কলকাতা ব্যুরো: ‘বাংলায় যাবেন না। বাংলায় গেলেই খুন হয়ে যেতে পারেন।’ বুধবার রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে এমনই মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে রাজ্যসভায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। এরপরই শাহের বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূল সাংসদরা। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, হতাশা থেকেই এরকম কথা বলছেন অমিত শাহ। বাংলার মানুষের প্রত্যাখ্যান মেনে নিতে পারেননি উনি। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে কী হয়, তিনি ভুলে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন মন্তব্যের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দিল্লিতে বিক্ষোভ দেখাবে তৃণমূল। 

বুধবার আম আদমি পার্টির সাংসদ সঞ্জয় সিংয়ের এক প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় অমিত শাহ বলেন, সঞ্জয়বাবু, গুজরাটে তো সবে গিয়েছেন। ভালো হয়েছে এখনও বাংলায় যাননি। বাংলায় গেলে খুন হয়ে যেতে পারেন। এর পরই প্রতিবাদে সরব হন তৃণমূল সাংসদেরা। তুমুল প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এরপর বাংলায় বিজেপি কর্মকর্তাদের আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

অমিত শাহ জানান, ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে তাঁর রোড শো-য়ে নাকি গোলা পড়েছিল। একুশের বিধানসভা ভোটে প্রচারে গেলে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার গাড়িতেও হামলা হয়েছিল বলে দাবি শাহের। তখন তৃণমূল সাংসদরা চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করেন। তাঁদের উদ্দেশে পালটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, কী করে অস্বীকার করতে পারেন আপনারা? সবাই সবকিছু জানে।

অপরাধী শনাক্তকরণ বিল, ২০২২ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেছিলেন, নয়া এই বিলের ফলে তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, দলিতরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। জবাবে শাহের প্রশ্ন, বিলে তো কোনও জাতির উল্লেখ নেই। তাহলে তারা কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে? সেই সময় সুখেন্দুশেখর রায় জবাবে বলেন, ৬০ শতাংশ অভিযুক্তই তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, দলিত কিংবা সংখ্যালঘু। সেখানে শাহের পালটা, অভিযুক্তদের মধ্যে কীভাবে জাত-ধর্ম দেখা হবে? এর মধ্যে ফের তৃণমূল সাংসদরা ‘ফ্যাসিস্ট’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করে। সেই সময় ফের বিতর্কিত মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার, শব্দের অর্থ বদলে দিয়েছেন মমতাদির সরকার। তাঁর এই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে ফের হট্টগোল শুরু করেন সুখেন্দুশেখর রায়, শান্তনু সেনরা। তাঁদের দাবি মেনে নেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ঠিক আছে, আমি মমতাদির নাম তুলে নিচ্ছি। কিন্তু আপনারা অন্তত ফ্যাসিস্ট সরকারের সংজ্ঞা দেবেন না।

অমিত শাহের মন্তব্যের সমালোচনা করে সৌগত রায় বলেন, একদম বাজে কথা। অমিত শাহ তো নিজে এতবার বাংলায় এসেছিলেন। তিনি কি খুন হয়েছেন? জে পি নাড্ডা কি খুন হয়েছেন? ওনার সামনের একটি গাড়িতে দুটো ইট পড়েছিল। বিজেপি নেতারা দলে দলে এসেছিলেন ভোটের সময় প্লেনে করে। তাঁরা কি কেউ খুন হয়েছেন? এগুলি হচ্ছে অসত্য কথা, উনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার সুযোগকে ব্যবহার করছেন।

উল্লেখ্য, চলতি মাসেই দু’দিনের সফরে বাংলায় আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তার আগে অমিত শাহের এই মন্তব্য বিতর্ক বাড়ালো বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version