময় সিসিটিভি ফুটেজ কাজ করেনি এমন অনেক অভিযোগ উঠেছে। জবাবে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী জয়ন্ত মিত্র বলেন, এক সঙ্গে গণনা করতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। দেশের জনগণ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। জরুরি অবস্থার পর কেউ ধারণা করতে পেয়েছিল ইন্দিরা গান্ধী ফের ক্ষমতায় আসবে? তাই একটির ফলের জন্য অন্যটিতে প্রভাব পড়বে না। অনেকবারই তার প্রমাণ মিলেছে। সিসিটিভির সব অভিযোগ সত্য নয়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো সিস্টেমের কোনও সমস্যা হয়েছে। কম্পিউটারের কিছু সমস্যা ছিল ফলে কাজ করছিল না।
অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, পোলিং এজেন্টদের কাজ ভোটার শনাক্ত করা। তাঁদের আর কোনও কাজ থাকে না। অন্য বুথের পোলিং এজেন্ট এনে লাভ কী? প্রতি পুরসভা আলাদা ফলে আলাদা গণনা হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট করালে শান্তিপূর্ণ হবে বলা হচ্ছে। গত বিধানসভা ভোটের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এরপর কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর বলেন, পর্যাপ্ত বাহিনী রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগলে ২৪ ঘণ্টা আগে জানালে আমরা ব্যবস্থা করব। মামলাকারীর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, একটি বুথে এক জন সশস্ত্র পুলিশ, বাকি লাঠিধারী। এটাই পর্যাপ্ত ব্যবস্থা? কেন্দ্রীয় বাহিনী গুলি চালিয়েছিল বলা হচ্ছে। কেন চালিয়েছিল? সেখানে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নও তো উঠে আসে।