মৈনাক শর্মা

ভারত চীন-সীমান্ত বিবাদ থমকে যাওয়ার অনেক মাস পরেও উত্তাপ কমেনি লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তে। সেনার তরফে উচ্চ আধিকারিক বৈঠকেও একচুলও কমেনি এই বিবাদ। এরই মধ্যে ভবিষ্যতের যুদ্ধে দিল্লিকে চাপে ফেলতে তিব্বত ও অরুণাচলের সীমানার কাছে রেল প্রকল্প তৈরী করছে চীন। সম্প্রতি ১০১১ কিলোমিটার ধৈর্ঘ্যের চীনের য়ান শহর থেকে নয় ইঞ্চি পর্যন্ত রেল প্রকল্প তৈরির ঘোষণা করে চীন।
এর আগেই ভারতের অরুণাচলের গা ঘেঁষে অন্তত তিনটি গ্রাম চীন তৈরি করার কথা সামনে আসে। অরুণাচলের বুম লা পাশের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে সেই গ্রামগুলি তৈরি করা হয়েছে বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা ছবিও দেন। যে এলাকায় গ্রাম গুলি তৈরি হয়েছে, তা ভারত, চীন এবং ভুটানের ত্রিভুজের কাছাকাছি। আর অরুণাচলের লাগোয়া। ফলে এতে ভারতীয় ওই এলাকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা কথা উঠেছে।
চিনের য়ান নয়ইঞ্চি রেল প্রকল্প চীনের সিচুয়ান প্রান্তের চেঙ্গুডু শহর থেকে শুরু হয়ে তিব্বতের লাসা এলাকাকে যুক্ত করবে। ২০১৫ সাল থেকেই নয়ইঞ্চি থেকে লাসা অবধি প্রায় ৪৩৫ কিমি পথ তৈরির কাজ শুরু করে দেয় বেজিং। অর্থাৎ নিজের অভ্যন্তরীণ শহর থেকে একদম সীমান্ত এলাকা পর্যন্ত রেল পথ। যদিও এর প্রথম বিভাগ সিচুয়ান প্রান্তের চেঙ্গুডু শহর থেকে য়ান পর্যন্ত রেল পথ ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসেই কাজ শেষ হবার পরেই, ১০১১ কিলোমিটারের সুবিশাল রেল পথ ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকল্প শেষ করবার লক্ষে বেজিং। এই রেল প্রকল্পের নয়ইঞ্চি নামক এলাকা অরুণাচলের সীমার নিকটে অবস্থিত। যা চিন্তায় ফেলছে ভারতের সামরিক বিভাগকে।

বর্তমান অবস্থায় দক্ষিণ চীন সাগর থেকে চীনের উপর আক্ক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। তাই বেজিংয়ের বেশিরভাগ সৈন্যই পূর্ব সীমান্তে রয়েছে। এমতা অবস্থায় ভারতের সাথে যুদ্ধ হলে দ্রুত গতিতে সেনাকে তিব্বত ও অরুণাচল সীমান্তে এই রেল পথের সাহায্যে পাঠাতে সক্ষম হবে চীন। কিন্তু স্বাধীনতা পাওয়ার বহু বছর পরেও এখনো লাদাখ থেকে সিকিম পর্যন্ত কিছু এলাকাতে সড়ক পরিষেবা ছাড়া রেল পরিষেবার সুযোগ নেই ভারতের। সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকছে চীন। ভারতের স্বাধীনতার পর পরই উত্তর পূর্ব এলাকাতে যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে রেল ও সড়ক পথের দাবি উঠছে বার বার। কিন্তু কিছু কিছু এলাকাতে সড়ক পথ তৈরী হলেও, রেল পথের মাধ্যমে পুরো ভারতকে জুড়তে এখনো দেশ পিছিয়ে। তাছাড়া উত্তরাখণ্ড- অরুণাচলের বেশ কিছু এলাকাতে এখনো টেলিকম পরিষেবাও নেই। সেখেত্রে চীনের আগ্রাসন বাড়লেও স্থানীয় যোগাযোগ পরিষেবার অভাবে পিছিয়ে পড়বে ভারতিয় সেনা। অর্থাৎ পরিকাঠামোতে এখনো পিছিয়ে ভারত। সেখেত্রে কেবল অস্ত্রোতেই নয়, দ্রুত গতিতে পরিকাঠামোর দিকেও এগোতে হবে দিল্লিকে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version