কলকাতা ব্যুরো: কেন্দ্রের তিন কৃষি আইনের বিরোধিতায় সোমবার দেশজুড়ে ভারত বনধের ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। কৃষকদের বনধকে সমর্থন জানিয়েছে কংগ্রেস, বামপন্থী দলগুলি। এছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টি, আম আদমি পার্টি সহ মোট ১২টি বিজেপি বিরোধী দল এই বনধকে সমর্থন জানিয়েছে।

দিল্লি-উত্তরপ্রদেশে কিংবা পঞ্জাবের পাশাপাশি এই বনধের আঁচ এসে পড়েছে বাংলাতেও। জেলায় জেলায় চলছে প্রতিবাদ কর্মসূচি, রেল রোকো অভিযান। তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের সংহতি জানিয়ে পথে নেমেছে বামেরা।

রাজধানীর পাশাপাশি এ রাজ্যেও সাড়া পড়েছে ভারত বনধের। সকাল থেকেই জেলায় জেলায় চলছে প্রতিবাদ কর্মসূচী। বনধের সমর্থনে সকাল থেকেই রাস্তায় বাম এবং এসইউসিআই কর্মীরা। যাদবপুর স্টেশনে রেল অবরোধ করে বামপন্থীরা। চলে স্লোগানিং। প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়ুয়ারাও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন কলেজ স্ট্রিট মোড়ে। রাস্তা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে চলে বিক্ষোভ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদেরও দেখা গিয়েছে ৮বি মোড়ে মিছিল করতে।

পাশাপাশি, বিনপুর দু’নম্বর ব্লকের শিলদা বাজারে মিছিল করে SUCI এবং তাদের কৃষক সংগঠন AIKKMS। এদিন বনধ সমর্থকরা শিলদা বাজারে মিছিল করে। সাতসকালে মেদিনীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল SUCI এর। মেদিনীপুর সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডের সামনেই বাস আটকায় ধর্মঘটিরা। মেদিনীপুর শহরের হেড পোস্ট অফিসের গেটে তালা দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বাম এবং SUCI কর্মীরা। জেলার অন্য প্রান্তেও রাস্তায় নেমেছে ধর্মঘটিরা। ঘাটাল চন্দ্রকোনা রাজ্য সড়কের একাধিক প্রান্তে আটকানো হয় বেসরকারি বাস। পাঁশকুড়া বাসস্ট্যান্ডের সামনেই পথ অবরোধ করে বাম সমর্থকেরা।

এদিকে, কল্যানী এক্সপ্রেসওয়েতে আটকে যায় বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকারের গাড়ি। তার সামনেই স্লোগান তোলেন বাম সমর্থকরা। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের নয়া কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকা ভারত বনধ সফল করতে ঝাড়গ্রাম বাজারে মিছিল করেন বাম কর্মীরা। বনধের সমর্থনে জয়নগরের দক্ষিণ বারাসতের মগরাহাট মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন বাম ও SUCI-এর সমর্থকরা। সকাল আটটা থেকে শুরু হয় এই অবরোধ। তার জেরে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় জয়নগর কুলপি রোড।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে জয়নগর থানার পুলিশ বাহিনী। ছত্রভঙ্গ করা হয় ধর্মঘটিদের। হাওড়া ডোমজুড়ে বাম কর্মী সমর্থরা বনধের সমর্থনে মিছিল করে।জোর করে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে ধর্মঘটিদের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছনোয় ধস্তাধস্তি বেধে যায়। এদিন সকালে বারাসত চাঁপাডালি মোড়ে বিশাল মিছিল করে ফরোয়ার্ড ব্লক। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই মিছিল শুরু হয়। চাঁপাডালি আইকোর মোড়ে মিছিল পৌঁছতেই উত্তেজনা শুরু হয়। স্লোগানিং শুরু করেন ধর্মঘটিরা।

পরবর্তীতে ডাকবাংলো মোড় অবরোধ করে বাম সমর্থকেরা। একাধিক বাম সমর্থকদের আটক করে বারাসত থানার পুলিশ। হাওড়ার আমতা বাসস্ট্যান্ড থেকে কলকাতা সহ সব রুটের বাস বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ সপ্তাহের প্রথম দিনেই বিপাকে‌ পড়েছেন। আমতা কলাতলায় বামেদের মিছিল ঘিরে শুরু হয় উত্তেজনা। আটকানো হয়েছে রাস্তায় বের হওয়া বিভিন্ন গাড়িকে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আমতা থানার পুলিশ এসে অবরোধ তুলে দেয়।

ভারত বনধের প্রভাব পড়লো শিলিগুড়ি শহরেও। সকাল থেকে বেসরকারি বাস চলাচল নেই। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ। সকাল থেকে শহরে নানা জায়গায় বনধ সমর্থনে রাস্তায় নেমেছে বাম শরিক দল সহ বিভিন্ন সংগঠন। শহর জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। কিছুটা যেন জনশূন্য তার রূপ নিয়েছে নদিয়ার কৃষ্ণনগর শহরের ব্যস্ততম পোস্ট অফিস মোড়, সদর হাসপাতাল মোড়, রোড স্টেশন সহ বিভিন্ন এলাকা।

পাশাপাশি বনধের প্রভাবে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ডে সাড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল বিভিন্ন রুটের একাধিক বাসকে। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন প্রান্তে হাতে দলীয় পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমে কৃষ্ণনগর রোড স্টেশন সহ বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধ করে পথচলতি মানুষজন ও গাড়ি আটকে বনধ পালন করতে দেখা গেল বাম নেতা কর্মীদের।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version