কলকাতা ব্যুরো: বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে বৈঠক করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা। শুক্রবার দুপুরে নিউটাউনের হিডকো ভবনে বৈঠক সারলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজি বিএসএফের সঙ্গে। সীমান্তবর্তী জেলা গুলির মধ্যে দুই ২৪ পরগনা, দুই দিনাজপুর, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, নদিয়া, মালদা ও মুর্শিদাবাদের জেলা শাসকরা এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া  রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, স্বরাষ্ট্রসচিব বিপি গোপালিকা, ভূমি সচিব স্মারকি মহাপাত্র এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যও এই বৈঠকে অংশ নেন।

সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে যে প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়েছে, তাতে ত্রুটির অভিযোগ তোলে রাজ্য। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে মূলত তিনটি বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রথমটি, সীমান্তে কাঁটা তার দেওয়া নিয়ে। দ্বিতীয়টি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট বসানো নিয়ে এবং তৃতীয়টি বর্ডার আউটপোস্ট নির্মাণ নিয়ে। অভিযোগ, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে রাজ্যের সীমান্ত চৌকি নিয়ে ভুল ছিল। রাজ্যের অফিসার এবং জেলা শাসকরা সেই ভুল ধরিয়ে দেন। এছাড়াও প্রেসেন্টেশনে কয়েকটি জায়গার নাম এবং জেলার নামও ভুল উল্লেখ করা ছিল। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে রাজ্যের বাস্তব চরিত্রের অনেক পার্থক্য রয়েছে। এই নিয়ে বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে রাজ্যের অফিসারদের মতবিরোধ হয়। 

বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফের সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে এমনিতেই পশ্চিমবঙ্গ ও পাঞ্জাবের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই সংঘাত চলছে কেন্দ্রের। আর সেই বিবাদ মেটাতেই এদিন রাজ্যে এলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় কুমার ভাল্লা। উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে রাজ্যের নিরাপত্তা সহ একাধিক বিষয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

বিএসএফের পরিধি বাড়ানোর যে নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়েও এদিন বিস্তর আলোচনা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিএসএফের কাজের পরিসর বৃদ্ধিতে সরাসরি আপত্তি ছিল রাজ্য সরকারের। তবে নতুন নির্দেশিকায় সীমান্তের ৫০ কিমি পর্যন্ত এলাকায় তল্লাশি, গ্রেফতারের অধিকার দেওয়া হয়েছে বিএসএফকে। আর এখানেই প্রশ্ন তুলেছিল রাজ্য।

আরও সহজ ভাবে বললে, সম্প্রতি জারি করা ওই নির্দেশিকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা তিন রাজ্যে বিএসএফ-এর ক্ষমতা ও কাজের ব্যাপ্তি বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাতেই বলা হয়েছে এথন থেকে বাংলা-সহ তিন রাজ্যে ৫০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে তারা তল্লাশি, গ্রেফতার ও পণ্য বাজেয়াপ্ত করতে পারবে। এমনকী অসম, পশ্চিমবঙ্গ এবং পাঞ্জাবে রাজ্য পুলিশের মতো তল্লাশি ও গ্রেফতারির অধিকারও দেওয়া হয়েছে বিএসএফকে। আর এখানেই রাজ্যের স্বাধিকার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তবে বিএসএফ-এর সীমানা বৃদ্ধি নিয়ে এদিন সেই অর্থে কোনও আলোচনা হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে।

সূত্রের খবর, এদিন টানা আড়াই ঘন্টা রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা। সেখানেই সমস্যা সমাধানের জোরদার চেষ্টা করা হয় দু-পক্ষের তরফেই। বর্ডার ফেন্সিং, ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট এবং বর্ডার আউটপোস্ট বসানো নিয়েও বিস্তর আলোচনা চলে।

পাশাপাশি রাজ্যে এখন থেকে কতটা বাড়তি এলাকা কাঁটাতারের দিয়ে ঘিরতে হবে সেই তালিকাও দ্রুত তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছেন এই কেন্দ্রীয় শীর্ষ কর্তা। সূত্রের খবর, এদিনের আলোচনার মূল বিষয়ই ছিল সীমান্ত এলাকায় জমি চিহ্নিত করা। এমনকী এই কাজ করতে একাধিক এলাকার ভুল নাম নিয়ে জটিলতা বাড়ে। এই বিষয়টিও দ্রুত সমাধানের জন্য কড়া নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version