সুমনা আদক

বাঙালির মেধা এবং প্রতিভাকে যদি একসাথে খুঁজে পেতে হয় তাহলে যেতে হবে বঙ্গসংস্কৃতির অতলগভীরে। বঙ্গসংস্কৃতি চিরকালই নিজের ঐতিহ্যে ঠাসা, সে দেশেই হোক কিংবা বিদেশে, রসে বসে আর যাই হোক না কেন বাঙলা ও বাঙালি সংস্কৃতি দুয়ের যুগলবন্দী ব্যাপারটা বলতে গেলে খুবই মাখো-মাখো, আর পুরোটাই খাঁটি। বারংবার দেশের মাটির গন্ধটা ভেসে আসে প্রবাসে, আর সেই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ব্রিটেন এখানকার বঙ্গসম্মেলনের ইতিকথার বর্ণনা বরাবরই আকর্ষণীয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

পাশ্চাত্য নিয়ে হুড়োহুড়ি, মিক্সড কালচার, অন্যকে অনুকরণ, কাঁকড়া, কাঠি ইত্যাদি ইত্যাদি যাবতীয় তকমা নিয়েও বাংলার জল হাওয়ার সাথে খাঁটি বাঙালিয়ানাকে সঙ্গী করে এবারের বঙ্গ সম্মেলন যখন আছড়ে পড়বে কেম্ব্রিজের ক্যাম্বারনি ভিলেজ কলেজ সেন্টারে, তখন বোধহয় একটা কথাই মনে পড়বে বারবার “আমরা হলাম সেই বাঙালি” যাকে বলে “ম্যাডলি বাঙালি”। বিলেতের ৫৫ টি বাঙালি সংগঠন মিলে ২০২১ এর এবারের ব্রিটেনের বঙ্গসম্মেলনের প্রারম্ভটা সেই দিকেরই ইঙ্গিত দিচ্ছে।

শুরুটা হয়েছিল ২০১৮ এর গোড়ার দিকে। ইংল্যান্ডের কয়েকজন প্রবাসী বাঙালি ডক্টর অনির্বান মন্ডল, ডক্টর শ্রবণা ভট্টাচার্য, ডক্টর অর্পিতা মন্ডল, উষা দত্ত এনাদের মতো অনেকেরই প্রচেষ্টা ছিল ইউকের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাকে এক ছাদের নিচে বন্দি করা। কিন্তু কথায় আছে না, বাঙালি একাকি পারদর্শী হলেও একত্রে নয়। তবুও ওনাদের প্রচেষ্টা অনেকটাই সার্থক হয়েছিল সেদিন। ইউকেবিসির সদস্য এন এইচ এস এর বার্নস প্লাস্টিক রিকন্সট্রাক্টটিভ সার্জেন ডক্টর অনির্বান মন্ডলের কথায়, শুধু ব্রিটেনেই নয়, ধীরে ধীরে ইউরোপে অন্য প্রান্তের বাঙালিরাও একসময় সামিল হবেন এই মঞ্চে। উদ্দেশ্য হবে একটাই “একসাথে পথচলা”। যার শুরুটাতো হয়েই গিয়েছে। আর সেটাই হবে আগামী প্রজন্মের দিশারী।

ব্রিটেনের বঙ্গসম্মেলন তথা বাংলা অলিম্পিক গতবারে মহামারীর ক্ষনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ভার্চুয়ালি। এদেশে মহামারির প্রকোপ খানিকটা কেটে গেলেও, তার প্রটোকল মেনেই ইউনাইটেড কিংডম বেঙ্গলী কনভেনশন অর্থাৎ ইউকেবিসির উদ্যোগে আগামী ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গসম্মেলন হতে চলেছে বেশ জমজমাট। ৫৫ টি বাঙালি চ্যারিটেবল সংগঠন নিয়ে বঙ্গ সম্মেলনের ওই দিনগুলিতে আসরে উপস্থিত থাকবেন এখানকার পুজো কমিটির উদ্যোক্তা সহ বিভিন্ন পেশায় যুক্ত তথাকথিত নামি দামি ব্যক্তিত্ব, রাজনীতিবিদ। এমনকি কলকাতার একাধিক জনপ্রিয় শিল্পী ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন প্রোগ্রামে। শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা, ক্যাকটাস, জয় সরকার, মমতা শঙ্কর সহ সেলিব্রিটির তালিকা বেশ বড়।
আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের প্রবাসীরা হাজির হবেন ক্রেম্ব্রিজের বঙ্গ সম্মেলনে। অনুষ্ঠান মঞ্চের সমগ্র সাজসজ্জা পরিপূর্ণতা পাবে বঙ্গসাজে। নাচ, গান, কুইজ, তর্ক, শ্রুতিনাটক, চলচ্চিত্র, বইমেলা ইত্যাদি নিয়ে দুদিন ব্যাপি কমিউনিটি হল সেন্টার থাকবে জমজমাট।
আহা! বাঙালি থাকবে, আড্ডা হবে, গল্প হবে, আর ভুঁড়িভোজ হবেনা তা কি হয় নাকি? এবারের ব্রিটেনের বঙ্গ সম্মেলনের আকর্ষন হলো কলকাতার বাংলা খাবারের একাধিক ফুডস্টল, এছাড়া শিক্ষা, সাহিত্য, খেলা, ব্যবসা একাধিক বিশেষ ক্ষেত্রের বাঙালিদের সম্মান প্রদানই হবে অনুষ্ঠানের মূলপর্ব। আর সঙ্গে থাকবে পুজোর কেনাকাটা। যাকে বলে রথ দেখা, কলা বেচা থেকে সঙ্গে আরও কিছু।

ব্রিটেনের বঙ্গ সম্মেলন বয়সে নবীন হলেও ইতিমধ্যেই নজর কেড়েছে গোটা বিশ্বের। শুধু ব্রিটেনেই নয়, ইউকে বিসির সদস্যদের কথায় লন্ডনের বঙ্গ সম্মেলন তথা বাংলা অলিম্পিক ইতিমধ্যেই ইউরোপের বাঙালিদের একসুতোয় বাধঁতে পেরেছে। এর চাইতে ভালো আর কি বা হতে পারে! ফেলে আসা সম্পদকে আঁকড়ে নিয়ে বেঁচে থাকার আনন্দটাই আজ তাদের কাছে বড্ড প্রিয়। প্রবাসে বাংলা আর বাঙালির মেলবন্ধনের অভিনব এমন আয়োজনে আমরা তাই বিদেশেও বাংলা নিয়ে মাততে পারি, হোক না মাত্র কয়েকটা দিন। তাই-ই বা কম কিসে!

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version