কলকাতা ব্যুরো: এই মনোভাবকে পেশাদারিত্বের উচ্চতা বলুন বা তাঁর প্রতিশ্রুতির প্রতি নিবেদনই বলুন, মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে কলেজ ফেস্টের শুরু থেকেই অস্বস্তিবোধ করা সত্ত্বেও পারফর্ম করেছিলেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ৷ সঙ্গীত জগৎ তথা ভারতীয়দের কাছে যিনি কে কে নামে পরিচিত ৷ মঙ্গলবার রাতে তাঁর আকস্মিক মৃত্যু সকলকে মুহ্যমান করে দিয়েছে ৷ কিন্তু, শিল্পী হিসাবে তাঁর গান এবং অনুরাগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা এক অনন্য নজির গড়লো। যার সাক্ষী হয়ে রইলো শহর কলকাতা।

গত সোমবার কে কে কলকাতায় এসেছিলেন দু’টি কলেজ ফেস্টের অনুষ্ঠানে গান গাইতে ৷ প্রথমটি ছিল সোমবার ঠাকুরপুকুর বিবেকানন্দ কলেজের এবং মঙ্গলবার গুরুদাস কলেজের ফেস্ট ৷ দক্ষিণ কলকাতার নজরুল মঞ্চে মঙ্গলবারের সেই শো’তে পারফর্ম করার পর রাতেই মৃত্যু হয় তাঁর ৷ স্টেজের আলোয় কষ্ট হচ্ছিল তাঁর ৷ গানের মাঝে বারে বারে বিরতি নিচ্ছিলেন ৷ জল খাচ্ছিলেন, তোয়ালে দিয়ে মুখও মুছছিলেন কিন্তু, তা সত্ত্বেও মঞ্চ ছাড়েননি কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ৷ একটানা ২০টি গান দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করেন। শত কষ্ট উপেক্ষা করেও দাঁতে দাঁত চেপে শো শেষ করে হোটেলে ফিরে আসেন ৷ সেখানে ফের অস্বস্তিবোধ করেন ৷ দ্রুত দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷

কে কে-এর ম্যানেজার রীতেশ ভাট সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, শো শেষ করার পরে তিনি যখন তাঁর গাড়িতে উঠলেন তখন হালকা অস্বস্তির কথা বলেছিলেন ৷ তিনি তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে ক্র্যাম্প অনুভব করছিলেন এবং আমাকে গাড়ির এসি বন্ধ করতে বলেছিলেন ৷ তিনি এও জানান, হোটেলে ফিরে নিজের ঘরে যাননি ৷ হোটেল লবিতে থাকা অনুরাগীদের সেলফির আবদার মেটান শারীরিক কষ্টকে দূরে রেখে ৷ এর পরেই হোটেলে ঘরে সোফায় বসতে গিয়ে পড়ে যান কেকে ৷
কেকে’র দায়বদ্ধতা এবং পেশাদারিত্ব নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, কেকে মঙ্গলবার সন্ধেয় তাঁর পারফর্মেন্সের সময় অস্বস্তিবোধ করছিলেন। তিনি ক্রমাগত স্পটলাইটগুলি বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করছিলেন এবং বিরতিতে তিনি বিশ্রাম নিতে মঞ্চের পিছনে যান। তবে, এত শারীরিক অস্বস্তি সত্ত্বেও একবারও তিনি শো ছেড়ে চলে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি।

তবে, কেকে’র ঠোঁট এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে ৷ তাই নিউমার্কেট থানায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ৷ সেই মতো পুলিশের তরফে এসএসকেএম হাসপাতালে কেকে’র ময়নাতদন্ত করানো হয় ৷ তবে, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই তিনি মারা গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে ৷ তবে, পূর্ণাঙ্গ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সামনে এলেই মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ৷ তার জন্য কমপক্ষে ৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানা গিয়েছে।