কলকাতার মঞ্চে গান গাইতে এলেন জনপ্রিয় শিল্পী, কাতারে কাতারে ভক্ত হাজির হলেন প্রিয় শিল্পীর গান শুনতে, ভিড়ে ঠাসা দর্শকের মাঝে অনুষ্ঠান শেষ করে গাড়ি করে হোটেলে ফেরার পথেই অসুস্থ বোধ করেন তিনি। হোটেলে পৌঁছে আরও অসুস্থ হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
গান গাইতে এসে যে তাঁকে না ফেরার দেশে চলে যেতে হবে সেকথা কি দুঃস্বপ্নেও কখনও ভেবেছিলেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে KK ( #KK )। কিন্তু তাঁর জীবনে তেমনটাই ঘটল। মঙ্গলবার কলকাতার নজরুল মঞ্চে গানের অনুষ্ঠান করতে করতেই অসুস্থ বোধ করছিলেন, তারপরও দর্শকদের আবদারে গেয়ে যাচ্ছিলেন একের পর এক গান। কিন্তু প্রচন্ড গরমে তাঁকে খুব ঘামতে দেখা যাচ্ছিল, তিনি অস্বস্তি বোধ করছিলেন, জল খাচ্ছিলেন, গানের মাঝে বারবার তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছছিলেন, তিনি। এসব হয়ত উদ্যোক্তারা খেয়াল করেন নি অথবা গায়ে মাখেন নি। অথচ একটা সময় গরম কমাতে শিল্পী নিজেই উচ্চ তাপমাত্রার স্পটলাইট গুলি বন্ধ করার অনুরোধ করেন।প্রসঙ্গত, অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কেকে-এর সামনেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের একাংশ ফেটে যায়।
জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীর এমন অকাল প্রয়াণ কেউই মেনে নিতে পারছেন না। তার মৃত্যুর জন্য উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে নজরুল মঞ্চের ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন সবাই। অনুষ্ঠান মঞ্চে বিশৃঙ্খলা থেকে চূড়ান্ত অব্যবস্থা- সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাধারণ মানুষের মুখে একই অভিযোগ।এমনকি পরিবারের পক্ষ থেকে নিউ মার্কেট থানায় এফআইএর দায়ের হয়েছে এবং জোরদার তদন্ত শুরু করেছে নিউ মার্কেট থানার পুলিশ।
কি হয়েছিল গতকাল সন্ধ্যায়? কাজ করছিল না নজরুল মঞ্চের বাতানুকূল ব্যবস্থা। নজরুল মঞ্চের এক পুরনো কর্মীর বক্তব্য অনুযায়ী, অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই ভিড় ছিল খুব। কেকে-র জনপ্রিয়তার টানে নজরুল মঞ্চের আসন সংখ্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি দর্শক হাজির হয়েছিল। প্রিয় গায়কের গান শুনতে অনেকে পাঁচিল টপকে জোর জবরদস্তি ঢোকেন। পড়ে গিয়ে এক দর্শকের হাত-পা কেটে যায়। সূত্রের খবর, খবর পেয়ে এক সময় রবীন্দ্র সরোবর থানার পুলিশও নাকি হাজির হয়।
প্রশ্ন নজরুল মঞ্চের আসন সংখ্যা কিংবা ক্যাপাসিটি কত আর কত মানুষকে ফাইনালি এন্ট্রি দেওয়া হয়েছিল? অনুষ্ঠান চলাকালীন কত টনের এসি কাজ করছিল? সেটা কি উপস্থিত দর্শকের পক্ষে পর্যাপ্ত ছিল? অনুষ্ঠান চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে অক্সিজেন লেভেল কি ছিল? নজরুল মঞ্চের আসন সংখ্যা ২৪৮২, গতকাল সন্ধ্যায় ভিড় হয়েছিল ৮০০০। অতিরিক্ত ভিড়ে খুলে দিতে হয়েছিল প্রেক্ষাগৃহের দরজা। ৭টা দরজার মধ্যে ৫টাই খোলা ছিল। এসি বন্ধ ছিল না। কিন্তু দরজা খোলা থাকার কারণে এসি কাজ করছিল না।

