কলকাতা ব্যুরো: সমস্ত জল্পনার অবসান। অবশেষে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কালীঘাটে দলের নতুন কার্যকরী কমিটির বৈঠকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে অভিষেকের উপরেই আস্থা রেখেছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এককভাবেই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলাবেম অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে বৃত্তের বাইরে রাখা হবে না, এমন খবর সকাল থেকেই একাধিক সূত্র মারফত পাওয়া যাচ্ছিল। আর শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক শেষে হলোও তাই। পদ ফিরে পেলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে যেমনটা শোনা যাচ্ছিল, একাধিক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাখা হতে পারে, সেই পথে শেষ পর্যন্ত হাঁটলেন না মমতা।
পাশাপাশি দলের নতুন সহ-সভাপতি হিসাবে তিনজনের নাম চূড়ান্ত করেছেন দলনেত্রী। এরা হলেন যশবন্ত সিনহা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সুব্রত বক্সী। এছাড়াও দলের একাধিক কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন অভিষেক। তৃণমূলের কোষাধ্যক্ষ হচ্ছেন অরূপ বিশ্বাস। এছাড়াও দলের চেয়ারপার্সন এবং কর্মসমিতির মধ্যে সমন্বয়কারী হিসাবে ফিরহাদ হাকিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের আর্থিক নীতি নির্ধারণ করবেন অমিত মিত্র এবং যশবন্ত সিনহা-সহ কয়েকজন।
এদিন তৃণমূলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দলের জাতীয় মুখপাত্র হচ্ছেন সুখেন্দুশেখর রায়। লোকসভায় মুখপাত্র হচ্ছেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁকে সবরকম সাহায্য করবেন মহুয়া মৈত্র। উত্তরপূর্বের রাজ্যেগুলিতে দলের সংগঠন দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সুস্মিতা দেবকে।
এদিনের বৈঠকে ভিনরাজ্য থেকেও নেতারা এসেছিলেন। ডাকা হয়েছিল মেঘালয়ের মুকুল সাংমা, উত্তরপ্রদেশের রাজেশপতি ত্রিপাঠী, ত্রিপুরার সুবল ভৌমিক, গোয়ার লুইজিনহো ফ্যালেইরো, হরিয়ানার অশোক তানোয়ারকে। এরাই ওই রাজ্যগুলিতে তৃণমূলের সংগঠন বৃদ্ধির দায়িত্ব পেয়েছেন।
বস্তুত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি নতুন কর্মসমিতির সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেও কোনও পদাধিকারীর নাম ঘোষণা করেনি তৃণমূল। কর্মসমিতির সদস্যরা পদাধিকারী নির্ধারণের ভার দলনেত্রীর উপরেই ছেড়েছিলেন। তারপর থেকেই তৃণমূলে অভিষেকের অবস্থান নিয়ে জল্পনা ছড়িয়েছিল রাজনৈতিক মহলে। দলের বর্ষীয়ান নেতাদের সঙ্গে অভিষেকের সম্পর্ক নিয়েও বহু লেখালেখি হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত সব জল্পনা-গুজব উড়িয়ে কার্যত আগের মতোই কমিটি গড়ে দিলেন মমতা। যাতে নবীন এবং প্রবীণদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হয়েছে। অভিষেককে যেমন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল করা হল, তেমনি দলের সিনিয়র নেতা সুব্রত বক্সিকে করা হল সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি। সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য মুখ হিসাবে সহ-সভাপতি করা হয়েছে যশবন্ত সিনহাকে। মহিলা মুখ হিসাবে সহ-সভপতি হয়েছেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। এছাড়াও অরূপ বিশ্বাস এবং ফিরহাদ হাকিমরাও গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কে কোন দায়িত্বে থাকছেন –
সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে থাকছেন – অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
দলের সর্ব ভারতীয় সহ সভাপতির দায়িত্বে থাকছেন – যশবন্ত সিনহা, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও সুব্রত বক্সি।
কোষাধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে – অরূপ বিশ্বাসকে।
সমন্বয়কারী – ফিরহাদ হাকিম।
আর্থিক ও বিদেশ নীতি নির্ধারক – যশোবন্ত সিনহা, অমিত মিত্র সহ অন্যান্যরা।
জাতীয় মুখপাত্র – সুখেন্দু শেখর রায়।
রাজ্যসভায় মুখপাত্র – সুখেন্দু শেখর রায়।
লোকসভায় মুখপাত্র – কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁকে সাহায্য করবেন মহুয়া মৈত্র।
উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলিতে সংগঠনের দায়িত্বে – সুষ্মিতা দেব, মুকুল সাংমা, সুবল ভৌমিক।
সূত্রের খবর, এদিন কর্মসমিতির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবাইকে একসঙ্গে চলার বার্তা দিয়েছেন। কর্মসমিতির সদস্যদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এদিন কর্মসমিতির বৈঠকের আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন তৃণমূলে নেত্রী। পরে অভিষেক এবং মমতা পৃথকভাবে বৈঠক করেন ফিরহাদ হাকিম, মলয় ঘটকদের সঙ্গেও।