কলকাতা ব্যুরো: পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ। শুক্রবার তৃণমূলে যোগ দিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রাক্তন সভাপতি বিনয় তামাং। ফলে এতদিন যিনি ছিলেন গোর্খাল্যান্ডের পক্ষে তুমি এখন গোর্খাল্যান্ড বিরোধী দলের নেতা।
ক্যামাক স্ট্রিটে একটি হোটেলে তৃণমূলে যোগ দেন বিনয়। একই সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিলেন রোহিত শর্মাও। তিনি কার্শিয়াংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক। জিটিএ নির্বাচনের আগেই বিনয় তামাংয়ের তৃণমূলে যোগদান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
যদিও রাজনৈতিক মহলের ধারণা বিনয় তামাং গোষ্ঠীর দলবদল ছাড়া অস্তিত্ব রক্ষার কোনও উপায় ছিল না। বিমল গুরুং বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে তৃণমূলের শরনাপন্ন হওয়ার পর থেকেই বিনয় তামাংদের অস্তিত্বের সংকট বাড়তে থাকে। যদিও বিনয় তামাং তৃণমূলে যোগ দিলেও পাহাড়ের রাজনীতিতে কোন তার প্রভাব পরবে না বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। কারণে যত অভিযোগই থাকুক পাহাড়ের মানুষের কাছে বিমল গুরুংযের গ্রহণযোগ্যতা এখনও বেশি। তাই বিনয় তৃণমূলে গেলেও বিমলদের সংগঠন মুখ ফেরালে পাহাড়ে বিনয়ের কাধে ভর দিয়ে কোনো লাভ যে হবে না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা আছে নেতাদের। তাই পাহাড়ে বিজেপির ভোট ব্যাংক ভাঙতে হলে তৃণমূলের কাছে বিমল গুরুংই মূল অস্ত্র বলে মনে করেন শাসক দলের নেতারাই।

এদিন তৃণমূলে যোগ দিয়ে বিনয় তামাং বলেন, গত ১৫ জুলাই আমি আমার দল থেকে ইস্তফা দিয়েছিলাম। পদও ছেড়েছিলাম। এরপর আজ ১৬৪ দিন হয়ে গেল। এই সময়ের মধ্যে আমি কিন্তু অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি, যোগাযোগও করিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ছিলই। উনি একজন ডায়ানামিক লিডার। এক সময় স্থানীয় পার্টি করতাম। এখন জাতীয় দল করে মানুষের সেবা করতে চাই। আমরা চাই ২০২৪ সালে জাতীয় রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখতে।
পাশাপাশি এদিন গোর্খাল্যান্ড একটি সাংবিধানিক ইস্যু বলে এদিন তুলে ধরেন বিনয় তামাং। বিনয়ের দাবি, ভারতীয় জনতা পার্টি এই ইস্যুকে ললিপপ করে তিনবার সাংসদ জিতিয়ে নিয়ে গেল। এই ইস্যুকে নিয়ে আমাদের ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করে গিয়েছে। এটা রাজ্যের বিষয় না। আলাদা রাজ্যের বিষয় নয়। আমরা চাই সকলে মিলেমিশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পাহাড়ের উন্নয়ন করতে। শিক্ষা হোক বা স্বাস্থ্য বা পর্যটন। যেখানেই আমরা কাজ করতে পারি, সেখানে কাজ করব। এই জন্য সর্বভারতীয় দল তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।
এদিনের যোগদান অনুষ্ঠানে ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও মলয় ঘটক। বিনয় তামাং, রোহিত শর্মাদের যোগদানের পর ব্রাত্য বসুর প্রতিক্রিয়া, এর প্রভাব উত্তরবঙ্গের মাটিতেও পড়বে। উত্তরবঙ্গের সমতল অঞ্চলেও পড়বে। খুব শিগগিরি জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে বিজেপির মধ্যেও আমরা একটা ব্যাপক ভাঙন লক্ষ্য করব। আমরা জানি, দার্জিলিং, কালিম্পং বা কার্শিয়াং বিস্তীর্ণ পাহাড় এলাকার মানুষ এখন উন্নয়ন চান। তাঁরা বিশ্বাস করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই একমাত্র তাঁদের রক্ষা করতে পারেন।
কিন্তু বিমল গুরুংয়ের সঙ্গে বিনয় তামাংয়ের সম্পর্কের সমীকরণ কী হবে এবার? এ প্রশ্নের জবাবে হাসি মুখে বিনয় তামাং বলেন, বিমল গুরুং আগে কলকাতায় এসেছিলেন। কথাবার্তাও হয়েছে। আমরাও এরপর সাক্ষাৎ করেছি। আমরা মিলেমিশেই কাজ করব। কলকাতা থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে সে কাজই আমরা করব।