কলকাতা ব্যুরো: লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ফল ভালো হতেই তড়িঘড়ি ডাক পড়েছিলো প্রশান্ত কিশোরের। ভোটকুশলী হিসেবে সেই ২০১৯ থেকেই মমতার সঙ্গে রয়েছে পিকে-র সংস্থা আইপ্যাক। বিধানসভা নির্বাচন সহ পরের ভোটগুলিতে ভালো ফলও করেছে তৃণমূল। কলকাতা পুর নির্বাচনেও সব ঠিক ছিল। কিন্তু ১০৮ পুরসভার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হতেই বিচ্ছেদের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। সেই ’জোট’ কি এবার তবে ভাঙতে চলেছে? পুরভোটের প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর তৃণমূলের অন্দরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষাপটে আচমকাই এই প্রশ্ন জোরালোভাবে উঠতে শুরু করেছে।

সোমবার অখিলেশ যাদবকে সমর্থন করতেই উত্তরপ্রদেশ রওনা হলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এদিন আইপ্যাক প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতেই কিছুটা সুর চড়িয়েই মমতা বলেন, এ সব নিয়ে কোনও কোনও প্রশ্ন করবেন না। এটা দলের আভ্যন্তরীণ বিষয়।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত বক্সী, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যরা পুরভোটের জন্য যে প্রার্থীতালিকা প্রকাশ করেছিলেন, তার সঙ্গে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রার্থী তালিকার মিল না থাকা নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পুরো দায় ভোট কুশলী সংস্থা আইপ্যাকের ঘাড়ে চাপিয়েছে তৃণমূলের একাংশ। আর এর জেরেই আইপ্যাক ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে ফাটল চওড়া হতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, ১০৭টি পুরসভার প্রার্থী তালিকা নিয়ে আইপ্যাকের উপর ক্ষুব্ধ তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশ। অন্যদিকে আবার আইপ্যাক ক্ষুব্ধ কিভাবে নির্দিষ্ট নীতি ঘোষণা করেও সেই নীতির বাইরে গিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে। গত দু’-তিন দিন ধরে প্রার্থীতালিকা ঘিরে যে বিক্ষোভ হচ্ছে আর যেভাবে বারবার আইপ্যাকের দিকে আঙুল উঠছে, তাতে তাদের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে বলে ওই সংস্থা মনে করছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল ও আইপ্যাকের মধ্যে সম্পর্ক কি ছিন্ন হবে, আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।

তবে এই ঘটনায় বিরক্ত প্রশান্ত কিশোর নিজেও। যেভাবে দলের শীর্ষস্তরের নেতা ফিরহাদ হাকিম পাসওয়ার্ড বিতর্ক তুলে আইপ্যাকের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন, যেভাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং প্রশান্ত কিশোরের ফোনালাপের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে চলে এসেছে, সেটাকে আর ভালোভাবে নিচ্ছেন না পিকে। যদিও তিনি সংবাদমাধ্যমে এখনই এই নিয়ে কিছু বলেননি। তবে শোনা যাচ্ছে ঘনিষ্ঠমহলে নাকি তিনি বলেছেন, বাংলা, ত্রিপুরা আর মেঘালয়ের দায়িত্ব নিয়ে তিনি কাজ করতে চান না। অন্যদিকে, তৃণমূলের তরফ থেকেও এর সত্যতা নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু আইপ্যাক-কে নিয়ে আসার পিছনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই ছিলেন সর্বেসর্বা। আর সেই কারনেই তৃণমূলের একাংশ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে পিকে যা করেছে তাতে আর কেউ কিছু না জানলেও অভিষেক যে একেবারে অন্ধকারে ছিলেন এটা একেবারেই হওয়ার নয়।

পাশাপাশি পুরভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীতালিকা নিয়ে জেলায় জেলায় দলের মধ্যে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা নিয়ে সোমবার অবশেষে মুখ খোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সোমবার উত্তরপ্রদেশ যাওয়ার আগে দমদম বিমানবন্দরে তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, সুব্রত বক্সী ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া তালিকাই ফাইনাল ৷ তিনি আরও বলেন, সবাইকে খুশি করা সম্ভব না৷ তালিকা নিয়ে আর কোনও বিভ্রান্তি নেই।
এছাড়া মমতা এদিন বলেন, আমি চাই অখিলেশ জিতুক, সমাজবাদী পার্টি জিতুক উত্তরপ্রদেশে ৷ বিজেপি হারুক ৷ অখিলেশ আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, সপার হাত শক্ত করতে যাচ্ছি। অখিলেশের পাশে সবার দাঁড়ানো উচিত ৷ পাশাপাশি কংগ্রেসকে কটাক্ষ করে মমতা এদিন বলেন, সবাই এক হয়ে লড়লে ভাল হতো, কিন্তু হল না, আমরা চেষ্টা করেছিলাম ৷ ভোট কেটে তো লাভ নেই ৷ বারাণসীতেও তিনি প্রচারে যাবেন বলে মমতা এদিন জানিয়েছেন ৷ বলেছেন, লোকসভা ভোটে পঞ্জাবেও তৃণমূল লড়বে ৷

তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন সাফ জানান, কারও জমি জোর করে নিয়ে বিমানবন্দর তৈরি করা হবে না। এ বিষয়ে তিনি মালদহ, বালুরঘাট, কোচবিহার বিমানবন্দরের কথা উল্লেখ করে জানান, এইসব বিমানবন্দর তো তৈরি, কিন্তু পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় অনুমোদন দরকার। রাজ্যে নতুন বিমানবন্দর তৈরির জন্য কোনও কৃষকের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করা হবে না।