হর কি পউরিতে ১৪ জানুয়ারি রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত নাইট কার্ফু জারি।ফলে সংক্রান্তির মাহেন্দ্রযোগে পুণ্যস্নানের সুযোগ পাবেন না ভক্তরা। প্রতিবছর লাখ লাখ পুণ্যার্থী হরিদ্বার-হৃষীকেশের গঙ্গায় পুণ্য সঞ্চয়ের আশায় ডুব দেন। এ বছর প্রশাসন করোনার সতর্কতায় মকর পুণ্যস্নান বন্ধ রেখেছে।
তবু সাগরসঙ্গম সাধুসন্ত, পুণ্যকামী মানুষজনের ভিড়ে ঠাসা।কাকভোর থেকেই শুরু হবে পুণ্যস্নান। লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়েও নাকি কোভিড স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে। কলকাতা উচ্চ আদালতের ৩ জনের কমিটি তীক্ষ্ণ নজরদারি চালাচ্ছে। কেবল গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গা তীরবর্তী সমস্ত গ্রাম-শহরের মানুষ গঙ্গাস্নান করে পুণ্য অর্জন করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। এটাই ব্রাহ্মণ্য তন্ত্রের বিধান তাই মকর সংক্রান্তিতে ‘গঙ্গাস্নান’ আবশ্যক। গঙ্গা না থাকলে স্থানীয় যে কোনও নদী, খাল, জলাশয়ে ডুব দেরে মন গঙ্গা মনে করলেই পুণ্যার্জন হবে।
জ্যোতির্বিদ্যা অনুসারে দশম ঘর বা মকরের ঘরে সূর্যের প্রবেশকে বলে মকর সংক্রান্তি। মহাকাশে এই পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীতে বড় ও উষ্ণ দিনের সূচনা হয়। সূর্যের বেশিক্ষণ অবস্থান ফসল পাকার জন্য জরুরি। এই দিন থেকেই সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু এবং শীত বিদায় নিতে শুরু করে।

সাধারণত ইংরেজি ক্যালেন্ডারের ১৪ জানুয়ারি বা আগে পরের একটি দিনহয় এই তিথি। বঙ্গাব্দ অনুযায়ী পৌষ মাসের শেষ দিনে মকর সংক্রান্তি পালিত হয়। এই সময় একদিকে শীতের দিন ফুরতে শুরু করে, সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়আর ঘরে ঘরে নতুন ফসল ওঠে। বাংলার পৌষ সংক্রান্তি, তামিলনাড়ুতে পোঙ্গল, কর্ণাটকে মকর সংক্রমনা বা ইল্লু বিল্লা, অন্ধ্রে আর কেরলে মকর সংক্রান্তি, রাজস্থান ও গুজরাতে উত্তরায়ণ, মহারাষ্ট্রে তিলগুল, মধ্যপ্রদেশে সুকরাত, কাশ্মীরে শায়েন-ক্রাত, পঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, জম্মুতে লোহরি বা মাঘী, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় খিচড়ি পরব, আসামে ভোগালি বিহু। রাজ্য ও ভাষা ভেদে যে নামেই পালিত হোক না কেন আসলে তা পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি উৎসব।কোথাও লক্ষ্মীর আরাধনা, কোথাও সূর্যের, কোথাও আবার পূজিত হন সরস্বতী। পুজো যারই হোক না কেন প্রসাদের উপকরণ- নতুন ফসল।

প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়ার যে সব জায়গায় ভারতীয় সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে যেমন নেপালে এই দিনটি মাঘে সংক্রান্তি, থাইল্যান্ডে সংক্রান এবং কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান, লাওসে পি মা লাও, মায়ানমারে থিংগিয়ান। এ ছাড়াও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে এবং ভারত মহাসাগরীয় বহু দ্বীপেও মকর উৎসব পালিত হয়।তবে বাঙালির কাছে পৌষ সংক্রান্তি, পৌষপার্বণ বা নবান্ন মূলত নতুন ফসলের উৎসব। এই সময় নতুন ধান, নতুন অন্ন ওঠে গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে।বাঙালির কাছে তাই এই উৎসব ‘নবান্ন’। পৌষ সংক্রান্তিনতুন শষ্যের উৎসব। খেতের পাকা ধান প্রথম ঘরে ওঠা ঘিরে এই উৎসব। পাকা ধানের শীষ দিয়ে কিছু আচার-অনুষ্ঠান হয়। দু’তিনটি খড় লম্বা করে পাকিয়ে তার সঙ্গে ধানের শীষ, মুলো, সরষে ফুল, আমপাতা ইত্যাদি বেঁধে ‘আউনি বাউনি’ তৈরি হয়। সেই ‘আউনি বাউনি’ ধানের গোলা, খড়ের চাল, ঢেঁকি, বাক্স-প্যাঁটরায় গুঁজে দেওয়া হয়।

এই সময়ে কেবল নতুন ধানই নয়, খেজুর গাছের রস দিয়ে তৈরি হয় নতুন গুড়। বাংলায় পৌষ পার্বণের প্রধান পর্ব হল পিঠে।নতুন চালের গুঁড়ো, নতুন গুড়, নারকেল আর দুধ দিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠে। পৌষ পার্বণের আরেক নাম তাইপিঠে পার্বণ। পৌষ মাসের শেষ দিনে শুধু গ্রাম নয় শহরের প্রায় সব বাড়িতেই পিঠে হয়।

প্রাচীনকাল থেকে এই উৎসব চলে আসছে। পুরাণেও এর উল্লেখ আছে। পুরাণ অনুযায়ী, মকর সংক্রান্তিতেই মহাভারতের পিতামহ ভীস্ম শরশয্যায় ইচ্ছামৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। অন্য মতে, এই দিনই দেবতাদের সঙ্গে অসুরদের যুদ্ধ শেষ হয়েছিল।বিষ্ণু অসুরদের বধ করে তাঁদের কাটা মুন্ডু মন্দিরা পর্বতে পুঁতে দিয়েছিলেন, তাই মকর সংক্রান্তির দিনই সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাস হয়ে শুভ শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে মানা হয়। ভিন্ন মতে, এই দিন সূর্য নিজের ছেলে মকর রাশির অধিপতি শনির বাড়ি এক মাসের জন্য ঘুরতে গিয়েছিলেন। তাই এই দিনটিকে বাবা ছেলের সম্পর্কের একটি বিশেষ দিন হিসাবে ধরা হয়।
পদার্থ বিজ্ঞান অনুযায়ী, সূর্যের গতি- উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণায়ণ। ২১ ডিসেম্বর সূর্য উত্তরায়ন থেকে দক্ষিণায়নে প্রবেশ করে। এই দিন রাত সবথেকে বড় হয় আর দিন সবথেকে ছোট হয়। এর পর থেকে দিন বড় আর রাত ছোট হতে শুরু করে। মাঘ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত ছ’মাস উত্তরায়ণ। আবার শ্রাবণ থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত ছ’মাস দক্ষিণায়ণ। পৌষ মাসের সংক্রান্তিকেই বলা হয় মকর সংক্রান্তি।
1 Comment
এই করোনাকালে বা সংক্রমণের ভয়ংকর সময়ে গঙ্গাস্নান করে মকর সংক্রান্তি পালন কি খুব যুক্তিযুক্ত?