দুর্নীতি ঢাকতেই চাকরিহারাদের লালিপপ দেওয়ার চেষ্টা

By admin

April 07, 2025

দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের আস্ত প্যানেল৷ এর জেরে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী চাকরি খুইয়েছেন। কিন্তু আদালতের ওই রায়ে স্পষ্ট করে বলা হয়নি, কে যোগ্য আর কে অযোগ্য। এই দ্বিধা ও বিভ্রান্তির আবহেই সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের মুখোমুখি হন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সেখান থেকেই চাকরিহারাদের একাধিক আশ্বাসবাণী শোনান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেই আশ্বাসবাণীতে চাকরিহারাদের মন থেকে কোনো বিভ্রান্তি দূর হওয়া তো দূরের কথা বরং তাঁদের মনে যেমন হাজারো প্রশ্ন ভিড় করেছে তেমনি জমেছে রাশি রাশি অসন্তোষ৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন চাকরিহারাদের এই বলে আশ্বাস দিয়েছেন যে যোগ্যদের চাকরি যাবে না। কিন্তু তার এই আস্থা বানীতে কতজন আশ্বস্ত হয়েছেন? মাত্র কয়েকজন তাঁর কথায় সামান্য আস্থা রাখতে পারলেও বেশিরভাগই তাঁর এই কথার মধ্যে ঘোর অনিশ্চয়তাই দেখছেন৷ কেবল তাই নয় তাঁদের অভিব্যক্তিতে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ পায়। যে ক্ষোভ থেকে তারা প্রশ্ন তোলেন, কেন মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁদের কথা না-শুনে একতরফা নিজেই বলে গেলেন। অনেকে তো কটাক্ষের সুরেই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী এদিন আশ্বাস দিয়ে কাজ সারতে তাঁদের ললিপপ ধরিয়ে চলে গেলেন৷

হটাৎ লালিপপের প্রসংগ কেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারাদের আশ্বাস দেন, যোগ্যদের কারও চাকরি যাবে না৷ তিনি বলেন, সরকার সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন করে যোগ্য ও অযোগ্যদের স্পষ্ট তালিকা দেওয়ার জন্য আবেদন জানাবে৷ যদি তাতেও সমস্যা না-মেটে তাহলে যোগ্যদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে- এই বলে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন৷ পাশাপাশি তিনি চাকরিহারাদের আপাতত স্বেচ্ছায় পরিষেবা চালিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দেন৷ কিন্তু তাঁর এই আশ্বাসে কি কেউ আশার আলো দেখছেন? স্বভাবতই চাকরিহারারা আজ যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছেন তাতে খড়কুটো আঁকড়ে বেঁচে থাকার মতোই তাঁরা এ ধরনের আস্থার কথায় চাকরি ফিরে পাওয়ার আশায় বুক বাঁধতে বাধ্য হন। বস্তুতপক্ষে অধিকাংশ চাকরিহারাই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেন নি৷ এদিন সভা শেষ হওয়ার আগে থেকেই একাংশ প্রবল ক্ষোভে ফেটে পড়েন। অনেকে তো সরাসরি প্রশ্ন তোলেন, মুখ্যমন্ত্রী তো তাঁদের কথাই শুনলেন না, নিজের কথাই শুধু বলে গেলেন। কেন না শুনেই তিনি কথা বলে গেলেন? বরং মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করুন, তিনি কার পাশে? এদিন ইন্ডোরের সভা শেষে এই প্রশ্নটাই খুব বড় করে তুলেছেন চাকরিহারারা৷

চাকরিহারারা এদিন একথাও বলেন, মুখ্যমন্ত্রী কেন বারবার বিরোধীদের দিকে আঙুল তুলছেন, কেন তিনি বিজেপি, সিপিএম প্রসঙ্গ টেনে আনছেন? নিয়োগ তো করেছিল তাঁর সরকার, তাঁর শিক্ষামন্ত্রী, এসএসসি এবং এই সবগুলিরই মাথায় ছিলেন তিনি৷ অতএব ২৬ হাজার চাকরিহারা হওয়ার জন্য বিরোধিরা নয়, যা কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি-অন্যায়-অপরাধ এবং দুর্নীতি সব কলঙ্কের বোঝা রয়েছে তাঁর মাথায়৷ তাঁর উচিত ছিল, নতমস্তকে সবদলকে ডেকে সর্বদলীয় বৈঠক করা৷ সমাধানের উপায় খোঁজা৷ তা না করে তিনি অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছেন, দায় এড়াতে চাইছেন, চাকরিহারাদের কোনো কথা না শুনেই একা কথা বলে চলে গেলেন। তাছাড়া এদিন মুখ্যমন্ত্রী চাকরিহারা শিক্ষিকাদের ভলান্টারি সার্ভিস দিতে বলছেন৷ এর মানে দাঁড়ায় এতদিন ধরে যারা পড়াশোনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী কি তাঁদের সিভিক টিচার করতে চাইছেন? তিনি আশ্বাস দিয়েছেন দুমাসের মধ্যে যোগ্যদের জন্য ব্যবস্থা করবেন। প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রী যে স্বেচ্ছায় কাজ করার পারমর্শ দিলেন, কাজ করলেও তারা কি বেতন পাবেন? আসলে মুখ্যমন্ত্রীকে দুর্নীতি ঢাকতে হবে, তিনি যোগ্যদের চাকরি সসম্মানে ফেরত দিতে পারবেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে কেউ কেউ আশ্বস্ত হলেও বেশিরভাগই বিভ্রান্ত।

প্রসঙ্গত, এই মামলায় আদালত এসএসসিকে যোগ্য এবং অযোগ্যদের তালিকা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু সেই তালিকা জমা দেওয়া হয়নি। উল্টে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ওএমআর শিট। শিক্ষা আন্দোলনের সব ক্ষেত্র থেকেই যোগ্য এবং অযোগ্য কারা, তা বাছাই করে আদালতে রিপোর্ট জমা দেওয়ার দাবি তুলেছিল। যাতে যোগ্যদের চাকরি না যায়। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই সময় সম্পূর্ণ নীরব থেকেছে। সেই তালিকা যদি আদালতের কাছে জমা পড়ত তবে আর যোগ্য চাকরি প্রার্থীদের চাকরি যেত না। মুখ্যমন্ত্রী বলছেন অযোগ্য প্রমাণ হলে তার কিছু করার থাকবে না কিন্তু সবাই জানেন যে তাঁর দলেরই নেতা মন্ত্রীরা টাকা নিয়ে চাকরি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় কোনোদিনই একবারের জন্য সেইসব ঘুষখোর, তোলাবাজ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতা-মন্ত্রীদের কিচ্ছু বলেননি এমনকি এদিনও যারা দোষী-অপরাধী তাদের কোনোভাবে তিরোষ্কার করলেন না। উলটে তাঁর হাবভাব যেন কিছুই হয়নি। তার এই আচরণ প্রমাণ করে দেয় তিনি দুর্নীতির পক্ষে এবং তাকে সমর্থন করেন। তাই দুর্নীতি ঢাকতেই তিনি চাকরিহারাদের লালিপপ খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন।