এক নজরে

Gangasagar Mela: কোভিডবিধি মেনেই গঙ্গাসাগরে মেলা করতে চায় রাজ্য

By admin

January 06, 2022

কলকাতা ব্যুরো: নোনা জলে করোনা ছড়ায় না, বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে গঙ্গাসাগর মেলার পক্ষে এভাবেই সওয়াল করলো রাজ্য। করোনার রক্তচক্ষুর মাঝে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হোক। এক জনস্বার্থ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মেলা নিয়ে রাজ্য সরকারের মতামত জানতে চেয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার সেই সংক্রান্ত শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, কোভিড পরিস্থিতির দাপটে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেসব মেনেই গঙ্গাসাগর মেলা হোক, এটাই চায় রাজ্য।

উল্লেখ্য, আদালতে রাজ্যের এই যুক্তিতে (নোনা জলে করোনা ছড়ায় না) অনেকের মনে পড়ছে এক গবেষণা মূলক পেপারের কথা। কিছুদিন আগে নভোসিবির্স্কে ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অফ ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজিতে গবেষণারত রুশ বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন যে, ডিক্লোরিনেটেড বা নোনা জলে করোনাভাইরাস বংশবৃদ্ধি করতে পারে না। কিছুক্ষণ সক্রিয় থাকতে পারে মাত্র। সেই সময় জলের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে ভাইরাসের আয়ু। বিজ্ঞানীরা এও জানান, ক্লোরিনেটেড জলেও দ্রুততার সঙ্গে মারা য়ায় ভাইরাস। আর সেই অস্ত্রকেই ঢাল করে এবার হাইকোর্টে জোর সওয়াল রাজ্যের।

সাগর এলাকায় অধিকাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। ফলে মেলায় যোগদান নিরাপদ বলেই মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল টিকাকরণের হার নিয়ে পরিসংখ্যানও হাইকোর্টে পেশ করেছেন।

আদালতে রাজ্যের তরফে এদিন জানানো হয় করোনা সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় তার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেমন

গত সোমবার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওই চিকিৎসক গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করার আবেদন জানান। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছিল, এই মেলায় বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একত্রিত হয়ে থাকেন। ৩০ লক্ষের বেশি জনসমাগম হয়ে থাকে। ফলে এমন জনসমুদ্রে দূরত্ববিধি-সহ অন্যান্য কোভিড প্রোটোকল মানা সম্ভব নয়। এবারও একই পরিমাণ ভিড় হলে আরও বাড়বে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা। ফলে ভেঙে পড়তে পারে চিকিৎসা পরিষেবা। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে বুধবার বিচারপতি মেলা আয়োজন নিয়ে রাজ্যের অবস্থান জানতে চান। রাজ্যের তরফে আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, মেলা আয়োজনের জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে? কত ভিড় হবে?

বৃহস্পতিবার এ নিয়ে শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটির শুনানি হয়। সেখানে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কয়েকটি বিধিনিষেধের তালিকা পেশ করেন। তাঁর সওয়াল, গত বছরও এত বিধিনিষেধের মাঝে গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ হয়নি, তা ভালোভাবেই চলেছিল। এবারও সেই বিধিনিষেধ জারি থাকছে। জোর দেওয়া হচ্ছে অনলাইনে পুজো দেওয়া, প্রসাদ বিলিতে।

এজি-র বক্তব্যের পর পাল্টা সওয়াল করা হয় মামলাকারীদের তরফে। মামলাকারীর তরফে আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী বলেন, রাজ্য সরকার ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাত্র ৪ জন আয়োজক অভিনেতা আক্রান্ত হওয়ার জন্য। অথচ গঙ্গাসাগর মেলা বন্ধ করতে চাইছে না কেন? ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে কয়েক হাজার লোক আসে মাত্র। সেখানে গঙ্গাসাগর মেলা কেন বন্ধ করা হবে না?  

ডাক্তার ফোরামের তরফে আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বলেন, যেভাবে ডাক্তাররা আক্রান্ত হচ্ছেন আর যে হাসপাতালের ব্যবস্থা করার কথা হচ্ছে বলা হচ্ছে মেলা প্রাঙ্গণে তা কতটা কার্যকরী হবে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যবাসীর জীবন সুনিশ্চিত করার কাজ রাজ্যের সর্বপ্রথম করা উচিত। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই বিষয়ে ডাহা ফেল করেছে।

তবে দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর আজ গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতিরা। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ পরে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে আপলোড করা হবে বলে জানানো হয়।