কলকাতা ব্যুরো: বউবাজারে সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ে ভাঙা পড়তে পারে অর্মত্য সেনের বাবার বাড়িও। ইতিমধ্যেই ওই বাড়িটিকে কলকাতা পুরসভার তরফে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ির জিনিসপত্রও বের করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধীরে ধীরে। চলছে বাড়ির মাপজোপের কাজকর্ম। কেএমআরসিএলের তরফে জানানো হয়েছে, পুরসভার সম্মতি মিললে ওই বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হবে। বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে।

বউবাজারের ১৫ নম্বর দুর্গা পিতুরি লেনের বাড়ির ছেলে অর্মত্য সেন। বাবা বিমলকুমার সেন এবং কাকা অর্জুন সেনের নামে বাড়ি। সোমবার অর্মত্যবাবু এসেছিলেন ঘরের জিনিস বের করে নিতে। দু’হাতে দুই ব্যাগে ঠাসা জিনিসপত্র। আর ঘরের মাল উঠেছে ছোট হাতি গাড়িতে। বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত দুর্গা পিতুরির একসময়ের এই বাসিন্দা পরিবার নিয়ে আড়াই বছর ধরে গড়িয়াহাটে থাকেন। ২০১৯ সালে মেট্রোর সুড়ঙ্গ বিপর্যয়ের সময় থেকেই তাঁরা ঘরছাড়া।

বাড়ি ভাঙা হবে জানতে পেরেছি। কিন্তু সেকথা বাবাকে বললে তাঁকে আর বাঁচানো যাবে না। হাওড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন তিনি। অক্সিজেন দিতে হয় মাঝেমধ্যেই। ঘর ভাঙার খবর যাতে তিনি কোনওভাবে জানতে না পারেন তাই টিভিটা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ঘর থেকে।–বলছিলেন অর্মত্যবাবু।

তাঁর বাবার বয়স এখন ৮২ বছর। মা সন্ধ্যাদেবীও পঁচাত্তরের গণ্ডি পার করেছেন। তাঁরা দু’জনেই এখন থাকেন হাওড়াতে। তিনি বলেন, ১৮৮৮ সাল থেকে আমার পূর্বপূরুষরা এখানে থাকেন। আমার বাবা আর জেঠুর নামে বাড়ি। অনেক আবেগ-স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালে বউবাজারে যখন পরপর বাড়িতে ফাটল ধরেছিল, আমাদেরটাতেও হয়। বাড়ি ছাড়তে বলে তখন কেএমআরসিএল। সেই শোক বাবা নিতে পারেনি। এক বছরের মধ্যে নানা সমস্যা নিয়ে ৬ বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়। তারপর থেকে বাবা-মা হাওড়াতে থাকেন। এটা ভাঙা হবে শুনলে বাবাকে আর ঠিক রাখা যাবে না।

দুর্গা পিতুরিতে ফিরে এসেছে আবার ঠিক আড়াই বছর আগের স্মৃতি। একের পর এক বাড়িতে চওড়া ফাটল নজরে আসছে। শুরু হয়েছে বাড়ি ভাঙার কর্মযজ্ঞও। আপাতত ১৬ এবং ১৬/১ বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত হলেও ১৫ নম্বরটাও ভাঙা পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে। পুরসভা সেই বাড়িতে বিপজ্জনক বোর্ডও সাঁটিয়েছে। বাড়িতে মোট আটজন থাকতেন বলে জানান অর্মত্যবাবু। কোনও ভাড়াটে ছিল না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version