কলকাতা ব্যুরো: অবশেষে ২১ জুলাই হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় সভা (BJP Meeting) করার অনুমতি পেল ভারতীয় জনতা পার্টি। তবে শর্তসাপেক্ষে গেরুয়া শিবিরকে সভা করার অনুমতি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। যেহেতু ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের কর্মসূচি রয়েছে, সেই কারণে ওই দিন বিজেপির সভার (BJP Meeting) অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে, এই যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ সভার অনুমতি দেয়নি। তারপর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় বিজেপি। তবে আগামিকাল রাত ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সভার (BJP Meeting) অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিজেপি জেলা অফিস সংলগ্ন মনসাতলা মাঠে করতে হবে সভা। সভার অনুমতি নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চলছে দড়ি টানাটানি।
মঙ্গলবার এই নিয়ে একদফা শুনানি হয় আদালতে। তার পর বুধবারও শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালত বিজেপিকে সভার (BJP Meeting) অনুমতি দেয়। তবে শর্ত হিসেবে জানানো হয় যে রাত ৮টায় সভা করতে হবে। সভা ঘিরে যাতে অশান্তির পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেদিকেও বিজেপিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে আদালতের তরফে। যদিও সভার অনুমতি দেওয়ার আগে এদিন শুনানিতে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য প্রশ্ন তোলেন, ওইদিন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের কাছে এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জিং। সেখানে কেন বিজেপির ‘উলুবেড়িয়া চলো’ ওইদিন করতেই হবে?
যদিও বিজেপির তরফে আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার মঙ্গলবারের মতো বুধবারও একই উত্তর দিয়েছেন। এদিন মামলার শুনানিতে বিজেপির তরফের আইনজীবী ফের বলেন, ১৪ তারিখ স্থানীয় জুটমিলের জমির মালিক অনুমতি দেয় সভার। কিন্তু ১৫ তারিখ তারা অস্বীকার করে। তখন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, আদালত কি কোনও ব্যাক্তিকে নির্দেশ দিতে পারে নির্দিষ্ট দিনে সভা করার অনুমতি দিতে, যদি তিনি না দিতে চান !
বিজেপির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার আরও বলেন, স্থানীয় শ্মশানের জায়গায় করতে পারি সভা অথবা বাউড়িয়াতে বিজেপির নিজেদের পার্টি অফিসের কাছে নিজেদের গ্রাউন্ডে করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অতিথি যাঁরা আসবেন, তাঁরা ভুবনেশ্বর থেকে আসছেন। সেখান থেকে সড়ক পথে আসবেন সভাস্থলে। দু’হাজারের মতো সমর্থক হতে পারে। অতিথিদের নিমন্ত্রণ করা হয়ে গিয়েছে। এখন আর বাতিল করা যাবে না।
তবে বিজেপির আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পর বিচারপতি বলেন, যদি একান্তই ২১ তারিখেই করতে হয় সভা, তাহলে রাত ৮টার আগে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। তার পিছনে অন্তত ১০টা যুক্তি আইনি বিষয়ে উল্লেখ করে দেবে আদালত। রাজ্যের তরফে আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অনির্বাণ রায়। তিনি বলেন, আগামিকাল ২১ জুলাই উপলক্ষে প্রায় ১০ লক্ষ লোক হতে চলেছে কলকাতায়। মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় সাত হাজার গাড়ি আসছে। হেঁটে মিছিল আসবে উলুবেড়িয়া হয়ে। গোয়েন্দা রিপোর্ট তাই বলছে। বিকেল ৪-৫ টাতেও যদি সভা করতে চায় বিজেপি, সেই সময় ২১ জুলাইয়ের লোকজন ফিরবে। মাঝরাত পর্যন্ত ফেরার ভিড় চলতে থাকবে গোটা রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তায়।
আদালতে তিনি আরও বলেন, জাতীয় সড়কের পাশেই বিজেপি সভা করতে চাইছে। মৌলিক অধিকার আছে অবশ্যই সভা-মিছিল করার। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য সেটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কেন ২১ জুলাইতেই সভা করতে হবে? ওই দিন শুধু কলকাতাতেই ৩৭০০ পুলিশ, র্যা ফ মোতায়েন থাকবে। একই রকম ভাবে হাওড়াতেও প্রচুর পুলিশ লাগবে।
তখন বিচারপতি বলেন, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রচার যেকোনও দিন করতে পারেন। কিন্তু যেখানে আপনারা জানেন ২১ জুলাই একটা আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ন রয়েছে, তখন কেন ওইদিনই সভা করতে চাইছেন? এরপর রাজদীপ মজুমদার ফের বলেন, আমাদের মাত্র ২ হাজার সমর্থক আসবে। এতে কি আইন শৃঙ্খলার খুব সমস্যা হয়ে যাবে? রাজ্যের এক জায়গায় সভা হচ্ছে মানে আর কোথাও কেউ সভা করতে পারবে না, এটা আইন নয়।
এরপর বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য বলেন, একান্তই যদি সভা করতেই হয়, হাওড়ার মনসাতলা মাঠে করা যেতে পারে রাত ৮ সময়।