মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের ফতেহপুর জেলায় বান্দা-বাহরাইচ হাইওয়ের ধারে অবস্থিত ১৮৫ বছরের পুরোনো একটি মসজিদের একংশ ভাঙা পড়েছে। প্রাচীন ওই মসজিদটির নাম নূরী জামে মসজিদ। জেলা প্রশাসন দাবি করেছে, মসজিদের ভাঙা অংশটি বান্দা-বাহরাইচ হাইওয়ের অংশে অবৈধভাবে করা হয়েছিল। অন্যদিকে পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্ট (পিডব্লিউডি) দাবি করেছে, তারা গত ১৭ আগস্ট “অবৈধ নির্মাণের” কারণে মসজিদের কিছু অংশ সরানোর নোটিশ দিয়েছিল। জেলা প্রশাসন জানাচ্ছে, বান্দা-বাহরাইচ হাইওয়ের উপর মসজিদের একাংশ গড়ে ওঠার কারণে মসজিদ কমটিকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরও কমিটি সেই অংশ ভাঙেনি। তাই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর গণপূর্ত বিভাগ থেকে মসজিদটির ওই অংশ ভেঙে ফেলা হয়।
উল্লেখ্য, প্রশাসন যখন মসজিদটি ভাঙছে মসজিদ কমিটি তখন বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু এলাহাবাদ হাইকোর্ট থেকে সে বিষয়ে কোনো আদেশ আসার আগেই ফতেহপুর জেলা প্রশাসন মসজিদ ভাঙার পদক্ষেপ নেয়। তবে জেলা প্রশাসনের দাবি, আদালতে আবেদন জমা পড়লেও শুনানির জন্য সেই আবেদন নথিভুক্ত হয়নি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অবিনাশ ত্রিপাঠির দাবি, মসজিদের যে অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে তা তৈরি হয়েছিল তিন বছর আগে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিচারবিভাগীয় নির্দেশ ছাড়া বুলডোজার দিয়ে কোনও কাঠামো গুড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে স্পষ্ট রায় দিয়েছিল। এছাড়া দেশের সর্বোচ্চ আদালত বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশের একাধিক জায়গায় বুলডোজার চালিয়ে বিভিন্ন কাঠামো ভাঙা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। দেখা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকার আদালতের রায়কে অগ্রাহ্য করেই বুলডোজার দিয়ে বিভিন্ন কাঠামো ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার সেই প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের সামভালে মুঘল আমলের একটি প্রাচীন মসজিদে ‘সার্ভে’ বা সমীক্ষা করানোর নির্দেশকে ঘিরে স্থানীয় জনতা ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় তীব্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে এবং অন্তত চারজন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে আরও বহু মানুষ।
নূরী জামে মসজিদের একাংশ ভাঙার পর গোটা এলাকায় তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। শহরের যে মসজিদটিকে ঘিরে এই বিরোধ দেখা দিয়েছে সেটি ‘শাহী জামা মসজিদ’ নামে পরিচিত। কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলির দাবি, প্রাচীন একটি হিন্দু মন্দির ভেঙেই এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল, ওই ভবনের স্থাপত্যে নাকি এখনও তার প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনো ঐতিহাসিক প্রমান পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, মুসলিমসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে বরাবরই সরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ব্যক্তিত্ব। ২০২৩ সালের জুন মাসে আমেরিকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে মুসলিমসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদীর সেই সফরের মধ্যেই ভারত নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছিলেন আমেরিকার প্রক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি সেসময় বলেছিলেন, মুসলিমদের অধিকারকে সম্মান না করলে ভারত ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।
নূরী জামে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৩৯ সালে, আর রাস্তাটি স্থাপিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে অর্থাৎ রাস্তা তৈরি হওয়ার অনেক আগে থেকেই মসজিদটি ছিল। মসজিদ কমিটির বক্তব্য, মসজিদটি এই কারণেই অবৈধ হিসাবে বিবেচিত হবে না। এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলার শুনানি হবে ১২ ডিসেম্বর। পিটিশনে দাবি করা হয়েছে যে মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়ায় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং স্থানীয় সম্প্রদায় উভয়েরই অপূরণীয় ক্ষতি হল। মূলত ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভিন্নমতাবলম্বী এবং সাংবাদিকদের নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ সামনে এনেছে বহু মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং আমেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর। এমনকি মোদীর মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠিও লিখেছেন ৭৫ জন আমেরিকার আইনপ্রণেতা। উল্লেখ্য, মানবাধিকার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা সম্পর্কিত প্রতিবেদনে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট গত বছর ভারতে মুসলমান, হিন্দু দলিত, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এছাড়া ভারতীয় সাংবাদিকদের ওপর ভারত সরকারের নির্যাতনের বিষয়টিও সামনে আনা হয়েছিল ওই প্রতিবেদনে।