কলকাতা ব্যুরো: মুখের কথা আর কাজে করার মধ্যে যে পার্থক্য তার প্রমাণ দিল তালিবান সরকার। আসরাফ ঘানি সরকারের পতনের পর তালিবানরা মুখে বলেছিল, নারী সুরক্ষা ও নারী অধিকার সুনিশ্চিত করা হবে শরিয়া আইন মেনেই। আফগান মহিলাদের চাকরির ক্ষেত্রেও কোনও বাধা দেওয়া হবে না। তবে রাতারাতি বদলে গেল গোটা চিত্রটাই। মহিলা সংবাদ সঞ্চালক অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখলেন তাঁর জন্য গেট খুলছে না অফিসের। তিনি প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে, সরকার বদলে গিয়েছে, তোমার প্রবেশাধিকার নেই।
মহিলা সংবাদ সঞ্চালক শবনম দাওরানের অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি অফিসে যান। তাঁর অফিসের পরিচয়পত্র দিয়ে গেটে থাকা যন্ত্রে ঠেকান। কিন্তু গেট আর খোলে না। অথচ বাকি পুরুষ কর্মীরা নিশ্চিন্তে ঢুকতে পারছেন। কেন তিনি ঢুকতে পারছেন না? প্রশ্ন করা হলে তাঁকে বলা হয়, রাজত্ব বদলে গিয়েছে। তোমার আর প্রবেশাধিকার নেই। তুমি বাড়ি যাও।
কিন্তু কথা তো এমন ছিল না। হঠাৎ এভাবে জীবন পাল্টে যাবে ভাবতেও পারেননি শবনম। তবে শবনমের একটি ভিডিও তালিবানদের সমস্ত মিথ্যাকে প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে। স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি আসলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের চেষ্টা প্রমাণ হয়ে গেল। ভিডিওতে শবনমকে বলতে শোনা যায়, ‘কেউ আমার কথা শুনতে পাচ্ছে। যদি বিশ্বের কাছে আমার কন্ঠস্বর পৌঁছয় তবে আমার অনুরোধ, দয়া করে আমাদের সাহায্য করুন। আমাদের সকলের প্রাণ সংকটের মধ্যে রয়েছে। আফগানিস্তানে প্রত্যেকদিন মহিলাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে তালিবানরা।
শবনম আরও জানিয়েছেন, স্বাধীনতা দিবস পালন করতে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা হতে হচ্ছে মানুষকে। মহিলাদের প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে তালিবানদের বিয়ে করতে না হলে যৌনদাসী হয়ে থাকতে। সর্বত্র ভয়ঙ্কর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মহিলাদের সম্ভ্রম বাঁচানোই এখন কঠিন কাজ হয়ে পড়েছে। সর্বত্র প্রবেশাধিকার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির অন্দরমহলে বুরখার আড়ালে জায়গা করে নিতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে তালিবানের শাসন চলত। তখনকার নিয়মে মহিলাদের শিক্ষা বা চাকরির কোনও অধিকার ছিল না। এমনকী বাড়ি থেকে বেরোতে সবসময় পুরুষসঙ্গী থাকতে হতো। বুরখা ও হিজাবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হত। গলার স্বর, পায়ের শব্দ যাতে পরপুরুষের কানে না পৌঁছয় তার জন্য বাড়তি সতর্কতাও নিতে হতো। সঙ্গে তো তালিবানদের লালসার শিকার ছিলই। জোর করে বিয়ে বা যৌনদাসী করা হতো। গত ১৫ আগস্ট কাবুলে তালিবানরা প্রবেশ করতেই দেশ ছাড়েন প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি। পতন হয় আফগান সরকারের।