CREATOR: gd-jpeg v1.0 (using IJG JPEG v62), quality = 82

এক নজরে

জীবজন্তুরাও ছদ্মবেশ নেয়  

By admin

June 09, 2024

সাধারণত মানুষেকেই ছদ্মবেশ নিতে দেখা যায়! যুদ্ধে শত্রুকে ফাঁকি দিতে সেনাবাহিনীও যে ছদ্মবেশ নেয়, সেকথা কারও অজানা নয়। কিন্তু মানুষ ছাড়াও অনেক জীবজন্তুও ছদ্মবেশ নেয়। খাদ্য এবং নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জীবজন্তুদেরও মধ্যেও কিন্তু চলে শত্রু-শত্রু খেলা। বাঁচার তাগিদেই বড়রা ছোট বা দুর্বলদের শিকার করে। যেমন ছোট্ট প্রজাপতিকে খেয়ে ফেলে তার শত্রু ব্যাঙ। আর ব্যাঙকে সাপ, সাপকে খায় বাজ পাখি। এইভাবে এক প্রজাতি আরেক প্রজাতির শিকারে পরিণত হয়। ভারসাম্য আসে খাদ্যশৃঙ্খলায়। টিকে থাকে জীবজগৎ। এ ক্ষেত্রে দুর্বল প্রাণী পরাজিত হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবক্ষেত্রে কথাটা সত্যি নয়। দুর্বল প্রাণীরা গায়ের জোরে শক্তিশালী শিকারি প্রাণীর সঙ্গে পারে না বটে। কিন্তু তারা অন্যভাবে, বলা যায় ‘বুদ্ধির জোরে’, শক্তিশালী প্রাণীকে ফাঁকি দিতে চেষ্টা করে। এমন এক পদ্ধতিই হলো ক্যামোফ্লেজ বা ছদ্মবেশ।

ছদ্মবেশ একেক রকম। কেউ গায়ের রং পরিবর্তন করে, কেউ অন্য প্রাণী বা গাছের মতো করে নিজেকে সাজিয়ে নেয়। অনেকের গায়ের রং শত্রুর কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করে। রং বদলাতে তাদেরকে যে খুব কষ্ট করতে হয়, তা নয়। যেমন হরিণ, খরগোশ, শজারুর গায়ের রং সাধারণত ধূসর, তাই তারা মাটি বা গাছপালার কাছাকাছি থাকলে শিকারি বাঘ বা সিংহ সহজে আলাদা করে চিনতে পারে না। জেব্রার গায়ের সাদা-কালো দাগ তাকে শত্রু থেকে অনেক সময়েই রক্ষা করে। ওই দাগগুলি তার ছদ্মবেশ। সিংহের খাদ্য তালিকায় জেব্রাও আছে। সিংহ কালার ব্লাইন্ড বা বর্ণান্ধ, জেব্রা সেই সুযোগ নিয়ে সিংহকে ফাঁকি দেয়। সেটা কীভাবে? জেব্রা সাধারণত দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে। অনেক জেব্রা গায়ে গা লাগিয়ে চলতে থাকলে সিংহের চোখে মনে হয় সাদাকালো বিশাল কোনো প্রাণী নড়াচড়া করছে। তাই সে ওই প্রাণীকে আক্রমণ করতে সাহস পায় না।

অন্যদিকে গিরগিটি, ক্যামেলিয়ন, কাটলফিশ- গিরগিটি বিপদ টের পেলে গায়ের রং বদলে ফেলে। ফলে তাকে সেই পরিবেশ থেকে আলাদা করা যায় না। এদের দেহে বায়োক্রম নামের রাসায়নিক রঞ্জক থাকে। যার জন্য তারা ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাতে পারে। কিছু প্রাণী আবার ঋতুভেদে দেহের রং পরিবর্তন করে। যেমন মেরু শিয়াল। শীতকালে চারিদিকে ধু ধু সাদা বরফ থাকায় গায়ের সাদা লোমের কারণে এরা বরফে ঘাপটি মেরে শিকার ধরতে পারে। আবার শত্রুর চোখও ফাঁকি দেয়। বসন্তের শুরুতে এদের লোমে কালো কালো ছোপ পড়ে। কারণ এ সময় তাদের ছদ্মবেশটা এমনই দরকার। অনেক পাখি এবং স্তন্যপায়ীও ঋতুভেদে গায়ের রং পরিবর্তন করে প্রাকৃতিক ছদ্মবেশ নেয়।

সমুদ্রের নীচের ক্যাটলফিশ শত্রুর চোখে ধুলো দিতে ওস্তাদ। এদের প্রধান শত্রু হাঙর, বড় মাছ আর বড় ক্যাটলফিশ। ক্যাটলফিশ পরিবেশের মতো নিজের দেহের রং তৈরি করতে পারে। ফলে শিকারি শত্রু ক্যাটলফিশের উপস্থিতি বুঝতে পারে না। এ ছাড়া শত্রুর উপস্থিতি টের পেলে এরা কালো রঙের একধরনের তরল ছুড়ে মারে। তাতে কিছু সময় শত্রু চোখে কিছু দেখতে পায় না। ইতিমধ্যে ক্যাটলফিশ নিরাপদ দূরুত্বে সরে যায়। ঠিক একই পদ্ধতিতে শত্রুকে ফাঁকি দেয় অক্টোপাস। সমুদ্রের নীচের আরেক অদ্ভুত প্রাণী সি ড্রাগন। এদের দেখে মনে হয়, শিকড় উপড়ানো কোনো জলজ উদ্ভিদ বোধ হয় ভেসে বেড়াচ্ছে। আসলে এদের নিয়ে একই ভুল করে শত্রুরাও। গাছের রূপ নেওয়ায় সি ড্রাগন শত্রুর হামলা থেকে বেঁচে যায়।

পতঙ্গেরাও গাছের ছদ্মবেশ নেয়। এতে শত্রুরা তাদের চিনতে পারে না। যেমন প্রজাপতি, ঘাসফড়িং, পাতা পোকা, ঝিঁঝিঁ পোকা, স্টিক পোকাসহ অনেক প্রাণী। স্টিক পোকাকে প্রথমে দেখলে মনে হবে একটা ছোট্ট কাঠি হয়তো পড়ে আছে। কিন্তু ভালোমতো খেয়াল করলে বোঝা যায়, সেটা জ্যান্ত। কাঠি খায় না বলে বেঁচে যায় স্টিক পোকা। আবার সাদা চোখে লিফ ইনসেক্টের চেহারার সঙ্গে গাছের পাতার কোনো পার্থক্য নেই। তাকে দেখে গাছের মামুলি শুকনো মরা পাতা বলেই মনে হয়। শত্রুর চোখে এই ভাবে ধুলো দিয়ে বেঁচে যায় লিফ ইনসেক্ট। প্রায় একই ধরনের ছদ্মবেশ নেয় ক্যামো মথ। হক মথের ক্যাটারপিলারদের পিছন থেকে দেখলে মনে হবে কোনো হিংস্র সাপ মাথা উঁচিয়ে আছে ছোবল দিতে। শত্রুকে ভয় দেখাতেই ক্যাটারপিলার এরকম ছদ্মবেশ নেয়। তাই কেউ তাকে ঘাটায় না। আর আউল বাটারফ্লাইয়ের দুটি পাখায় পেঁচার চোখের মতো হিংস্র দুটি চোখ আঁকা থাকে। দেখে মনে হয়, কোনো পেঁচা বুঝি জুলজুলে চোখে তাকিয়ে আছে। ভয়ে শত্রুরা এই প্রজাপতির কাছ ঘেঁষে না।