কলকাতা ব্যুরো: দলে ভুল বোঝাবুঝির কারনে আবেগতাড়িত হয়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। আড়াই বছর পর অক্টোবর মাসে সব্যসাচী দত্ত পুরনো দলে ফিরে আসেন। আর তাঁর উপর বিশ্বাস রেখেই পুরভোটে প্রার্থী করলো তৃণমূল কংগ্রেস ৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হলো বিধাননগর সহ বাকি ৩ পুরসভার (আসানসোল, চন্দননগর ও শিলিগুড়ি) তৃণমূলের প্রার্থী তালিকা। তাতে নাম রয়েছে প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তের ৷ দল তাঁকে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী করেছে।
২০১৫ সালে পুরনিগম গঠিত হওয়ার পর এই ওয়ার্ড থেকে জিতেই বিধাননগরের প্রথম মেয়র হয়েছিলেন তিনি। আর সেই পুরনো ওয়ার্ড থেকেই তৃণমূলের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংস খেলার সুযোগ পেলেন সব্যসাচী। দলের প্রার্থী তালিকায় নাম ওঠার পর মন্দিরে পুজো দিতে দেখা যায় সব্যসাচীকে। পুজো দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, ১৯৯৫ থেকে বিধাননগরে লড়ে আসছি। এই নিয়ে ছ’বার পৌরনিগম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। পাঁচ বার নিজে ভোটে দাঁড়িয়েছি। আসন সংরক্ষিত হওয়ার পর স্ত্রী দাঁড়িয়েছিলেন এক বার।
সব্যসাচী বলেন, মমতাদি দলে ফিরিয়ে নিয়েছেন আমাকে। আমি অন্য দলে চলে গিয়েছিলাম। উনি ফিরিয়ে এনেছেন, দলে জায়গা করে দিয়েছে। আবার কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, ওঁর সম্মান যেন রাখতে পারি। এখানে ৪১টি ওয়ার্ডে যত জন লড়ছেন, সকলে মমতাদির প্রার্থী। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখে ভোট দেন। আমি হেরেছি বিধানসভা নির্বাচনে। অকপটে তা স্বীকার করছি। কিন্তু ব্যক্তি আমি হারিনি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির বিরুদ্ধে লড়ে জিততে পারিনি।
পাশাপাশি এদিন মমতার ভূয়সী প্রশংসাও করেন সব্যসাচী। তিনি বলেন, দলনেত্রীর আশীর্বাদ এবং অভিষেকের প্রচেষ্টা সফল করতে এগবো। দিদিই বিধাননগরকে পৌরনিগম করার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বিমানবন্দরে নেমে মানুষ কলকাতা দেখার আগে সল্টলেক দেখবেন, তাই বিধাননগরকে সুন্দর উপনগরী হিসেবে সাজিয়ে তুলতে বলেছিলেন আমাকে। কমিশনের অনেক বাধা ছিল সেই সময়। তা সত্ত্বেও মমতার দূরদর্শিতায় তা সম্ভব হয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলেন। সমালোচকরা সমালোচনা করবেনই। কিন্তু মমতাদির দূরদর্শিতা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। উনি মানুষের নাড়ি বোঝেন। মানুষ কী চান, তা ওঁর চেয়ে ভাল কেউ বোঝেন না।
বিধাননগরের পাশাপাশি বাকি তিন পুরনিগমের প্রার্থীতালিকা বৃহস্পতিবার প্রকাশ করে তৃণমূল। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে কালীঘাটে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম ৷ তারপরই দলের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয় সেই তালিকা। এবারের তালিকায় নাম কাটা গিয়েছে অনেক পুরনো কাউন্সিলরের। টিকিট পাননি ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায়, ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নীলাঞ্জনা মান্না, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মল দত্ত প্রমুখেরা ৷ এই স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভা ভোটের মুখে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে গিয়েছিলেন। যদিও দু’দিন পরই তিনি আবার পুরনো দলেই ফিরে আসেন ৷ তাঁর পরিবর্তে ওই ওয়ার্ডে টিকিট দেওয়া হয়েছে নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়কে ৷ টিকিট পেয়েছেন যুব তৃণমূল নেতা দেবরাজ চক্রবর্তীও।
এছাড়া ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কাকলি সাহা এবং ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হয়েছেন আলো দাস দত্ত ৷ ৪১ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় বাদ পড়েছে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের নাম ৷ তাঁর পরিবর্তে প্রার্থী হয়েছেন রত্না ভৌমিক ৷
তবে বিধাননগর পুরভোটে এবার প্রার্থী করা হয়নি বিদায়ী ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়কে ৷ তাপস চট্টোপাধ্যায়ের ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়বেন তাঁর মেয়ে আরাত্রিকা ভট্টাচার্য ৷
এক নজরে প্রার্থী তালিকা
১ নম্বর ওয়ার্ড: পিনাকী নন্দী
২ নম্বর ওয়ার্ড: রহিমা বিবি মণ্ডল
৩ নম্বর ওয়ার্ড: আরাত্রিকা ভট্টাচার্য
৪ নম্বর ওয়ার্ড: শেহনওয়াজ আলি মণ্ডল
৫ নম্বর ওয়ার্ড: নন্দিনী বন্দ্যোপাধ্যায়
৬ নম্বর ওয়ার্ড: সম্রাট বড়ুয়া
৭ নম্বর ওয়ার্ড: দেবরাজ চক্রবর্তী
৮ নম্বর ওয়ার্ড: সুপর্ণা ঘোষ পাল
৯ নম্বর ওয়ার্ড: সমরেশ চক্রবর্তী
১০ নম্বর ওয়ার্ড: প্রণয় রায়
১১ নম্বর ওয়ার্ড: অনিতা বিশ্বাস
১২ নম্বর ওয়ার্ড: সেলিমা বিবি মণ্ডল
১৩ নম্বর ওয়ার্ড: মহম্মদ সিরাজ হক
১৪ নম্বর ওয়ার্ড: শিখা মোহন্ত
১৫ নম্বর ওয়ার্ড: সুজিত মণ্ডল
১৬ নম্বর ওয়ার্ড: জয়শ্রী বাগুই
১৭ নম্বর ওয়ার্ড: আশুতোষ নন্দী
১৮ নম্বর ওয়ার্ড: ইন্দ্রনাথ বাগুই
১৯ নম্বর ওয়ার্ড: পিয়ালি সরকার
২০ নম্বর ওয়ার্ড: প্রসেনজিৎ নাগ
২১ নম্বর ওয়ার্ড: মনোরঞ্জন ঘোষ
২২ নম্বর ওয়ার্ড: অতীন্দ্র সাহা
২৩ নম্বর ওয়ার্ড: ঝুঙ্কু মণ্ডল
২৪ নম্বর ওয়ার্ড: মণীশ মুখোপাধ্যায়
২৫ নম্বর ওয়ার্ড: পূর্ণিমা নস্কর
২৬ নম্বর ওয়ার্ড: সুশোভন মণ্ডল
২৭ নম্বর ওয়ার্ড: বিনু মণ্ডল
২৮ নম্বর ওয়ার্ড: প্রবীর সর্দার
২৯ নম্বর ওয়ার্ড: কৃষ্ণা চক্রবর্তী
৩০ নম্বর ওয়ার্ড: অনিতা মণ্ডল
৩১ নম্বর ওয়ার্ড: সব্যসাচী দত্ত
৩২ নম্বর ওয়ার্ড: কাকলি সাহা
৩৩ নম্বর ওয়ার্ড: বাণীব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়
৩৪ নম্বর ওয়ার্ড: রঞ্জন পোদ্দার
৩৫ নম্বর ওয়ার্ড: জয়দেব নস্কর
৩৬ নম্বর ওয়ার্ড: চামেলি নস্কর মণ্ডল
৩৭ নম্বর ওয়ার্ড: মিনু দাস চক্রবর্তী
৩৮ নম্বর ওয়ার্ড: আলো দাস দত্ত
৩৯ নম্বর ওয়ার্ড: রাজেশ চিরিমার
৪০ নম্বর ওয়ার্ড: তুলসি সিনহা রায়
৪১ নম্বর ওয়ার্ড: রত্না ভৌমিক