এক নজরে

#PrimaryTETScam: মানিক ভট্টাচার্যকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

By admin

June 20, 2022

কলকাতা ব্যুরো: মানিক ভট্টাচার্যকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট এর পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিলো কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার দুপুরেই মানিক ভট্টাচার্যকে স্বশরীরে হাইকোর্টে তলব করা হয়েছে। তবে নতুন সভাপতি নিযুক্ত না হওয়া পর্যন্ত পর্ষদ সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন সচিব। নতুন নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্বে পর্ষদ সচিব রত্না চক্রবর্তী বাগচী। সোমবার প্রাথমিকে নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু নথি হাইকোর্টে জমা দিয়ে বোর্ডের সিদ্ধান্ত বলে দাবি করা হয়েছে। তবে সেই সব নথি প্রস্তুত করা হয়েছে ২০১৭ সালে। আর সেই কারনেই ২০১৭ সালের নথি কীভাবে কয়েক বছর পরেও এতো ঝকঝকে থাকতে পারে? ওই যাবতীয় কাগজ ও তার সই এত পরিষ্কার হতে পারে না, এমনটাই পর্যবেক্ষণ আদালতের। এরপরই সিবিআইকে হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় আসল নথি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে এই কাগজগুলো ২০১৭ সালের কি না তা অবিলম্বে জানাতে হবে।

গত ১৭ জুন বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়া হয় ছয় দফা নথি জমা দিতে। কিন্তু কোনও আবেদনপত্র কোর্টে জমা পড়েনি। তবে বোর্ডের দাবি তাদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা। ২৭৩ জনের কোনও দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশ হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা কম্পিউটার জেনারেটেড কিছু রোল নাম্বার দেওয়া হয়েছে, সঙ্গে একটা চিঠি। যেটি ২০১৭ সালে আর সি বাগচীর সই করা। তবে হাইকোর্ট বিশ্বাস করে না এটা কোনও প্যানেল। হাইকোর্টের সাফ জবাব দ্বিতীয় প্যানেলের কোনও অস্তিত্ব নেই।

নিয়োগ রুল অনুযায়ী, একটা সিলেকশন কমিটি থাকার কথা নিয়োগের জন্য। কিন্তু এখানে কোনো কমিটির নামগন্ধ নেই, যারা প্যানেল করেছে। প্যানেল প্রস্তুতির কথাও ওই কমিটির। বোর্ডের ক্ষমতা আছে এমনকি দায়িত্ব বিচার দেওয়ার জন্য নিয়োগ করার। তাই তারা এটা করতে পারে। একাধিক প্যানেল প্রকাশের কোনো এক্তিয়ার নেই বোর্ডের।

হাইকোর্ট আরও জানিয়েছে, কোনও এক্সপার্ট কমিটি নেই, যারা নম্বর বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ। ২০১১ সালে তৈরি সিলেবাস কমিটিকেই এক্সপার্ট কমিটি বলে চালানো হচ্ছে। যাদের কোনও ক্ষমতা বা এক্তিয়ার নেই নাম্বার বাড়ানোর। ফলে এই এক্সপার্ট কমিটির ব্যাপারে গল্প তৈরি করেছে বোর্ড। যারা নাম্বার বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে সিস্টার ইমলিয়া, লরেট সহ তিন জন ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর বোর্ডের মিটিংয়ে হাজির ছিলেন। এই তিনজনকে মামলায় যুক্ত করা হলো। তারা বোর্ডের মিটিংয়ে থাকা সত্বেও কেন সই করেননি জানিয়ে হাইকোর্টে হলফনামা জমা দেবেন।

অন্যদিকে অভীক মজুমদার ও ঋত্বিক মল্লিকের নাম পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বরের মিটিংয়ে এই দুজন এক্সপার্ট হিসেবে সই করেছেন। কিন্তু সেই মিটিংয়ে ঋত্বিক মল্লিক একটা সাদা কাগজে ডেট ছাড়া সই করেন, অভিক সই করেন দুটো কাগজে। তবে সেই কাগজ ১৭ সালের কি না তা নিয়ে সন্দেহ। কাগজের বয়স ও সইয়ের বয়স জানতে ইতিমধ্যে ফরেনসিককে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ৩ আগস্ট ২০১১ সালে ২১ জনের কমিটি তৈরি হয়। তার সঙ্গে এই মামলার কোনো যোগ নেই। ফলে এই এক্সপার্ট কমিটি একটা বড় সন্দেহের জায়গা। সভাপতি ও সচিব এই নিয়ে কোর্টকে বিভ্রান্ত করছেন বলেই পর্যবেক্ষণ আদালতের। সভাপতি ছাড়া বোর্ডের অন্য সদস্যরা কেন সই করেননি মিটিংয়ের কাগজে সেটা সন্দেহের। তাই কোর্টের সন্দেহ এমন কোনো মিটিং হয়নি। পাঁচ বছরের কোনো পুরনো কাগজ একেবারে ঝকঝকে ধুলো ছাড়া নতুনের মতো থাকবে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।

সোমবার আদালতে একটা নোট সিট জমা দেওয়া হয়েছে, যেখানে সভাপতির সই স্পষ্ট। তবে অ্যাপ্রুভড শব্দটা সরকারি নথিতে থাকা উচিত। এই কাগজে তার বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই। অন্যদিকে এক নম্বর করে ২৭৩ জনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত কে নিয়েছে তা সন্দেহের। সব নথির আসল জমা দিতে বলা হয়েছিল। তবে এদিন হাইকোর্ট জানিয়ে দেয় এটা কোনও প্যানেল নয় কারণ বোর্ডের কোনো এক্তিয়ার নেই দ্বিতীয় প্যানেল প্রকাশ করার। টেট নম্বর পাওয়ার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই মূল পরীক্ষার। মূল পরীক্ষার পরে কি করে টেট নম্বর নিজেরা দেয় বোর্ড? সেই প্রশ্নও এদিন হাইকোর্টের পক্ষ থেকে উঠে আসে। তবে বোর্ড সভাপতি যেসব নথি দিয়েছেন, তার বেশিরভাগ সন্দেহজনক। তাই সভাপতিকে পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিলো হাইকোর্ট।