জুনিয়র ডাক্তারদের অনশ তিন দিন পার। শুরু হয়েছে দুর্গোৎসব। বুধবার ষষ্ঠীতে পালিত হচ্ছে বোধন। এদিন পুজো পরিক্রমার বদলে হবে ‘অভয়া পরিক্রমা’। বিচারের দাবিতে মণ্ডপে মণ্ডপে যাবেন জুনিয়র ডাক্তাররা ষষ্ঠীতে কলকাতায় ‘অভয়া পরিক্রমা’ করবেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তারা বিচারের দাবিতে মণ্ডপে মণ্ডপে যাবেন।এছাড়াও আজ সকালে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নির্যাতিতার স্মরণে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ ৭ জনের আমরণ অনশন চলছে। এরই মাঝে গতকাল মহামিছিল হয়েছিল ডাক্তারদের আহ্বানে। সেই মিছিলের পরই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয় যে ষষ্ঠীতে কলকাতা জুড়ে ‘অভয়া পরিক্রমা’ করা হবে। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নির্যাতিতার স্মরণে রক্তদান শিবিরের পরই উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতায় ম্যাটাডোরে করে আরজি কর এবং জয়নগরের নির্যাতিতাদের প্রতীকী মূর্তি নিয়ে বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে যাওয়া হবে। সেখানে হবে চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি সম্বলিত লিফলেট।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ‘আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকদের গণইস্তফা তাঁদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। এসএসকেএম এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তারেরাও ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। তাঁরাও গণইস্তফা দিতে পারেন। বড়দের এই পদক্ষেপ তাঁদের সাহস জোগাচ্ছে। আন্দোলনে পাশে দাঁড়াতেই সিনিয়েরা গণইস্তফার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু শোনা যাচ্ছে তার পর থেকেই তাঁদের উপর প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। জুনিয়ার ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। যদি সত্যি তেমন কিছু হয় তবে আন্দোলন তীব্রতর হবে। আন্দোলনকারীদের স্পষ্ট বার্তা, এটা আন্দোলন বনাম উৎসব নয়, তাঁরা আন্দোলনের উৎসব করছেন। তাঁদের অভিযোগ, সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আন্দোলনকে উৎসবের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন চলছে ধর্মতলার ধরনা মঞ্চে। সেখানে ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশন চালাচ্ছেন। তাঁদের সমর্থনে ৬ অক্টোবর কয়েকজন সিনিয়র ডাক্তারও ২৪ ঘণ্টার অনশন পালন করেন। তবে এবার রাজ্য জুড়ে আন্দোলনকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা করা হয় ধর্মতলার ধরনা মঞ্চ থেকে। আর সেই আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে ষষ্ঠীতে গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝাঁঝ আছড়ে পড়তে চলেছে।

এদিকে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছে ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। এদিকে ষষ্ঠীর দিন ৯ অক্টোবর আরজি কর কাণ্ডের দুই মাস পূর্তির দিন। এই আবহে সেদিন দেশ জুড়ে চিকিৎসকদের অনশন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে চিকিৎসকদের সর্বভাভারতীয় সংগঠন। ফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রেখে চলেছে। তাঁদের দাবির সঙ্গে তাঁরা একমত। অন্যদিকে আরজি করের পর এসএসকেএম এবং কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়র চিকিৎসকরাও গণ ইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকারকে। এরই মাঝে পশ্চিম শিশুরোগ চিকিৎসকদের অ্যাকাডেমি মধ্যরাত থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে চলে গিয়েছেন।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা এক চিঠিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমরা কাজ করার মানসিক স্থিতিতে নেই।’ চিঠিতে লেখা, ‘সরকারের ঘুম ভাঙাতে ইতিমধ্যেই সিনিয়র চিকিৎসকরা গণ ইস্তফা দিয়েছেন। সত্যি বলতে, আমাদের জুনিয়ররা যদি মুখে খাবার না তোলে, আমরাও বা খাই কি করে? আর খালি পেটে আমরা কাজ কীভাবে চালিয়ে যাব?’

আরজি কর নিয়ে গণ আন্দোলনের আবহে পুজো-উৎসবে ফেরার ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, এখনও হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করে অনেকে সাধারণ মানুষকে বলেছেন, তাঁরা যেন উৎসবে না-ফেরেন। জুনিয়ার ডাক্তাররা অবশ্য তেমন কোনও আহ্বান জানাচ্ছেন না। তাঁদের কথায়, তাঁরা সাধারণ মানুষকে বলতে পারেন না যে, আপনারা উৎসবে শামিল হবেন না। পুজো-উৎসবের সঙ্গে সত্যি সত্যিই অর্থনৈতিক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। এই উৎসব থেকে অনেকের রুজিরুটির জোগাড় হয়। তাই এতে তাঁরা কোনো ভাবে বাধা দিচ্ছেন না। কিন্তু তাঁদের সহকর্মীর সঙ্গে যা ঘটেছে, তাতে তাঁরা মানসিক ভাবে এই পুজোয় বা এই উৎসবে অংশ নিতে পারছেন না। ধর্মতলার আমরণ অনশন তার প্রতিফলন।

জুনিয়ার ডাক্তারদের বিশ্বাস, সাধারণ মানুষ উৎসবে অংশগ্রহণ করলেও প্রতিবাদ-আন্দোলন থেকে তাঁরা সরে যাবেন না। তাঁদের মনে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে উৎসবেও। ডাক্তারদের কথা অনুযায়ী মানুষ উৎসবে অংশ নিলেও তাঁদের মনে প্রতিবাদের জায়গাটা থাকবে। সেটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। পুজোর থিম হিসাবে অনেকে শিরদাঁড়ার মডেল বানিয়েছেন। যে শিরদাঁড়ার মডেল নিয়ে তাঁরা মিছিল করেছিলেন। বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে শিরদাঁড়া উপহার দিয়ে এসেছিলেন। শুধু শিরদাঁড়াই নয়, আরও নানা রকম প্রতিবাদের ছাপ কিন্তু দেখা গিয়েছে এ বারের পুজোয়। প্রশাসনের উপর ক্ষোভ থেকে অনেকে সরকারের দেওয়া অনুদান ফিরিয়ে দিয়েছেন। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যে অনেকেই বেরিয়ে আসছেন, সেটাও এই উৎসবে দেখা যাচ্ছে।