কলকাতা ব্যুরো: এরনাকুলাম ও মুর্শিদাবাদ থেকে আল-কায়েদা সন্দেহে ধৃত ন’ জনকে জেরা করে পাকিস্তান থেকে ড্রোনের মাধ্যমে এ দেশের সীমান্ত এলাকাগুলোতে অস্ত্র বর্ষণের একটি বড় চক্রের সন্ধান পেল এনআইএ। ইতিমধ্যেই কাশ্মীরে ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র এবং মাদক পাকিস্তানের দিক থেকে এপাড়ে ফেলার বেশ কয়েকটি ঘটনা সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নজরে এসেছিল। তারই মধ্যে মুর্শিদাবাদ এবং কেরলের জঙ্গী সন্দেহে ধৃতদের থেকেও একই তথ্য পাওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।
প্রায় ২৫ বছর আগে পুরুলিয়ায় অস্ত্র বর্ষণের ঘটনা মনে আছে এ রাজ্যের মানুষের। তা নিয়ে সারা দেশেই চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই বিমান থেকে ফেলা অস্ত্র আর এখন ড্রোনের মাধ্যমে মাঝেমাঝেই সীমান্ত পেরিয়ে অস্ত্র দেশে ঢোকার যে তফাৎ কত বিস্তর তা ভেবেই নজরদারি আরও বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বর্ষীয়ান পুলিশ কর্তারা।

কাশ্মীরের একদিকে চিন, অন্যদিকে পাকিস্তান সীমান্তে নিরাপত্তা দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলির কাছে। সেখানে বর্তমানে পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে অস্ত্র ও হেরোইন পাচার। আকাশপথে ড্রোন ব্যবহার করে অস্ত্র এবং মাদক এদেশে পাচার করার বেশকিছু ঘটনা ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে। বর্তমানে কাশ্মীর সীমান্ত দিয়ে এমন পাচার চলছে। আর এই সূত্রেই মুর্শিদাবাদ এবং কেরল থেকে ধরা পড়া সন্দেহভাজন নয় আল-কায়েদা জঙ্গী’র যোগসুত্র ভাবিয়ে তুলছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের।

ধৃতদের টানা জেরা করে এমন অস্ত্র বর্ষণের যোগ পেয়েছে এনআইএ। তথ্য অনুযায়ী, ড্রোন ব্যবহার করে পাকিস্তানের পেশোয়ার থেকে কাশ্মীরের কোন গোপন জায়গায় আল কায়াদার হ্যান্ডেলারদের বেশ কিছু অস্ত্র পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। সেই অস্ত্র নিতে কাশ্মীরে কয়েকদিনের মধ্যে যাওয়ার কথা ছিল ধৃতদের কয়েকজনের।
কিন্তু সম্প্রতি কাশ্মীরে নতুন এই অস্ত্রপাচারের ছক সেনা ও বিএসএফ ধরে ফেলায় জঙ্গিরা সেই জায়গা পরিবর্তন করে। ধৃতরা জেরায় জানিয়েছে, কাশ্মীর এর পরিবর্তে সেই অস্ত্রশস্ত্র দিল্লিতে কোথাও পাঠানোর কথা ছিল। ফলে সেখানে গিয়ে ওই সমস্ত অস্ত্র নিয়ে বড় হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

কাশ্মীর সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বিএসএফের জম্মু ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এন এস জায়সওয়াল সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, সব নিরাপত্তা সংস্থাগুলি এখন প্রবল সতর্ক রয়েছে। কারণ ড্রোনের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে এপারে অস্ত্র ও মাদক ফেলার নতুন চ্যালেঞ্জ এখন নিতে হচ্ছে বাহিনীগুলিকে। তিন দিন আগেই আরএস পুরা সেক্টরের আর্নিয়া এলাকায় ৬২ কেজি হেরোইন, দুটি পিস্তল, তিনটি ম্যাগাজিন এবং আরো ১০০ রাউন্ড গুলি এই ভাবেই ড্রোনের মাধ্যমে ফেলা হয়েছিল। কিন্তু বিএসএফ সতর্ক থাকায় সেসব বাজেয়াপ্ত করা হয়।

ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদক এদেশে পাচারের ঘটনা কয়েক মাস আগে প্রথম ধরা পড়ে পাঞ্জাব সীমান্তে। এরপর গত ২০ জুন বিএসএফ একটি ড্রোন চালিত হেক্সা কপ্টার গুলি করে নামায়। সেখান থেকে মাদক সহ আমেরিকায় তৈরি সেমি অটোমেটিক কারবাইন এবং সাতটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়। কাটুয়া জেলার রতুয়া গ্রামে সেই ঘটনার পর তিন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছিল রাজৌরি পুলিশ।

কাশ্মীরে লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে খালিস্তানি জঙ্গিরা পাকিস্তান থেকে এইভাবে অস্ত্র ও মাদক পাঠাচ্ছে বলে ইনপুট রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনীর কাছে। মুর্শিদাবাদ এবং কেরালায় ধৃতদের আরো জেরা করে তাই এয়ার অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে আরো কিছু হাতে-গরম তথ্য পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version