এক নজরে

উন্মত্ত জনতার ভয়ে মেলা মাঠ ঘেরার সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না হাইকোর্ট

By admin

September 29, 2020

কলকাতা ব্যুরো: বিশ্বভারতীর পৌষ মেলা মাঠে পাঁচিল ঘেরা নিয়ে রাজ্যের ‘জনতার প্রতিবাদের’ তত্ত্ব ভালোভাবে নিলোনা কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার এই মামলার শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণে যা বলেছেন, তাকে স্পষ্ট, মাঠে পাঁচিল ঘেরা নিয়ে যতই জনতার বিরোধিতার কথা সামনে আনা হোক, তা থেকে পিছিয়ে যাবে না বিচার বিভাগ।

এদিন প্রধান বিচারপতি এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রয়োজনে আমরা গুলির মুখোমুখি হব। কিন্তু কোনভাবেই উন্মত্ত জনতাকে বিচার বিভাগের ওপর খবরদারী করতে দেব না। হাইকোর্টের গড়ে দেওয়া কমিটি থেকে রাজ্য সরকারের এডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত এদিন নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানান আদালতের কাছে। যদিও আদালত জানিয়ে দেয়, শুনানি করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই মামলায় এদিন রাজ্যের তরফে অতিরিক্ত এডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার বলেন, পৌষ মেলা মাঠে ঘেরা হলে তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তি রয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের সামলানো গিয়েছে। কিন্তু এরপরে আইন-শৃংখলার কি পরিস্থিতি হবে তা বলা যাচ্ছে না। তার কথা শুনেই পাল্টা বক্তব্য জানান প্রধান বিচারপতি। তার বক্তব্য, যদি রাজ্যের পুলিশ আইন শৃঙ্খলা সামাল দিতে না পারে তাহলে বিষয়টি হাইকোর্টে দেখবে। কিন্তু কোনভাবেই উন্মুক্ত জনতা হাইকোর্টের ওপরে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।

এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্ট বিশ্বভারতীর হেরিটেজ রক্ষায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছিল। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এবং রাজ্যের এডভোকেট জেনারেলকে নিয়ে চার সদস্যের কমিটি করে হাইকোর্ট। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সেই কমিটি শান্তিনিকেতনে গিয়ে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে। সেখানেই কমিটি মৌখিকভাবে মাঠে পাঁচিল তোলার সম্মতি দিয়ে আসে। একইসঙ্গে জেলাশাসককে মৌখিক ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়, পাঁচিল ঘেরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সবরকম সহযোগিতা করতে। যদিও কমিটির এই সিদ্ধান্তকে একতরফা বলে অভিযোগ করে সেদিনই ওই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান বোলপুরের ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা। আরশ্রমিকদের অনেকেই কমিটির এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি। আবার পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্ত দাবি করেন, পরিবেশ আদালতের যে নির্দেশকে হাতিয়ার করে মেলা মাঠের ঘেরা কাজ হচ্ছিল তা সঠিক নয়। এমনকি হাইকোর্ট কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে তিনি আপত্তি জানান।

এদিন হাইকোর্ট একদিকে যেমন জনরোষের তোয়াক্কা না করে পাঁচিল তোলার ব্যাপারে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে, একই সঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যেভাবে এ বছর থেকে পৌষ মেলা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এদিন প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, শান্তিনিকেতন এবং বিশ্বভারতীর ইতিহাস ও আবেগকে কোনভাবেই অমর্যাদা করা যায় না। আবার পৌষ মেলারও একটা ইতিহাস রয়েছে।

বিশ্বভারতী চাইলেই তা বন্ধ করতে পারে না। পরিবেশ আদালত কোন নির্দেশ দিলেও তা পুনর্বিবেচনার এক্তিয়ার যে হাইকোর্টের রয়েছে এ দিন তাও বুঝিয়ে দেন প্রধান বিচারপতি। এর আগে রাজ্য সরকারের তরফে মেলার মাঠের ঘেরার ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে চিঠি লেখা হয় প্রধান বিচারপতির কাছে। সেই চিঠিতে ওই মাঠে পাঁচিল ঘেরা হলে বোলপুরে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কায় কথা জানানো হয়। এমনকি আপাতত পাঁচিল ঘেরা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল হাইকোর্টের কাছে। কিন্তু এদিন কোন ব্যাপারই নতুন করে কোনো নির্দেশ হাইকোর্ট দেয়নি। বুধবার ফের মামলাটির শুনানি হবে হাইকোর্টে।

প্রসঙ্গত এর আগে পৌষ মেলা মাঠে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পাঁচিল ঘেরা শুরু করার পর ১৮ আগস্ট ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে। বোলপুরের নাগরিক এবং বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা ওই পাঁচিল ভেঙে ফেলার জন্য জড়ো হন। বুলডোজার চালিয়ে মেলা মাঠের নির্মীয়মান পাঁচিল ভেঙে ফেলা হয়। সেই ঘটনায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের বিধায়ক এবং বোলপুরের একাধিক জনপ্রতিনিধিকে। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, রাজ্য সরকার চায় না ওই মাঠে পাঁচিল ঘেরা হোক।