বৈশাখ যদি কবিগুরু বন্দনার মাস হয়, তবে জ্যৈষ্ঠ নিঃসন্দেহে কাজী নজরুল ইসলামের। ধূমকেতুর কবির বিপ্লব চেতনা, সংগীত সাধনা, কবিতা, গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মনোভাব- সবকিছু মাথায় রেখেই আজ বরং ‘নজরুল’ নামে এক প্রাণচঞ্চল কিশোরের দুরন্তপনার একটা গল্প আপনাদের বলি-
গ্রীষ্মকাল। দু’চারটে আম পাকতে শুরু করেছে, এমন এক দিনে চুরুলিয়া থেকে বীরভূমের শিকারপুরে কুটুমবাড়ি যাচ্ছেন নজরুল, গরুর গাড়ির সওয়ার হয়ে। সঙ্গে তাঁর আত্মীয় পরিজন।

রাস্তার ধারে বিরাট একটা পুকুর, কাকের চোখের মতো কালো জল টলটল করছে, তার পাড়ে আমবাগান। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে গাড়োয়ানকে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে যেতে বলে নজরুল চুপটি করে বসে থাকলেন পুকুর ঘাটের কাছে। সঙ্গীদের বললেন “তোমরা রওনা হও, আমি একটু পরে দুটো আম নিয়ে যাচ্ছি।”
বাগানে আম আগলাচ্ছিলো একজন মহিলা ও তার একটি ছোট্ট ছেলে। মেয়েটির স্বামী গেছে বাগানের মালিকদের আম দিতে আর ভাত খেতে। কথায় কথায় মেয়েটির কাছে সব জেনে নিয়েছেন তিনি, বাগানটা যে এই গাঁয়ের বড়োমিয়াদের সে কথাও জেনেছে দুষ্টু কিশোর ছেলেটা!
নজরুল মেয়েটিকে বললেন, “হ্যাঁগো মাসি, তোমরা বড়োমিয়াদের আম পাহারা দাও আর আমাকে চিনতে পারলে না! আমি যে বড়োমিয়ার ছোট জামাইয়ের ভাই”

মেয়েটি খানিকটা হকচকিয়ে গেল। বললো “না বাবা, চিনতে পারিনি তো, কবে এলেন?”
“এসেছিলাম আজই গো, চলে যাচ্ছি, কাল আবার ফিরবো তোমাদের গাঁয়ে। সুমুদমা (ভাইয়ের বা বোনের শাশুড়ী) বললেন, বাগান থেকে দুটো আম নিয়ে যেও, তাই এলাম। কোন্ গাছটার আম মিষ্টি বলতো?”
মেয়েটি দেখিয়ে দিতে না দিতেই টপ করে গাছে উঠে পড়লেন নজরুল। তারপর বেশ কতগুলো পাকা আম পেড়ে নিয়ে গামছায় বেঁধে বললেন “মাসি, চললাম গো।” বলেই পগারপার। দ্রুত পায়ে হেঁটেও গাড়ি ধরতে লাগলো বেশ কিছু সময়।