কলকাতা ব্যুরো: চিনের সঙ্গে অরুণাচল থেকে লাদাখে সংঘাত এখনো বজায় রয়েছে। এরইমধ্যে সীমান্ত থেকে সন্দেহভাজন চিনা নাগরিকের গ্রেপ্তারে রহস্য তৈরি হয়েছে। মালদার সীমান্ত থেকে ধৃত চিনা নাগরিককে যতই জেরা করা হচ্ছে, ততোই রহস্য বাড়ছে। প্রথমে তিনি ব্যবসার জন্য এসেছেন বলে দাবি করলেও, বিএসএফ ইন্টেলিজেন্স এবং এনআইএর গোয়েন্দাদের টানা জেরায় হ্যান জুন যেসব তথ্য জানাচ্ছেন, তাতে ভারতবিরোধী কার্যকলাপ যে সংগঠিতভাবে তার সঙ্গে কয়েকজন চিনা নাগরিক মিলে করছেন, সেই বিষয়টি আরো স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যাচ্ছে।
সম্প্রতি উত্তর প্রদেশ এটিএস এক চিনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছে। তিনি মালদা সীমান্ত থেকে ধৃত হ্যান জুনের ব্যবসার পার্টনার। তার সূত্রেই এদেশে একটি চিনা নাগরিকদের চক্র দেশ বিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছে বলে ইঙ্গিত আরো স্পষ্ট হচ্ছে। এদের সূত্রেই হায়দ্রাবাদ শহর আরো কিছু এলাকায় সন্দেহভাজন এমন নাগরিকদের খোঁজে ছাপিয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দারা।
মালদার মালিক সুলতানপুর বিওপি এলাকায় থেকে বুধবার ৩৬ বছর বয়সে চিনা নাগরিককে গ্রেপ্তার করে বিএসএফ। তার কাছ থেকে যেসব ল্যাপটপ, মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র পাওয়া যায় তাতে সন্দেহ আরও গভীর হয়। শুক্রবার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার একদল গোয়েন্দা তাকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ চালায়। তাতে ধৃত ব্যক্তি জানিয়েছে, গত দু’বছর ধরে এ দেশ থেকে প্রায় তেরোশো সিম কার্ড তারা চিনে পাচার করেছে। তার আরো বক্তব্য অনুযায়ী, শরীরের বিভিন্ন গোপন জায়গায় সিল করা সিম কার্ড নিয়ে গিয়ে পাচার করেছে চিনে। মূলত ভারতবিরোধী অর্থনৈতিক দুর্নীতি ছাড়াও, ভারতবিরোধী নানা কাজে ওই সমস্ত সিম কার্ড ব্যবহার করা হয় বলে ধৃত চিনের হুবেই প্রভিন্স এর এই বাসিন্দা জেরায় জানিয়েছে।
ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের লখনৌ পুলিশের সন্ত্রাস বিরোধী শাখা হ্যানের বন্ধু শোন জিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে। ধরা পড়ার পরে ধৃত বিএসএফকে জানিয়েছিল বিজনেস ভিসা নিয়ে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন ২ জুন। সেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে কয়েকদিন ছিলেন তারপরে সীমান্তের কাছাকাছি এসে ছবি তুলতে তুলতে তিনি কখন বর্ডার পেরিয়েছেন তা খেয়াল করেন নি।
যদিও বিএসএফ তার কাছ থেকে একটি চিনা পাসপোর্ট, একটি অ্যাপেলের ম্যাকবুক, দুটি আইফোন, একটি বাংলাদেশি সিম কার্ড ও একটি ভারতীয় সিম কার্ড, দুটি চাইনিজ সিম কার্ড, দুটি পেনড্রাইভ, তিনটি চার্জার, দুটি ছোট টর্চ, দুটি এটিএম কার্ড এবং বেশ কিছু ইউএস ডলার ও বাংলাদেশ এবং ভারতের টাকা উদ্ধার করেছে।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছে তিব্বত এবং বাংলাদেশকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের আইএসআই এর হাত ধরে এদেশে চিনা গোয়েন্দারা ঢুকে পড়েছে তারা পাকিস্তানের কায়দাতেই এদেশ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে একইভাবে এদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে গোলমাল লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও রয়েছে এই সিনা ইন্টেলিজেন্স আরো গভীরভাবে জেরা করে তথ্য পেতে চাইছে গোয়েন্দারা
সীমান্ত ইস্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভারত-চিন সম্পর্কে চাপানউতোর চলছে। গত বছর মে মাস থেকে পূর্ব লাদাখের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সেনা মোতায়েন নিয়ে ভারত-চিন সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে প্যাংগং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্ত থেকে সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র সরিয়ে নেয় ভারত-চিন। এদিকে সম্প্রতি লাদাখে চিনা সেনার কার্যকলাপের উপর নজর রাখা হচ্ছে বলে জানান ভারতীয় সেনা প্রধান এম এম নারাভানে। তবে, প্যাংগং হ্রদ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের পর এখনও পর্যন্ত চিনের তরফে “সীমা” লঙ্ঘন করা হয়নি বলেও সেদিন জানান তিনি। এই আবহে একাধিক সন্দেহভাজন চীনা নাগরিকের গ্যালারিতে চাপ বেড়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের।