কলকাতা ব্যুরো: কোন পরিবেশে বেড়ে ওঠে বিরল প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুড় বাস্কা’? কীভাবে করে বংশবিস্তার? এই বিরল প্রজাতির কচ্ছপের জীবনলিপি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে নতুন প্রযুক্তি এলো দেশে। ভারতে এই প্রথমবার বিরল প্রজাতির কচ্ছপের দেহে বসলো আমেরিকা থেকে আনা আধুনিক প্রযুক্তির জিপিএস মেশিন। যা তাদের সম্পূর্ণ জীবনচক্রের হদিশ দেবে বলে জানা গিয়েছে।
সুন্দরবন তথা উপকূলীয় অঞ্চলের বিরল প্রজাতির কচ্ছপ হলো বাটাগুড় বাস্কা। এই প্রজাতির প্রজনন বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। বুধবার সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে ছাড়া হল ১২টি পূর্ণবয়স্ক এবং ৩৭০টি বাচ্চা কচ্ছপ। এতদিন তাদের সজনেখালি ম্যানগ্রোভ ইন্টারপ্রেটর সেন্টার সহ বিভিন্ন ক্যাম্প অফিসের বিশেষ পুকুরে রাখা হয়েছিল। বুধবারের এই বিশেষ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন টাইগার ফিল্ডের ডিরেক্টর তাপস দাস, ডেপুটি ডিরেক্টর জাস্টিন জোন্স এবং টার্টেল সারভাইভাল অ্যালিয়েন্স প্রোগ্রামের কর্মীবৃন্দ।
কচ্ছপগুলি যাতে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে সেই উদ্দেশে আলাদা একটি পুকুর বানানো হয়েছে। যেখানে কয়েক বছর ধরে এই কচ্ছপগুলি রাখা হয়েছিল। পুকুরগুলিতে জোয়ার-ভাঁটার জল ঢুকতে ও বেরতে পারত। প্রায় দু’বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের শরীরে আমেরিকা থেকে আনা জিপিএস ট্র্যাকিং সিস্টেম মেশিন বসানো হয়েছে। জানা গিয়েছে, দু’বছর ধরে মেশিন কাজ করবে।
এ বিষয়ে ব্যাঘ্র প্রকল্পের অতিরিক্ত ফিল্ড ডিরেক্টর জাস্টিন জোন্স বলেন, এই মেশিনগুলো নোনা জলে নষ্ট হবে না। আধুনিক প্রযুক্তির এই মেশিন সেভাবেই বানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, এই বিরল প্রজাতির কচ্ছপের বাসস্থান কেমন, কীভাবে বংশবিস্তার করতে সক্ষম, কীভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় সেটাও জানা সম্ভব হবে। দেশে প্রথমবার এভাবে কচ্ছপের ওপর এই গবেষণা চালানো হলো।
সুন্দরবনে ৯ বছর ধরে এই বিরল প্রজাতির বাটাগুড় বাস্কা কচ্ছপকে প্রজনন করিয়েছেন ব্যাঘ্র প্রকল্পের আধিকারিকরা। প্রথম পর্বে সাতটি পুরুষ এবং তিনটি মহিলা কচ্ছপ নিয়ে শুরু হয় এই ‘বাটাগুড় বাস্কা’ প্রজনন পর্ব। এর আগেও বেশ কিছু কচ্ছপকে প্রজনন করিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রা জানার জন্য মেশিন বসানোর পরিকল্পনা আগে কখনও গ্রহণ করা হয়নি।
মূলত এই প্রজাতির কচ্ছপ সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর এলাকা এবং ওড়িশা উপকূলে সবথেকে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। মৎস্যজীবীদের জালে এবং কিছু মানুষের শিকারের ফলে এই কচ্ছপ আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হওয়ার পথে। পরবর্তীতে বনদপ্তর সিদ্ধান্ত নেয় এই কচ্ছপের প্রজনন বাড়ানোর এবং তা সফলভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।