কলকাতা ব্যুরো: তৃণমূলে যোগ দিয়েই বড় প্রাপ্তি। দলের রাজ্য সহ-সভাপতি হলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলের বৈঠকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘাসফুল শিবিরের সদস্য হলেন তিনি।
এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জয়প্রকাশ বলেন, রাজনৈতিক মঞ্চ ও মাঠে অনস্বীকার্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হচ্ছেন মেসির সমান। কোনও অস্বীকারের জায়গা নেই। আমি আগে কংগ্রেস করতাম। মাঝে আমি বিজেপিতে যোগদান করি। সেই সময় বিজেপির ৪ থেকে ৫ শতাংশ মত ভোট ছিল। সেদিক থেকে আমাকে সুযোগসন্ধানী বলতে পারবে না। আমি তৃণমূলে এসেছি বাংলার অস্মিতাকে বজায় রাখা, বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এক অসামান্যা নারীর সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি।
তিনি আরও বলেন, তৃণমূলের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না তা এখন বলার কোনও মানে নেই। আমি বিজেপি পার্টি ছেড়ে আসিনি। দলই আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল। আমি আমাদের নেতাদের সঙ্গে মিটিং করেছি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছি। কারা কোথায় কী সিদ্ধান্ত নেবেন তা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি যোগ দেওয়ার পরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে পদ আমায় দিয়েছে এর জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই। নিয়ম কানুন জলাঞ্জলি দিয়ে কাজ করছে বিজেপি। ভিক্ষাপত্রের ওপর নির্ভর করে রাজনৈতিক জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না।
বেশ কিছুদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল জয়প্রকাশ মজুমদারের। প্রকাশ্যে দলবিরোধী মন্তব্য করছিলেন তিনি। যার জেরে শোকজের মুখে পড়তে হয় জয়প্রকাশকে। দলের সিদ্ধান্তে অবশেষে তাঁকে সাময়িক বরখাস্তও করে বিজেপি। যার জেরে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়তে থাকে জয়প্রকাশের। একাধিকবার গোপনে শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। যার জেরে কানাঘুষো শুরু হয়েছিল যে, বিক্ষুব্ধ বিজেপিরা একজোট হচ্ছে। জয়প্রকাশের দলবিরোধী মন্তব্য উসকে দিয়েছিল তাঁর বিজেপির সঙ্গে বরাবরের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করা সময়ের অপেক্ষা। প্রথম জীবনে কংগ্রেস, পরে তৃণমূল, তারপর বিজেপি হয়ে আবার ঘাসফুল শিবিরেই ফিরলেন জয়প্রকাশ। তবে জয়প্রকাশ মজুমদারের ঘর ওয়াপসির কারনে আরও বিক্ষুব্ধ নেতারা কি তৃণমূলের পথে পা বাড়াতে পারেন? বাড়ছে সেই জল্পনা।
মঙ্গলবার নজরুল মঞ্চে তৃণমূলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে যোগ দিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দেন জয়প্রকাশ। এ প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, আনুষ্ঠানিক যোগদান হলেই পুরোপুরি বহিষ্কার করা হবে জয়প্রকাশকে।
উল্লেখ্য, সোমবারই দলের বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার। সেখানেই বিজেপি নেতৃত্বের প্রতি বার্তা দেন বিজেপি সাংসদ। বলেন, যেভাবে কমিটি তৈরি হয়েছে, তাতে যোগ্যতা নয় গুরুত্ব পেয়েছে কোটা। পুরনোদের একেবারে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। সাংসদ, বিধায়কদের সংগঠন থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে ওঠা ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগকে কিছুটা উড়িয়ে দিয়ে লকেট দাবি করেন, শুধু সন্ত্রাস-সন্ত্রাস বললেই হবে না। নিজেদের দুর্বলতাটাও স্বীকার করতে হবে। এই মন্তব্যের পর লকেটকে খোঁচাও দিতে ছাড়েননি বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
তবে জয়প্রকাশের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে লকেট জানিয়েছেন, তিনি বুঝিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির এই পুরনো সৈনিক।