কলকাতা ব্যুরো: ফিরে এলো তিন বছর আগের স্মৃতি। জরুরি জিনিসপত্র ব্যাগে ভরে তড়িঘড়ি বাড়ি ছাড়লেন অনেকেই। সারারাত আবার কেউ বসে রইলেন ফুটপাতে। ঘরের জিনিস ঘরে রেখেই প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি খালি করে খোলা আকাশের নিচে যেতে বাধ্যি হলেন। ঠিক যেমন ঘর ছেড়েছিলেন ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট। বউবাজার এলাকায় টানেল বোরিং মেশিনের কাজ চলার সময় হঠাৎই মাটি বসে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল একের পর এক বাড়ি। ঘরছাড়া হয়েছিলেন বহু বাসিন্দা। তারপর অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে বউবাজারে সুড়ঙ্গ খননের কাজ চলেছে এবং সেই কাজ প্রায় শেষের দিকে। আর ঠিক শেষ সময়ই নতুন করে বউবাজারের দুর্গাপিতুরি লেনে একাধিক বাড়িতে ফাটল দেখা দিলো। বুধবার রাতের পর এবার বৃহস্পতিবার সকালেও বউবাজারে নতুন করে একটি সোনার গয়নার দোকানে ফাটল দেখা গেলো। গত ২০১৯ সালেও ওই দোকানটিতে ফাটল দেখা গিয়েছিল।
নতুন করে শুরুটা হয়েছিল বুধবার রাতেই। ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলাকালীন দুর্গাপিতুরি লেনের পরপর প্রায় ১০ থেকে ১২টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়। বুধবার রাতের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ঘরছাড়া ২০টি পরিবারের অন্তত ৮২ জন। কোনও দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তাই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসাবে বুধবার রাতেই মাইকিং করে ওই এলাকাটি ফাঁকা করে দেওয়া হয়। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে নামমাত্র প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে ঘর ছাড়েন ক্ষতিগ্রস্তরা। তাঁদের স্থানীয় একটি হোটেলে থাকাখাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম ও তাপস রায়। গোটা ঘটনাটির জন্য মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তাপস রায়। একে অপরের ঘাড়ে দায় না চাপিয়ে আপাতত মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমাধানসূত্র সন্ধানের আশ্বাস দেন মেয়র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় ১০টি বাড়িতে কোথাও ছাদে, আবার কোথাও মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন মেট্রো রেলের কর্তারাও। বুধবার রাতেই প্রকল্প নির্মাণকারী সংস্থা কেএমআরসিএলের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান। যান ইঞ্জিনিয়াররাও। তবে কী কারণে এই ফাটল, খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। যদিও আগেই সুড়ঙ্গ খননকারী দুই টিবিএম ঊর্বি এবং চণ্ডী দুটোই খণ্ড খণ্ড করে কেটে তোলা হয়েছে। এখন মেট্রো টানেলজুড়ে কংক্রিটের কাজ চলছে। তবে কী কারণে ওই মাটির উপর চাপ পড়ল তা দেখা হচ্ছে।স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে অভিযোগ করেন, রাস্তাতেও ফাটল দেখা দিয়েছে। কোনও সতর্কতামূলক ব্যধবস্থা ছাড়াই মেট্রো রেল কাজ করছে, তার ফলেই এদিন ফাটল। মেট্রোর এই কাজ নিয়ে আগেও একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল, সেগুলি নতুন করে গড়ে দিচ্ছে মেট্রো। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।
বুধবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যািয়। তিনি বলেন, আমরাই উদ্যোগ নিয়ে মহিলাদের হোটেলে পাঠাচ্ছি। মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিছুই করছে না। অন্তত ২৮টি পরিবার ঘরছাড়া বলে দাবি।
যদিও ইতিমধ্যেই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। ফাটলের জন্য এবার সরাসরি তৃণমূলকে দায়ী করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পাল্টা বিজেপি নেতাকে জবাব দিয়েছে ঘাসফুল শিবিরও।
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের দাবি, বউবাজারে বাড়িতে ফাটলের জন্য কোনওভাবেই মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়। মেট্রো রেল যে নকশা তৈরি করেছিল, সেটি বদলে দিয়েছিল তৃণমূল। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে। কিছু ভুল রয়েছে বলেই বারবার বউবাজারে বাড়িগুলিতে ফাটল দেখা দিচ্ছে। কলকাতার মানুষকে পাতাল প্রবেশের আগে ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকতে হবে। চিন্তার বিষয়। মানুষের জীবনের সুরক্ষা দিতে পারছে না তৃণমূল।
এদিকে দিলীপ ঘোষকে পালটা জবাব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেন। তিনি বলেন, মেট্রো রেলের পরিকল্পনা কখনও তৃণমূল বদলে দিতে পারে? দিলীপ ঘোষের বোঝা প্রয়োজন মেট্রো রেল চালায় কেন্দ্রীয় সরকারের রেলদপ্তর। ভারত থেকে বিজেপিকেও তৃণমূল উৎখাত করতে পারে। দিলীপ ঘোষের এবার লজ্জায় পদত্যাগ করা উচিত।