কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে রাজভবনের ঘেরাটোপ থেকে বের করতে আগেই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। সমস্ত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদে রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোয় সিলমোহর দেওয়া হয়েছিল নবান্নের বৈঠকে। আর সোমবার সেই প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে দেওয়া হলো।
সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, শিক্ষাদপ্তরের পাশাপাশি কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রাণীসম্পদ দপ্তরের অধীনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিরও আচার্য পদে বসানো হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বিধানসভায় বিল পেশ করে এই সংক্রান্ত আইন সংশোধন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে এদিন আরও একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সেটি হল, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক পদে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী।
সোমবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভা জরুরি বৈঠক করে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, রাজ্যের সমস্ত কৃষি, স্বাস্থ্য ও প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের অধীনস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলির আচার্য পদেও বসবেন মুখ্যমন্ত্রী অর্থাৎ শিক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত জায়গা থেকে রাজ্যপালকে সরানোর ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগোচ্ছে নবান্ন। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বাংলায় হেলথ ইউনিভার্সিটি, কল্যাণী ও উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বেশ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্তমানে রাজ্যপালই রাজ্যের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য। কিন্তু সম্প্রতি সেই পুরনো নিয়ম বদলে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার প্রস্তাব সুপারিশ করেছিল মন্ত্রিসভার একটি কমিটি। তবে সোমবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলেও বিষয়টি আইনে পরিণত হতে এখনও অনেকটা সময় লাগবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের অনুমান। কেন না মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেয়ে প্রথমে এই প্রস্তাব বিধানসভায় পাশ করাতে হবে। বিধানসভায় পাশ হলে সেই বিল সই করানোর জন্য যাবে রাজ্যপালের কাছেই অর্থাৎ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য পদ থেকে তাঁকে সরানোর আইনে অনুমতি নিতে হবে স্বয়ং রাজ্যপালেরই। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, সেখানেই আটকে যাওয়ার ঘোরতর সম্ভাবনা রয়েছে বিলটির।
রাজ্যপাল সই না করে বিলটি আটকে রাখতে পারেন। তখন রাজ্য অর্ডিন্যান্স জারি করে জরুরি ভিত্তিতে বিলটি কার্যকর করতে পারে। তবে তা ছ’মাসের জন্যই কার্যকর থাকে। শিক্ষা যেহেতু যুগ্ম তালিকাভুক্ত, তাই রাজ্যপাল বিলটি দু’বার ফিরিয়ে দিলে তা যেতে পারে রাষ্ট্রপতির কাছে। তবে এ সবই সময়সাপেক্ষ।
সম্প্রতি রাজ্যপাল অভিযোগ করেন, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সম্মতি ছাড়া ‘বেআইনিভাবে’ উপাচার্য নিয়োগ করেছে রাজ্য। এ নিয়েও রাজ্য-রাজ্যপাল দ্বন্দ্ব বাড়তি মাত্রা পায়। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি প্রস্তাব দেন, রাজ্যপালের বদলে মুখ্যমন্ত্রীকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য করা হোক। অতঃপর, একটি কমিটি প্রস্তাব করে রাজ্যপাল নন, আচার্য হিসাবে আনা হোক মুখ্যমন্ত্রীকে। সেই প্রস্তাবই পাশ হল মন্ত্রিসভায়।