কলকাতা ব্যুরো: দীপাবলি ও কালীপুজোতে সমস্ত ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করলো কলকাতা হাইকোর্ট। নিষিদ্ধ হলো গ্রিন বাজিও। কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, ছট পুজো ও বড়দিনের উৎসব পালনে যাতে কোনরকম বাজি ফাটানো না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখবে রাজ্য। সমস্ত রকমের বাজি কেনাবেচা যাতে বন্ধ থাকে, তা সুনিশ্চিত করবে পুলিশ। তবে শুধুমাত্র প্রদীপ জ্বালানো যাবে। শুক্রবার এই নির্দেশ দেয় বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায়ের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
কালীপুজো, দীপাবলি থেকে শুরু করে আসন্ন সমস্ত উৎসবে সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করল কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশে আরও জানানো হয়েছে, পুলিশ এ ব্যাপারে বাজি ব্যবহার এবং কেনাবেচা বন্ধ রাখতে সমস্ত রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ৷ বাজি বিক্রেতাদের তরফে আদালতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ রয়েছে সীমিত সময়ের জন্য পরিবেশবান্ধব বাজি ব্যবহার করা যাবে কিন্তু বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন, পুলিশের কি সে রকম কোনও ব্যবস্থা রয়েছে যে কোন বাজি পরিবেশবান্ধব তা খতিয়ে দেখতে পারবে? বিচারপতি বলেন, করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে ৷ তবে গত বছর বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চের বাজি বন্ধের নির্দেশের প্রসঙ্গ এদিন হাইকোর্টের রায়ে উল্লেখ করে।
পাশাপাশি যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা আছে, অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে, একই সঙ্গে এখনও করোনাতে বহু মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, এই সব কিছুর দিকে তাকিয়ে আদালত যে কোনও ধরনের আতশবাজি বন্ধ করার পক্ষেই মত দিচ্ছে ৷ আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী জানান, গ্রিন বাজি কারও ক্ষতি করে না বলে দাবি বাজি প্রস্তুতকারকদের। আর তা শুনেই বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় বলেন, সব মানলেও কি মেকানিজমে তৈরি হয় গ্রীন বাজি সেটা এই মুহুর্তে জানা সম্ভব নয়। পুলিশের এটা জানা নেই। তাই কোনওভাবেই গ্রিন বাজিতেও অনুমতি দেওয়া যায় না। ব্যবসার অধিকারের চাইতে জীবনের অধিকার বড়। বিচারপতি আরও বলেন, গ্রিন বাজি যে শরীরের ক্ষতি করে না সেটার দায়িত্ব কে নেবে?
রাজ্যের তরফের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় শুনানিতে উল্লেখ করেছিলেন, জীবনের অধিকার ও স্বাস্থ্যের অধিকার আগে ঠিকই কিন্তু উৎসবের দিন স্বল্প সময়ের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ও জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে রাজ্য কিছু সময়ের জন্য পরিবেশবান্ধব বাজি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ৷ এ ব্যাপারে গত ২৬ অক্টোবর একটি নির্দেশিকাও প্রকাশ করেছে রাজ্য ৷
কিন্তু মামলাকারী রশ্মি আলির তরফে আইনজীবী ইন্দ্রজিত দে বলেন, করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে, তার পাশাপাশি বহু বয়স্ক মানুষ রয়েছেন যাদের শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা রয়েছে, তাদের কথা এবং সামগ্রিক পরিবেশের দিকে তাকিয়ে সমস্ত ধরনের বাজি বন্ধ রাখাই উচিত। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অনিরুদ্ধ রায় ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশে জানায় সব ধরনের বাজি কালীপুজো, দীপাবলি-সহ আসন্ন সমস্ত উৎসবে বন্ধ রাখতে হবে। পাশাপাশি বাজি কেনাবেচাও যাতে বন্ধ থাকে সেদিকে পুলিশ কড়া নজর রাখবে ৷
তবে শুক্রবার হাইকোর্টের এমন সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের। বছরের এই নির্দিষ্ট সময় ব্যবসায়ীরা লক্ষ্মী লাভের আশায় থাকলেও এবছর আর তা হচ্ছে না।
আর হাতে গোনা কয়েকদিন পর কালীপুজো, বাজি ব্যবসায়ীরা আশায় বুক বেধেছিলেন এবছর হয়তো নিরাশ হতে হবে না তাঁদের। কিন্তু শুক্রবার কার্যত সব আশার জল ঢাললো হাইকোর্ট।