কলকাতা ব্যুরো: নাগাড়ে বৃষ্টিতে নাজেহাল বাংলাকে আরো বড় দুর্যোগের বার্তা দিল আবহাওয়া দপ্তর। চলতি বৃষ্টি মঙ্গলবারে থেমে গেলেও, দিন চারেক পর থেকে ফের বিপর্যয়ের পরিস্থিতি তৈরীর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যার পিছনে রয়েছে জোড়া নিম্নচাপের পূর্বাভাস। যার জেরে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে অন্তত দশ দিন দফায় দফায় বৃষ্টি ও বজ্রবিদ্যুৎ সহ মেঘের সঞ্চারের প্রাথমিক পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই দুই নিম্নচাপে চীন সাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে বঙ্গোপসাগরে উপকূলে ঢুকতে পারে। সে ক্ষেত্রে পুজোর মুখে বাংলা ও উড়িষ্যায় নিম্নচাপের ভ্রুকুটি চেপে বসতে চলেছে।
রবিবার রাত থেকে চলা একটানা বৃষ্টিতে বানভাসি কলকাতা সহ অন্তত ১৩ জেলা। সোমবার বিকেলের পরে বৃষ্টি কিছুটা ধরলেও রাতের দিকে ফের ঝেঁপে বৃষ্টি নামে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বৃষ্টি ডোবাবে দক্ষিণবঙ্গের অন্তত সাতটি জেলাকে। তারমধ্যে দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা রয়েছে। এই অবস্থায় জেলাগুলির জেলাশাসকের জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। এখনো পর্যন্ত অন্তত ৮০ হাজার দুর্গতকে জলমগ্ন এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৩ লক্ষ মানুষ বানভাসি হয়েছে বলে নবান্নের খবর।
এদিন বৃষ্টিতে প্রবল ভুগতে হয়েছে মহানগরকে। এদিন বিকেলের পর থেকেই কলকাতার প্রতিটি বরোয় দুর্গতদের জন্য ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এক বা একাধিক স্কুল খুলে দুর্গতদের সেখানে সরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, বেগোর খাল এবং মণি খালে আগের তুলনায় জল বেশি টানছে। যদিও বেহালা সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জল সমস্যা এখনো রয়ে গিয়েছে। এদিন দুপুরে বেশ কয়েক ঘন্টা লক গেট বন্ধ থাকায় শহরের জল গঙ্গায় নামতে না পারায় দুর্ভোগ বেড়েছে। যদিও পুরসভার মেয়র পরিষদ তারক সিং আশ্বাস দিয়েছেন, সারারাত লক গেট খোলা থাকায় মুষলধারায় বৃষ্টি না হলে সকালে জমে থাকা সব জলে নেমে যাবে।
বর্তমানে চলা বিপর্যয় কাটলেও সামনে জোড়া নিম্নচাপ এলে তা কিভাবে সামলানো হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে নবান্নে। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাকে ওই দুই জোড়া নিম্নচাপ পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতি হলে তা সামাল দেওয়ার জন্য এখন থেকেই পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর এর বক্তব্য, রবি-রাত থেকে ঘূর্ণাবর্ত এর প্রভাবে চলা দুর্যোগ মঙ্গলবারের মধ্য ভারতের দিকে সরে যাবে। কিন্তু ২৫ সেপ্টেম্বর নাগাদ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নতুন একটি ঘূর্ণাবর্তের উদয় হবে। ক্রমে ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে সেটি সরবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে। এর ঠিক পিছনেই আরও একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হচ্ছে, এই দুই ঘূর্ণাবর্তই চিন সাগর থেকে আমদানি হয়ে বিভিন্ন পথ ঘুরে বঙ্গোপসাগরে পরবে।দুর্যোগ কতটা ভোগাবে আবার, সেই প্রশ্নে মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, দক্ষিণ চিন সাগরের টাইফুনের প্রভাবে মাঝেমধ্যে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তেমন সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা নজর রাখছি। সময়মতো এর অগ্রগতি সম্পর্কে জানানো হবে।মন্ডপে হাইকোর্ট নো এন্ট্রি করবে কি না তাই নিয়ে দোলাচলে থাকা বাংলায় এবার দুর্গা পুজোয় করোনা নয়, অসুর হতে পারে নিম্নচাপই।