গৌর শর্মা
আসানসোল থেকে মাত্র আঠারো কিলোমিটার দুরে জৈনধর্মের চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈনের স্মৃতি ধন্য গ্রাম বারাবনির পুঁচড়া। গ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জৈন ধর্মের নানান প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন ।
জৈন আচারঙ্গ সূত্রে জানা যায়, প্রাচীন কালে এই রাঢ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে বিস্তার লাভ করে ছিলো জৈন ধর্ম। ফলে এই রাঢ অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জৈন আমলের নানান পুরাকীর্তি। অজয় নদের (ঋজুপালিকা) তীরে জমভৃক গ্রামে ( বারাবনির জাম গ্রাম ) শ্যামাগ নামে এক কৃষিজীবির কৃষি ক্ষেত্রে দিব্যজ্ঞান লাভ করেন চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈন। এই সময় মহাবীর জৈন রাঢের এই অঞ্চলে পদব্রজে পরিভ্রমন কালে কিছুকাল পুঁচড়া গ্রামে অধিষ্ঠান করেন। তার পদার্পনের স্মৃতির স্মারক হিসাবে বারাবনির পুঁচড়া গ্রামের পাঁচটি স্থানে পাঁচটি চূঁড়া তৈরি করা হয়। সেই সময় থেকেই গ্রামটি পরিচিতি লাভ করে পঞ্চচূঁড়া নামে। পরে অপভ্রংশ হয়ে দাঁড়ায় পূচঁড়া। আজও গ্রামের মধ্য স্থলে একটি চূঁড়া জৈনধর্মের চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈনের স্মৃতির স্মারক হিসাবে সাক্ষ্য বহন করে চলেছে ।
দোমহানি-কেলেজোড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র হয়ে পুঁচড়া গ্রামে ঢুকতেই হাইস্কুল চত্বরে রয়েছে জৈন মন্দির । তাতে রয়েছে চব্বিশতম তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈনের সুদৃশ্য একটি মূর্তি। আর রয়েছে গ্রামের প্রাক্তন শিক্ষা কর্মী অরুন মাজির গ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে আনা একাধিক জৈন তীর্থঙ্করের প্রস্তর মূর্তি। গ্রামের কৃষি ক্ষেত্রের ধংস প্রাপ্ত রাজপাড়ায় আজও অর্ধ প্রোথিত অবস্থায় পড়ে আছে মাহাবীর জৈন ও আদিনাথের মূর্তি। তার বিপরীতে রয়েছে স্থানীয় পাথরের তৈরী ধংস প্রাপ্ত ছোট এক প্রকোষ্ঠ। কালের গতিতে এই গ্রামে বহু জৈন মূর্তি পুজিত হন হিন্দু দেবতা হিসাবে। গ্রামের শিবস্থানে শিবলিঙ্গের সাথে রয়েছে কুবেরের মূর্তি। তার পাশে থাকা বিষ্ণু মূর্তিটি আদপে জৈন তীর্থঙ্কর পরশনাথের রূপ বলে ধারনা। ঠিক তেমনই গ্রামের ষষ্ঠীতলার দূর্গামূর্তিটি জৈন দেবী চক্রেশ্বরীর বিকৃত রূপ বলেই স্থানীয় জৈনদের অনেকেরই বিশ্বাস ।
১৯৬০ এর দশকে কেলেজোড়ার জমিদার দিবাকর রায় এই অঞ্চল থেকে পাথরের একটি ঋষভের মূর্তি উদ্ধার করেন। যা কলকাতার যাদুঘরের সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত। পুঁচড়া গ্রামের উপ প্রধান পার্থসারথী মূখাজ্জী জানান, কয়েক দশক আগে কেলেজোড়ার কাটানিডাঙ্গায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে পাওয়া যায় বহু পুরাকীর্তির নিদর্শন, যা ঐ অঞ্চলে জৈনকীর্তি ও বর্গীহানার প্রমানের স্বাক্ষ্য বহন করে। দোমহানি দিগম্বর জৈন মন্দিরের সম্পাদক অশোক জৈন জানান,- পূচঁড়া সংলগ্ন অঞ্চলের সংগৃহীত জৈন নিদর্শনগুলি দিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরী করে পুচঁড়া গ্রামকে পর্যটন মানচিত্রে আনা যেতে পারে। তাহলে কবিতীর্থ চুরুলিয়া, পূচঁড়া ও উষ্ণ প্রস্রবন পানিফলা নিয়ে হতে পরে সুন্দর একটি টুরিষ্ট জোন ।