কলকাতা ব্যুরো: করোনা কাল কাটিয়ে এবার খুলে যাক রাজ্যের স্কুল, কলেজগুলি। এই দাবিতেই একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। শুক্রবার তার সবকটি একসঙ্গে শুনানি হয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। কবে নাগাদ স্কুল খোলার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার? এ নিয়ে সওয়াল-জবাবে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় আবেদন করেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে। সেই আবেদন মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৪ ফেব্রুয়ারি।
এদিন আদালতে মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য সওয়াল করেন, ছাত্রদের মনের গতিবিধি নির্ভর করছে এই স্কুল খোলার উপর। ইতিমধ্যে আত্মহত্যার ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। এই অবস্থায় স্কুল খোলা অত্যন্ত প্রয়োজন। এভাবে কোভিডের অজুহাত দিয়ে স্কুল বন্ধ করে রাখা চলতে পারে না। দূরত্ববিধি বজায় রেখে স্কুল খোলা হোক। চিকিৎসকেরাও স্কুল খোলারই পক্ষে বলে আদালতে জানান তিনি।
শুক্রবারের সওয়াল-জবাবে রাজ্যের পক্ষে এজি জানান, রাজ্য সরকারই স্কুল খুলতে সবচেয়ে আগ্রহী। কারণ, তারা মনে করেন, অনলাইন ক্লাসের চেয়ে ক্লাসরুমে সশরীরে গিয়ে পড়াশোনা অনেক বেশি ফলপ্রসূ। কিন্তু এমন যেন না হয় যে সংক্রমণের কারণে ফের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এখনও ছোটদের করোনা ভ্যাকসিনেশন সম্পূর্ণ হয়নি। ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সিরা টিকা পাচ্ছে। কিন্তু তার চেয়ে কমবয়সিদের টিকাকরণ কবে হবে, সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
এদিকে, ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এই সব দিক মাথায় রেখে স্কুল খোলা নিয়েই সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য সরকার। সূত্রের খবর, ছোটদের ৮৫ শতাংশ টিকা না হলে স্কুলে পড়ুয়াদের আনতে চায় না সরকার।
যদিও মামলাকারীদের আইনজীবীদের বক্তব্য, এভাবে সময় নষ্ট করছে সরকার। এত কিছু হচ্ছে, শুধু স্কুল, কলেজ কেন বন্ধ? আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে স্কুল খোলার চূড়ান্ত দিনক্ষণ জানাতে পারে রাজ্য সরকার। যদিও এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী, এমনই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর দিনক্ষণ জানালে, তবেই তা আদালতে পেশ করতে পারেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
শিক্ষক সংগঠনের নেতা সৌগত বসু বলেন, বহুবার আমরা বলেছি বাচ্চাদের থেকে প্রচুর সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এমনটা নয়। দু’বছরের অতিমারিকালে তা দেখা গিয়েছে। কেন রাজ্য এখনও সময় চাইছে তার বিজ্ঞানসম্মত কোনও যুক্তি পাচ্ছি না। হয়তো রাজ্যের অন্য কোনও ভাবনাচিন্তা রয়েছে। তাই এরকম বক্তব্য রেখেছে। স্কুল খোলার জন্য যেখানে পড়ুয়া, অভিভাবক থেকে সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ পাহাড়প্রমাণ চাপ তৈরি করছেন বিদ্যালয় প্রশাসনগুলির উপরে। আমি জানি না সরকার কতদিন মুখ ফিরিয়ে থাকবে।
প্রসঙ্গত, গত কয়েকদিন ধরে স্কুল, কলেজ খোলার দাবি কলকাতা থেকে জেলায় জেলায় চলছে বিক্ষোভ। এসএফআই, এবিভিপি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মিছিল, বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এবার তা আইনের বিবেচনাধীন। আগামী ১৪ তারিখের শুনানিতেই কি স্পষ্ট হবে স্কুল খোলার দিনক্ষণ? সেদিকে তাকিয়ে সব মহল।