সংবাদমাধ্যমকে কলকাতার মেয়র জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যায় নজরুল মঞ্চের সব ব্যবস্থা স্বাভাবিক ছিল না। বরং উপচে পড়া ভিড়ে তৈরি হয়েছিল বিশৃঙ্খলা। যার জেরে প্রেক্ষাগৃহের এসিও ঠিক মতো কাজ করছিল না। কারণ ‘কেকে এত জনপ্রিয় যে ছেলে মেয়েরা তাঁকে ছেঁকে ধরে। যে কারনে গতকালই কেএমডিএ-র তরফে বলা হচ্ছিল, নজরুল মঞ্চ আর কলেজকে দেবেন না। ছেলেমেয়েরা সিটের ওপর উঠে নাচানাচি করে সিটগুলো ভেঙে দেয়। তবে মেয়র নজরুল মঞ্চের বাতানুকূল ব্যবস্থাকে শংসাপত্র দিলেও অতিরিক্ত ভিড়ে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে মেনে নিয়েছেন। ‘কিন্তু এসির তো একটা লিমিটেশন রয়েছে। চারগুণ মানুষ ঢূকে পড়লে তো স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের কষ্ট হবে।
কিন্তু এত লোক ঢুকে পড়লো কিভাবে? কোথায় ছিলেন উদ্যোক্তারা আর কোথায় ছিলেন কলকাতা পুলিশ? যদিও ভিড় ঠেকাতে কলকাতা পুলিশ যথারীতি ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকাই পালন করেছে বলেই মেয়র স্বীকার করেছেন কিন্তু তিনি বলেন, ‘পাঁচিল টপকে ছেলে মেয়েরা ঢুকেছে, পুলিশ তাদের কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? মানুষের গান শোনার উচ্ছ্বাস হলে হই হই করে দৌড়ে আসে। তখনতাকে কে নিয়ন্ত্রণ করবে? গান শুনতে চাইলে পুলিশ তো লাঠিচার্জ করতে পারে না। একটা মানুষ গান শুনতে চাইছে তাকে কি পুলিশ লাঠি দিয়ে পেটাবে? ঠিকই তো প্রিয় গায়কের গান শুনতে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসবে, আড়াই হাজার মানুষের জায়গায় চার গুণ মানুষ ঢুকে পড়ে গরমে দগ্ধ হবে, শ্বাস কষ্টে ভুগবে, পুলিশ কি তাতে বাধা দিতে পারে, এতো আর গণতন্ত্রের দাবিতে মিছিল নয় যে পুলিশ লাঠি চালিয়ে মানুষের হাত পা ভেঙে দেবে। কিন্তু গতকাল যদি ওই বদ্ধ প্রেক্ষাগৃহে কয়েকশো মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়তেন?
4 Comments
পুলিশ কি করে নিয়ন্ত্রণ করবে ? কাদের করবে ? ওরা কোন কলেজের ? ইউনিয়ন কারা করছে তারা কি বেলেল্লাপনা একটু করবে না ? সুতরাং পুলিশ কিছু করতে পারবেনা ওরা ভয় পায় গুলি বন্দুক বারুদ আর মাসলপ্যাক ঝান্ডাবাহী ছাত্রসমাজকে
বাতানুকূল ব্যবস্থা আর অতিরিক্ত ভিড় যেমন দায়ী তার থেকেও বেশি দায়ী উদ্যোক্তা আর মঞ্চ ব্যবস্থাপকরা। আপনার লেখার মধ্যেও তা স্পষ্ট। আর ওই যে কে একটা কি বলছে ওসব ঝামেলা সব দুর্ঘটনার মধ্যেই এসে পড়ে ওসব ঝামেলা সরাতে ঝাঁটাও লাগেনা। কিন্তু অনুষ্ঠান উদ্যোক্তা আর মঞ্চ ব্যবস্থাপকরা কি শাস্তি পাবে, এ রাজ্যে সব কিছুই তো দুদিনের হুজুগ, কাল আরেকটি খুন বা চুরির খবর মিলবে শিল্পী কেকে হারিয়ে যাবে।
উপস্থিত বড় মাঝারি ছোট মাপের নেতারা কেন জনতাকে সামলাতে চেষ্টা করল না,বরং মঞ্চের উপর উঠে বিশৃঙ্খলা করলেন,অন্য কোনও শিল্পী হলে অস্বীকার করতেন গাইতে। আজ অনুপম রায় র অনুষ্ঠান আছে,মঞ্চ দখল করলে তিনি গাইবেন বলে মনে হয় না।
দূরের হাসপাতালে না নিয়ে,কাছের হাসপাতালে নিলে,হয়তো বেঁচে যেতেন (কুণাল সরকার)
এমন ও হয় ?