কলকাতা ব্যুরো: দরজায় টোকা দিয়েছিল তালিবান। তবে ইতিবাচক সারা না মেলায় প্রাণে মেরে ফেলা হলো এক মহিলাকে। জানা গিয়েছে নিজের তিন ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে আফগানিস্তানের উত্তরের ফারিয়াব প্রদেশে থাকতেন ওই মহিলা। জানা যাচ্ছে, তালিবানের দাপাদাপি শুরু হওয়ার পরেই নিয়মিত তাঁদের বাড়িতে আসতে শুরু করেন যোদ্ধারা। মৃতার ২৫ বছরের মেয়ের কথায়, ‘মাকে ওঁরা ১৫ জনের রান্না করে দিতে বলেছিল। কিন্তু মা দিতে পারেনি। জানিয়েছিল যে আমরা গরিব। আমাদের নিজেদেরই ভাত জোটেনা। পরপর তিনদিন মায়ের কাছে খাবার চেয়ে পায়নি ওঁরা। চতুর্থ দিনে মাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলল’!
তাঁর আরও সংযোজন, ‘AK47 দিয়ে মাকে মারতে শুরু করেছিল ওঁরা। আমি যখন চিৎকার করলাম, তখন কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে পাশের ঘরে গ্রেনেড ছুঁড়ে মারল। আগুন ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে পালিয়েও গেল’।
গত ১২ জুলাই নৃশংস ওই ঘটনার সাক্ষী থেকেছিল ফারিয়াব প্রদেশ। বর্তমানে যখন তালিবান সংগঠনের তরফ থেকে বারবার নারীদের পড়াশোনা সহ অন্য অধিকার পাইয়ে দেওয়ার কথা চলছে, সেই পরিস্থিতিতেই প্রকাশ্যে এসেছে এমন অমানবিক মৃত্যুর ঘটনা।প্রসঙ্গত, মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার ফলে বিগত ১০ দিনে খুব দ্রুত গতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশের দখল নিয়েছে তালিবান। স্থানীয়দের বুঝে ওঠার আগেই এলাকা ছেয়ে গিয়েছিল তালিবানি পতাকায়। কিছু মহিলার দাবি, তালিবানি নিয়ম অনুযায়ী, বুরখা কেনার সময় পর্যন্ত পাননি তাঁরা। আসলে তালিবানের নিয়ম অনুযায়ী, বুরখা ছাড়া কোনও মহিলা বাড়ির পুরুষদের সঙ্গে বাইরে বেরতে পারবেন না। যদিও পরে তালিবানের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে, হিজাব পরলেই চলবে। বুরখা বাধ্যতামূলক নয়।
তবে আফগানিস্তানের মহিলাদের কাছে বুরখা কিংবা হিজাবের অর্থ ২০ বছর ধরে অর্জন করা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা। কাজ করার অধিকার, পড়াশোনার অধিকার, ঘোরাফেরার অধিকার কিংবা শান্তিতে বাঁচার অধিকারও হারিয়ে ফেলা। আপাতত আতঙ্কে বাঁচছেন আফগান নারীরা। তাঁদের ভয়, কোনওদিনই এই হারিয়ে ফেলা অধিকার ফিরে পাবেন না তাঁরা। তালিবান যতই বলুক না কেন ‘মেয়েরা অধিকার পাবেন’, বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণ আলাদা, সেই বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন আফগান নারীরা।
আর সেই কারণেই মার্কিন কিংবা ব্রিটিশ সেনাদের কাছে আফগান মহিলাদের আর্জি, ‘তালিবান আসছে… আমাদের বাঁচতে দিন’।