আবহাওয়ার পূর্বাভাস যেমন ছিল তেমনটাই ঘটেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই আছড়ে পড়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর দানার দাপটে লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতি হয় ওড়িশার ভিতরকণিকা, ধামারা, ভদ্রক-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। বাংলার উপকূলেও উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। তীব্র জলোচ্ছ্বাস হয় দিঘা, মন্দারমণি, বকখালি-ফ্রেজারগঞ্জেও। ভারী বৃষ্টি শুরু হয় পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়। ওই বৃষ্টির দাপট এখনও চলছে। ঘূর্ণিঝড় দানার ল্যান্ডফল ওড়িশাতে হলেও প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে কলকাতা। লাগাতার বৃষ্টিতে কলকাতার বহু অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে আছে। ঘূর্ণিঝড় দানার দাপটে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দির বাজারে ভেঙে পড়েছে একাধিক কাঁচা বাড়ি। বেশ কয়েকটি পরিবার আশ্রয়হীন। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এবং একটানা বৃষ্টির জেরে মন্দিরবাজার বিধানসভার গাববেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে। প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঠাঁই মিলেছে গৃহহীনদের।

গঙ্গাসাগর এলাকাতেও ঘূর্ণিঝড় দানার বড়সড় প্রভাব পড়েছে। সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের ফলে কপিলমুনির আশ্রম চত্বর জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কেবল কপিলমুনির আশ্রমই নয়, লাগোয়া নিচু এলাকা গুলিতেও হু-হু করে জল ঢুকে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় দানা-র প্রভাবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জুড়ে প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি দমকা ঝোড়ো হাওয়ায় গোটা জেলা বিপর্যস্ত। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি প্রবল বৃষ্টি চলছে দিঘায়, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ায় উত্তাল সমুদ্র। ঝড়ের তাণ্ডব থেকে রেহাই পেলেও ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায়। দানার তাণ্ডবে ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি। জমা জলে পড়ে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়েছে কৃষকদের। আমন ধান চাষে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মুখে পড়তে হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন এলাকার চাষীদের। দাঁতনের অধিকাংশ মানুষ ধান চাষের উপরে নির্ভরশীল। প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ বিঘা ধানের জমি জামুয়াপতি এলাকায় নষ্ট হয়েছে। ধানের ক্ষতিতে কী হবে ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না চাষিরা।

বৃহস্পতিবার রাত থেকে সমুদ্র উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব সেই সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির জেরে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের গ্রামাঞ্চল। ফসল কাটার মরশুম শুরু হতে আর মাস দেড় বাকি৷ কিন্তু, তার আগে পূর্ব মেদিনীপুরের একরের পর একর জমিতে ধানগাছ ঝড়ের দাপটে শুয়ে পড়েছে৷ মাঠের ফসল জলের নীচে নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েচছেন চাষিরা৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, ধান পাকার সময় হয়ে এসেছিল৷ ফলে, ঝড়ে গাছ শুয়ে পড়ায়, সব ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা৷ ঘূর্ণিঝড় দানার দাপটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরেও৷ এই জেলায় যতটা ঝড়ের তাণ্ডবের আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা প্রভাব পড়েনি৷ তবে, ধানের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ প্রায় আড়াইশো থেকে তিনশো কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে৷ কিছু-কিছু রাস্তায় গাছও ভেঙেছে। দু-এক জায়গায় সমুদ্রের বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে৷

দানার প্রভাব কিছুটা হলেও পড়েছে সুন্দরবনে। বিভিন্ন গ্রাম সে গোসাব হোক বা বাসন্তী, ঝড়খালি, মোল্লাখালি, বালি, সোজনে খালিতে এবারও বাঁধ ভাঙ্গার বিষয় ভয়ের মধ্যে ছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে বাদে ধস নামলেও সেভাবে বড় কিছু সুন্দরবনের কোনও নদীর নোনা জল গ্রামের মধ্যে প্রবেশ করেনি। আবার কিছু ক্ষেত্রে গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ পঞ্চায়েত হোক বিডিও হোক এই দুর্যোগের আগে তারা কোনও প্রচার করেননি অনেক গ্রামের মধ্যে যে সাবধানে থাকতে হবে। বা এলাকায় এখনও কোনও সরকারি ত্রিপল শুকনো কোন খাবার পৌঁছায়নি বিশেষ করে যারা মাটির বাড়িতে নদীর ধারে কাছে থাকে। দানা কতটা দাপট দেখাতে পারে তা নিয়ে বুধবার থেকেই তটস্থ ছিল গোটা বাংলা। বাংলার উপকূলবর্তী এলাকাগুলির উপর বাড়তি নজর রাখা হয়েছিল। তবে ঝড়ের দাপটের তুলনায় বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দাপট দেখিয়েছে টানা প্রবল বৃষ্টি। দানার দাপটে একজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে বৃষ্টির দাপট কিছুটা কমলেও আগামী কয়েকদিনও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ভারি থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দানা চলে গেলেও বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বৃষ্টি কিন্তু চলতেই থাকবে বিক্ষিপ্তভাবে। দেওয়ালির সময় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে উত্তরের জেলাগুলিতে।
