কলকাতা ব্যুরো: দেশজুড়ে করোনার লাগামছাড়া সংক্রমণ। শুক্রবারের চেয়ে শনিবার একলাফে ২১ শতাংশেরও বেশি মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। হু হু করে বাড়ছে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যাও। সংক্রমণে রাশ টানতে রাজ্যে-রাজ্যে জারি হয়েছে কড়া বিধিনিষেধ। তবুও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া আটকানো যাচ্ছে না। একাধিক রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি বিপজ্জনক আকার নিয়েছে।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে তোলপাড় গোটা দেশ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশজুড়ে নতুন করে ১ লক্ষ ৪১ হাজার ৯৮৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। একদিনে দেশে করোনামুক্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ৮৯৫ জন। দেশে এই মুহূর্তে করোনা সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭২ হাজার ১৬৯।

শুক্রবার পর্যন্ত ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ১২ হাজার ৭৪০ জন করোনামুক্ত হয়েছেন। দেশে এই মুহুর্তে করোনা পজিটিভিটি রেট বেড়ে ৯.২৮ শতাংশ। দেশ জুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৮৫ জনের। করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪৬৩। শুক্রবার পর্যন্ত ১৫০ কোটিরও করোনা টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যে-রাজ্যে বিদ্যুৎ গতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। সংক্রমিতের তালিকায় সবচেয়ে ওপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র। তালিকায় এরপরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। একদিনে বাংলায় ১৮ হাজারে বেশি মানুষ গতকাল করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়াও দিল্লি, তামিলনাড়ু, কর্নাটক-সহ একাধিক রাজ্যের সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। সংক্রমণে রাশ টানতে এই রাজ্যগুলিতে একগুচ্ছ বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। তবুও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এড়ানো যাচ্ছে না। এদিকে দেশে বাড়ছে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যাও। এখনও পর্যন্ত দেশে ওমিক্রন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩,০৭১। যদিও ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১,২০৩ জন।

অন্যদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশজুড়ে জারি রয়েছে টিকাকরণ অভিযান। ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে ১৫-১৮ বছর বয়সীদের টিকাকরণ। আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে করোনার বুস্টার বা সতর্কতামূলক ডোজের প্রয়োগ। স্বাস্থ্যকর্মী ও সামনের সারির কোভিড যোদ্ধারা পাবেন এই ডোজ। এছাড়াও ষাটোর্ধ্ব কোমর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের দেওয়া হবে করোনার সতর্কতামূলক ডোজ। ৯ মাস আগে যাঁরা করোনা টিকার দ্বিতীয় ডোজটি পেয়েছেন তাঁদেরই আগে এই বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে।
পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮,৮০২ জন, মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। কলকাতায় একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩৩৭, শুক্রবার যা ছিল ৭৪৮৪ জন। এটাই অবশ্য কোভিড গ্রাফের শীর্ষে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা এবং পশ্চিম বর্ধমান। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনার কবল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮১১২ জন, যা দৈনিক আক্রান্তের তুলনায় অনেক কম। বাড়ছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও। এই মুহূর্তে রাজ্যে করোনা অ্যাকটিভ কেস ৬২ হাজারের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩ হাজার ৫১৮ টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯.৬০ শতাংশ রিপোর্টই পজিটিভ।

সংক্রমণের নিরিখে কলকাতা সবচেয়ে এগিয়ে। এরপরই উত্তর ২৪ পরগনা। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পজিটিভ ৩২৮৬ জন। তারপর রয়েছে পশ্চিম বর্ধমান। একদিনে এই জেলায় মহামারীতে সংক্রমিত ১০০৬। প্রসঙ্গত, আগামী ২২ তারিখ এই জেলার আসানসোল পুরনিগমে ভোট। প্রচারে জমায়েতের কারণে এই সংক্রমণ বৃদ্ধি কি না, তা নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্যমহল। করোনাযুদ্ধে সবচেয়ে এগিয়ে কালিম্পং। এখানে একদিনে নতুন করে সংক্রমিত ১৩ জন।