তৃতীয় পর্ব
এক ভদ্রবেশী জোচ্চর দালালের পাল্লায় পড়ে শেষ পর্যন্ত জন প্রতি দুশো টাকায় অনেকের সঙ্গে শেয়ার করে এক পা বাইরে রেখে ব্যস্ততম জাতীয় সড়ক ধরে চললাম আটারি, ভারতের শেষ শহর। প্রায় বত্রিশ কিমি পথ। সাঁ সাঁ করে চলছে এক ঝক্কর মার্কা অটো। “ও দেখিয়ে খালসা কলেজ, আংরেজ জমানাকা বিল্ডিং থা। ও হ্যায় ইন্ডিয়া গেট টু। আনেকা সময় রুকেঙ্গ। ফোটো খিঁচেঙ্গে”।

বোর্ডে লেখা রয়েছে, ইসলামাবাদ ৩২২ কিমি, লাহোর ৪৪ কিমি। অবশেষে এল আটারির চেকপোষ্ট। “আপলোগ ইঁহা পর আয়েঙ্গে ছ বাজেকা অন্দর”। কিন্তু বড় কোনো হাতব্যাগ, পাওয়ার ব্যাঙ্ক নেওয়া যাবেনা। এসব কোনও ব্লগার লেখেনা। একটা দোকানে বোনের হাতব্যাগটাতে সব রেখে নানক ও আল্লাহতালার ভরসায় চললাম। বেশ কিছুটা পথ হাঁটার পর এল সিকিউরিটি চেকিং। তারপর আরও কিছুটা গিয়ে এল স্বর্ণজয়ন্তী দ্বার, ভারতের প্রথম লাইন অফ্ ডিফেন্স। ঢুকলাম স্টেডিয়ামে। ২০০৪-এ এসেছিলাম। স্বভাবতই এলাকার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। তবে বিটিং রিট্রিটের নাম চূড়ান্ত ভাঁড়ামী আরও বেড়েছে। এর জন্য একজন বিএসএফ জওয়ানকে বিশেষ দায়ীত্ব দেওয়া হয়েছে। সে নেচে নেচে হুইসেল বাজিয়ে দর্শকদের তাতিয়ে দিয়ে চিৎকার করতে বলছে, স্লোগানের সাথে সাথে গলা মেলাতে বলছে। গেটের ওপারে উপস্থিত পাকিস্তানীদের থেকেও জোরে চেঁচাতে বলছে। অশিক্ষিত জনগণ তার তালে তাল দিচ্ছে। ভারত মাতাকি জয় স্লোগানটা আগের বার শুনিনি।

স্টেজিয়ামে ঢুকেই দেখি বিভিন্ন আধা দেশাত্মবোধক গানের সাথে অনেকে স্টেডিয়ামের মধ্য দিয়ে সীমানা পেরিয়ে যাওয়ার রাস্তায় নেমে নাচছে। এসব আগে ছিলনা। রাস্তায় কাউকে যেতে দিত না।বিটিং রিট্রিটে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। এ নিয়ে বিস্তারিত আর লিখছি না। এক ভদ্রমহিলার তো বলেই বসলেন, “এ তো ভরত নাট্যম চল রাহা হ্যায়”। তবে সীমানার গেট খোলা বন্ধ দেখতে মনটা খারাপ হয়ে যায়। পাশেই তারকাঁটার ওপারেই পাকিস্তানের অংশটা দেখে মনটা বিচলিত হয়ে পড়ে।

সীমানার গেট বন্ধ হয়ে গেল। দু’দেশের পতাকা নামানোর পর্ব শেষে দুপারের একজন করে জওয়ানের করমর্দন হোলো। আমরাও ফিরে এলাম। ব্যাগটা নিলাম। কফি খেলাম। অটোওয়ালার বদান্যতায় হোটেলের সামনেই নেমে পড়লাম। সেই প্রীতম ধাবাতেই খেলাম ভাত, ডিমের কারি ও আমার জন্য বাটার নান।
ক্রমশ