ধর্মতলায় টানা ১৭ দিন অনশন করার পর জুনিয়ার ডাক্তাররা তা প্রত্যাহার করলেন। রাতেই তিলোত্তমার বাবা মা এসেছিলেন ধর্মতলায় আমরণ অনশন মঞ্চে৷ সেখানে এসে অনশনকারীদের কাছে অনশন প্রত্যাহারের কথা বলেন তাঁরা৷ তিলোত্তমার বাবা-মা বলেন, তাঁরা সন্তান হারিয়েছেন, তাই যারা আমরণ অনশন করছেন তাঁরা যেন এই অনশন প্রত্যাহার করে নেন৷ এরপরই জুনিয়ার ডাক্তারেরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তাঁরা আমরণ অনশন প্রত্যাহার করে নিলেন৷ সেই সঙ্গে এও জানান, মঙ্গলবার যে স্বাস্থ্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল তাও প্রত্যাহার করে নেওয়া হল। তবে শনিবার মহা-সমাবেশের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেটা হবে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। উল্লেখ্য, গত ৫ অক্টোবর থেকে ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’-এ বসেছিলেন ছয় জুনিয়র ডাক্তার। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার স্নিগ্ধা হাজরা, কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা, এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের তনয়া পাঁজা, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়। পরের দিন, ৬ অক্টোবর ধর্মতলায় অনশনে যোগ দেন আরজি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘আমরণ অনশন’-এ বসেন সেখানকার উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অলোক বর্মা।

১০ অক্টোবর অনশনকারী অনিকেত অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১১ অক্টোবর অনশনে বসেন আরও দুই জুনিয়র ডাক্তার। তাঁরা ভিআইএমএস(শিশু মঙ্গল)হাসপাতালের পরিচয় পণ্ডা এবং কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আলোলিকা ঘড়ুই। ১২ অক্টোবর ধর্মতলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন অনুষ্টুপ। তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। ওই দিন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়েন অলোক। তাঁকে ওই মেডিক্যাল কলেজেই ভর্তি করানো হয়। ১৩ অক্টোবর ধর্মতলায় অসুস্থ হয়ে পড়েন পুলস্ত্য। তাঁকে নীলরতন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। ১৪ অক্টোবর অসুস্থ হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন তনয়া। ওই দিনই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অনশনে বসেন সন্দীপ মণ্ডল। ১৫ অক্টোবর উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনশনকারী সৌভিক। ওই দিনই ধর্মতলায় নতুন করে অনশনে বসেন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেল্থের রুমেলিকা কুমার এবং মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্পন্দন চৌধুরী। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলজে ও হাসপাতাল সূত্রে খবর, ১৬ অক্টোবর ছুটি পান অলোক। ১৮ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের হাসপাতাল থেকে ছুটি পান সৌভিক। ১৯ অক্টোবর কলকাতার নীলরতন হাসপাতাল থেকে ছুটি পান পুলস্ত্য।

শনিবার নবান্নের তরফে ইমেল করে সোমবার বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা বলা হয়। তাতে অনশন তুলে বৈঠকে যোগ দিতে যাওয়ার কথা বলা হয়। যদিও জুনিয়র ডাক্তারেরা জানিয়ে দেন, অনশন তাঁরা তুলবেন না। সোমবার নির্ধারিত সময়ের আগেই নবান্নে পৌঁছে যান ১৭ জন জুনিয়র ডাক্তার। প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে চলে বৈঠক। বৈঠকে একাধিক বিষয়ে আলোচনার পর অনশনমঞ্চে ফিরে এসে জুনিয়র ডাক্তারেরা অনশন প্রত্যাহারের কথা জানান। এ-ও জানান, নির্যাতিতার বাবা-মায়ের কথাতেই অনশন তুলে নিলেন তাঁরা। পরবর্তী কর্মসূচির কথাও ঘোষণা করেন দেবাশিস। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে নবান্নে টানা ২ ঘন্টা বৈঠক করেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। বৈঠকে স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের অপসারণের দাবি মুখ্যমন্ত্রী শুরুতেই নাকচ করে দেন। তাকে ‘অভিযুক্ত’ বলা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মতবিরোধও হয় আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের। পাশাপাশি আরজি কর হাসপাতালে যে ৫৯ জন ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়েছে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেন জুনিয়ার ডাক্তাররা। এছাড়া টাস্ক ফোর্স গঠন নিয়েও মতবিরোধ হয় বৈঠকে।

তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে তাঁরা খুশি নয় বলেই বুঝিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। অনশনমঞ্চ থেকে দেবাশিস বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, যত বেশি কেন্দ্রীভূত করা যায় একটা সিস্টেমকে। কিন্তু স্বাস্থ্যসচিবকে নিয়ে আমাদের কথা শোনা হয়নি। পাশাপাশি আরজি করের অধ্যক্ষকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে’। থ্রেট কালচার নিয়ে কথা বলায় মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছেন বলেও জানান দেবাশিস। এদিন নাবন্নের বৈঠক প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে প্রশাসনের শরীরী ভাষা একেবারেই ইতিবাচক মনে হয়নি। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ ব্যাচ পরতে দেওয়া হয়নি। তাঁরা বলেছেন, আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কতটা কার্যকর হয় দেখা হবে। তাঁরা বলেন, আর ‘অভয়া’ যাতে না হয় তার জন্য কাঠামোগত পরিবর্তন জরুরি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ জরুরি। অপরাধীরাই তো কমিটিতে ছিল। এই পদ্ধতি বদলাতে হবে।