কলকাতা ব্যুরো: সাগর মেলা অনুষ্ঠিত হবে কিনা তা ঠিক করতে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কোর্টেই বল ঢেলে দিলো হাইকোর্ট। সরাসরি সাগর মেলা বন্ধে হাইকোর্টহস্তক্ষেপ করেনি। ফলে আইনত সাগর মেলা চালানোয় কোন বাধা নেই। কিন্তু হাইকোর্ট একগুচ্ছ শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে বর্তমান করোনা আবহে ওই মেলা করার ক্ষেত্রে। একইসঙ্গে বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে রেখে তিন সদস্যের একটি কমিটিও করে দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালতের বেঁধে দেওয়া শর্ত যদি মানা না হয়, সে ক্ষেত্রে ওই কমিটি, মেলা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করতে পারবে রাজ্যের কাছে।

আর যে শর্ত গুলি দিয়েছে হাইকোর্ট, তাতে কিছুটা রাজ্যের নিজের তৈরি শর্ত বুমেরাং হয়ে ফিরেছে তাদের কাছে। হাইকোর্টের বক্তব্য, রাজ্য সরকার গত ২ জানুয়ারি করোনা আবহে যে নতুন বিধিনিষেধের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল তা মানতে হবে। সেই বিজ্ঞপ্তির ১০ নম্বর ধারায় রাজ্য সরকার বলেছে, বর্তমান করোনা আবহে ৫০ জনের বেশি লোক নিয়ে কোন ধর্মীয় জমায়েত করা যাবে না। ফলে সাগর মেলার পাঁচ লক্ষ পুণ্যার্থীর জায়গায় কি করে ৫৯ জনকে নিয়ে মেলা করা সম্ভব, সেই প্রশ্নই উঠে গিয়েছে।
আইনজীবীরা মনে করছেন, একইসঙ্গে হাইকোর্ট গঠিত কমিটিতে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বসিয়ে দেওয়ায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। তিনজনের ওই কমিটিতে রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা তার কোনো প্রতিনিধি থাকবেন এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব বা তার কোনো প্রতিনিধি ওই কমিটিতে থাকবেন। একইসঙ্গে হাইকোর্ট রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজ্যের সব সংবাদ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে সাগর মেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি সমস্যা হতে পারে, সেগুলো স্মরণ করিয়ে দেবেন। এককথায় বর্তমান করনা আবহে মানুষ যাতে ভিড়ে না যান, তাদের নিরুৎসাহী করতে হবে বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যকে।

আর এই পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের একাংশের বিস্ময়, যদি হাইকোর্ট রাজ্যকে ওই ভিড়ের ব্যাপারে সতর্ক করতে প্রচারের জোর দিতে বলে, তাহলে আদালত সরাসরি মেলা বন্ধের নির্দেশ দিলে তা অনেক বেশি মানুষ মানতে বাধ্য হতেন। তারা উদাহরণ দিয়েছেন, যেভাবে গতবছর বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিশন বেঞ্চ শেষ মুহূর্তে দুর্গাপুজার মন্ডপে ঢোকা নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন, তা প্রায় পুরোটাই মেনেছিল মানুষ।ফলে হাইকোর্ট এই নির্দেশ দিলে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বারতো তো বলে মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। পাশাপাশি তারা মনে করছেন, হাইকোর্ট যে শর্ত দিয়েছে, সেই শর্ত মেনে কি করে রাজ্য সরকার সাগর মেলা চালাবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। ফলে শর্ত না মানলে আদালত আদপে রাজ্য সরকারকেই মেলা বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করছেন আইনজীবীরা।

আদালত কক্ষে সওয়াল-জবাব শেষ আগেই। শুক্রবার কোভিড আবহে শর্তসাপেক্ষে গঙ্গাসাগর মেলা করার অনুমোদন দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তবে সপ্তাহব্যাপী মেলা চালাতে হলে শর্ত পুরোপুরি মানতে হবে বলে কড়া বার্তা দিয়েছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চ। তবে শর্তপূরণ হচ্ছে কি না, তার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গড়ে দিয়েছেন তিনি। যদি কোনও শর্ত ভাঙা হয়, তৎক্ষণাৎ মেলা বন্ধের নির্দেশ দিতে পিছপা হবে না উচ্চ আদালত। বিধি মেনে গঙ্গাসাগর মেলা করতে চায় রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার আদালতে সওয়াল-জবাবের সময় রাজ্যের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল এমনই জানিয়েছিলেন। তার পালটা জবাবে মামলাকারীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব যদি বন্ধ হয় তাহলে কেন গঙ্গাসাগর মেলা হবে? দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের পর ওইদিন রায়দান স্থগিত হয়ে যায়। এরপর শুক্রবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি কেসাং ডোমা ভুটিয়ার ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়ে দেন, মেলা বন্ধ হচ্ছে না।

তবে রাজ্য সরকার যে সব বিধি মেনে মেলা করার কথা আদালতে জানিয়েছে, সেসব যেন কাঁটায় কাঁটায় মেনে চলা হয়। আর এসব মেনে চলা হচ্ছে কি না, তার জন্য ৩ সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দেওয়া হয়েছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীর নেতৃত্বে তৈরি কমিটিতে থাকবেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বা তাঁর নির্বাচিত কোনও প্রতিনিধি এবং রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বা তাঁর নির্বাচিত প্রতিনিধি। এই তিন সদস্যের কমিটি নিয়মকানুন কড়া পর্যবেক্ষণে রাখবেন। যদি বিধি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে মনে হয় এবং মেলা বন্ধের সুপারিশ করে এই কমিটি, তাহলে তৎক্ষণাৎ হাইকোর্ট মেলা বন্ধ করে দিতে পারে।
তবে মেলার শুরুর আগেই থাবা বসিয়েছে করোনা ভাইরাস। বাবুঘাটের ট্রানজিট ক্যাম্পে RT-PCR টেস্টে ৬ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে খবর। এই ক্যাম্প থেকেই গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা দেন পুণ্যার্থীরা।