কলকাতা ব্যুরো: গতবছর লোকসভা নির্বাচনের আগেই বর্ষিয়ান আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে ডেপুটেশনে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। আর এক বছর পরে এবার রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে একইভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে পাঠানোর জন্য চিঠি দিয়েছে কেন্দ্র। এটাই এবার তফাত, গতবারের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ থাকায় তার অন্যথা করা যায়নি। কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় সরকার সেই নির্দেশ দেওয়ার পর পত্রপাঠ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ বাতিল করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।ফলে আপাতত এডিজি পদমর্যাদার রাজিব মিশ্রা, ডিআইজি পদমর্যাদার প্রবীণ ত্রিপাঠি এবং পুলিশ সুপার পদমর্যাদা ভোলানাথ পান্ডেকে এই যাত্রায় আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে কাজে যোগ দিতে হচ্ছে না। কিন্তু কেন্দ্রের এই নির্দেশে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন এ রাজ্যের বর্ষিয়ান আইপিএস অফিসারারা।রাজীব কুমারের পর এবার তিনজন আইপিএসকেও কেন্দ্রে কাজে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে কোন কারণ উল্লেখ করা হয়নি। যদিও ঘটনাচক্রে দুটি ক্ষেত্রেই ওই আইপিএসদের রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা নিরপেক্ষতার অভাবের অভিযোগ নিয়ে কানাঘুষা রয়েছেই।গত লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন রাজীব কুমারের বাংলোয় সিবিআই হানা এবং সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌঁছে যাওয়া থেকে শুরু করে পরের ঘটনা পর্বে রাজিব-তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে সোচ্চার হয়েছিল বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনের আগে ওই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ গিয়েছিল। তারপরেই রাজীব কুমারকে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাজে যোগ দিতে হয়েছিল। ফলে নির্বাচন মেটার পরেই আবার রাজ্যের শাসক দল ঘনিষ্ঠ ওই অফিসার ফিরে এসেছিলেন রাজ্যে।
এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠি উপেক্ষা করেই তিন আইপিএস কে এখন ছাড়া যাবে না বলে রাজ্য জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রকে। কিন্তু আগামীতে ওই অফিসারদের কর্মক্ষেত্রে কি অবস্থা হতে পারে তা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে আইপিএস মহলে। যদিও সকলেই মানছেন, যে রাজ্যের অধীনে ওই অফিসাররা কর্মরত রয়েছেন, সেই সরকার না ছাড়লে কেন্দ্রের কিছুই করার নেই। কিন্তু আগামী দিনে যদি এমন ক্ষেত্রে রাজ্য তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়, সে ক্ষেত্রে রাজিব কুমারের মতো তাদের দ্রুত রাজ্যে ফেরার কোনো যে সুযোগ থাকবে না তাও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন বর্ষিয়ান আইপিএসরা। তাদের যুক্তি, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে রাজীব কুমারকে যেতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় ডেপুটেশনে। ফলে নির্বাচন মিটতেই তিনি ফিরতে পেরেছিলেন পুরনো জায়গায়। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় সরকার কাউকে তলব করে নিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে তার ক্ষেত্রে আসাটা সমস্যা।এবার যে তিনটি পদমর্যাদার আইপিএসকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তলব পাঠিয়েছে, ঘটনাচক্রে তাদের তিনজনই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার ডায়মন্ড হারবার সফরের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। রাজিব মিশ্রা দক্ষিণবঙ্গের এ ডি জি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। প্রবীণ ত্রিপাঠি ডিআইজি প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ ও ভোলানাথ পান্ডে ডায়মন্ডহারবারের পুলিশ সুপার। ফলে জেপি নাড্ডার কনভয় হামলার ঘটনায় কেন্দ্র যে এই তিন অফিসারকে চিহ্নিত করেছে, তা স্পষ্ট। যদিও কোথাও সে কথা উল্লেখ করা হয়নি।যদিও এ যাত্রায় রাজ্যের আপত্তিতে তাদের ডেপুটেশন আটকে গেল। কিন্তু গোটা ঘটনাক্রমে বর্ষিয়ান আমলারা সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। কারণ নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে ততোই দুটি বিপরীত মেরুতে থাকা দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিদ্বন্দিতায় এভাবেই আমলাদের চাপে রাখার কৌশল কিনা সে প্রশ্নই তাদের ভাবাচ্ছে।