কলকাতা ব্যুরো: বড়দিনেই শোনা গেল বাঘের গর্জন। এমনকী নদীর চরে এখনও টাটকা তার পায়ের ছাপও। তার মাঝেই পিয়ালির চরে পিকনিকে ব্যস্ত পর্যটকরা। এদিকে বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকা বনকর্মীদের মোবাইল ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে বাঘের গর্জনও। ফলে পিয়ালি দ্বীপে জোর তৎপরতা বন দফতরের কর্মীদের।
মনে করা হচ্ছে একটি বাঘ মাতলা পেরিয়ে কুলতলির কেল্লার দিকে গিয়েছে। নতুন করে কেল্লা এলাকায় খাঁচা পাতার প্রস্তুতি নিয়েছে বন দফতর। এদিকে বাঘের গর্জন এবং পায়ের টাটকা ছাপ দেখা যাওয়ায় আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চলছে এলাকার বাসিন্দাদের মাইকিং করে সতর্ক করা হচ্ছে।
শীতের মাঝামাঝি ভরা পর্যটন মরসুম। বড় দিনের সপ্তাহজুড়েই মানুষ পিয়ালি দ্বীপে আসেন। বিশেষত বড়দিনে বনভোজনের জন্য এক আদর্শ জায়গা পিয়ালী। কিন্তু কেল্লা এলাকায় বাঘের গর্জন শোনার পরই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কেল্লা পিকনিক স্পট।

২৫ ডিসেম্বর উপলক্ষে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েক হাজার পর্যটক এই পিয়ালি নদীর চরে আসেন। গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে পর্যটক আনাগোনা কম হলেও এ বছর অনেকেই এসেছিলেন। তাঁদের সবাইকেই পিয়ালির চর এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। পুলিশের তরফ থেকে শীতের ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকেদের কৈখালিতে মাতলা নদীর চরে পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বন দফতরের তৎপরতা। পিয়ালির চর বা কেল্লা এলাকার জঙ্গল জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন বন কর্মীরা। বাঘের পায়ের ছাপ লক্ষ্য করে বন দফতরের প্রাথমিক অনুমান, ৫ নম্বর গোরানকাঠি গ্রামের পাশে কেল্লা শেখারপাড়া এলাকায় সে গিয়ে থাকতে পারে। এর আগে পাঁচ নম্বর গোরানকাঠি এলাকার জাল লাগিয়েছিল বনদফতর। সেটি খুলে এনে কেল্লা শেখপাড়া এলাকায় নতুন করে জাল লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে কুলতলির গোপালগঞ্জ পঞ্চায়েতের গায়েনের চক এলাকায় বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। জঙ্গল সংলগ্ন নদীর চরে বাঘের পায়ের ছাপও দেখা যায়। মৎসজীবী দুই মহিলা নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েই বাঘ দেখতে পান বলে দাবি করেন। তাঁরা চিৎকার শুরু করলে আশেপাশ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে আসেন। চিৎকার শুনে চলে আসেন অন্য মৎস্যজীবীরাও। নৌকার বