কলকাতা ব্যুরো: গ্রেপ্তারের পর সহকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে ছ ঘন্টা নিজাম প্যালেস ধরনায় বসে কি মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতি বুমেরাং করে দিলেন? হাইকোর্ট ধৃত চারজনের নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন সাময়িক স্থগিত করে দেওয়ার পর এই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ হাইকোর্ট তার আট পাতার রায়ে বারংবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ধৃত প্রভাবশালীদের হয়ে ধরনায় বসে পড়া, সিবিআই অফিসে সমর্থকদের নিয়ে ভিড় করা, এমনকি সিবিআই অফিসারদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে খুব গুরুত্ব দিয়েই দেখেছে। আর সেখানেই হাইকোর্টে শুনানি অনুযায়ী, যেভাবে রাজ্যের আইন মন্ত্রী সহ অন্যান্য প্রভাবশালীরা কয়েক হাজার সমর্থককে নিয়ে আদালতে গিয়ে বসে ছিলেন সেখানে নিম্ন আদালতের পক্ষে কতটা স্বাভাবিকভাবে নির্দেশ দেওয়া সম্ভব সে প্রশ্ন উঠেছে হাইকোর্টে।
এদিন হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এমন একটা এক্সট্রা অডিনারি পরিস্থিতিতে এই মামলার শুনানি করতে হচ্ছে যখন দলের নেতা এমনকি মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসার পরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই অফিসের সামনে সমর্থকদের নিয়ে ধরনায় বসেছেন তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। একই সঙ্গে রাজ্যের আইন মন্ত্রী কয়েক হাজার সমর্থক নিয়ে আদালতে উপস্থিত থাকছেন শুনানির সময়। এই অবস্থায় রাজ্যের শাসকদলের নেতা মন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করলেও সিবিআইয়ের অফিসাররা তাদের প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছে সিবিআই।
রাজ্যের তরফে এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত অবশ্য নিজাম প্যালেস এর সামনে কোনরকম আইন-শৃংখলার জনিত সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেছেন। এমনকি বেশকিছু সিনিয়র পুলিশ অফিসারের নেতৃত্বে কলকাতা পুলিশের বিরাট বাহিনী সেখানে উপস্থিত ছিল বলেও জানিয়েছেন। যদিও তিনি স্বীকার করেছেন বেলা ১১ টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওই অফিসের সামনে ছিলেন। আবার এডভোকেট জেনারেল দাবি করেন, কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিস থাকা নিজাম প্যালেস এর বিরাট একটা অংশ নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এদিন সিবিআইয়ের তরফে তাদের অফিসের দখল নেওয়া, ধরনা দেওয়া এমনকি তাদের কাজকর্ম করতে না দেওয়া নিয়ে অভিযোগ উঠলেও, সেখানে সরাসরি মামলা এখান থেকে সরানোর আবেদন করানো হয়নি বলে রাজ্যের তরফ এ দাবি করা হয়। যদিও হাইকোর্টের বক্তব্য, যেখানে দলের নেতাদের গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘক্ষন রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রীরা ধরনায় বসে থাকেন সেই অফিসের সামনে, সেই যুক্তিতেই হাইকোর্ট তার এক্তিয়ারে এই এই মামলার জায়গা পরিবর্তন করতে পারে। যদিও এদিন পুরো মামলাটি আইনি দিক খতিয়ে দেখে শোনেনি আদালত। আদালত আরো জানিয়েছে, বুধবার মেরিট অনুযায়ী মামলাটির শুনানি করা হবে।
এদিন সন্ধ্যায় নিম্ন আদালতের রায়ের চ্যালেঞ্জ করে আবেদনের আগেই এদিন দুপুরে প্রধান বিচারপতির ই মেইল এবং রেজিস্টার জেনারেলকে ইমেইল করে সিবিআই এর তরফ এ রাজ্যের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর একটি চিঠি পাঠান। সেই চিঠিতে কিভাবে রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেপ্তারের ফলে সিবিআইয়ের অফিস কার্যত ঘেরাও হয়ে রয়েছে এবং তাদের কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে সেই অভিযোগ তোলা হয়।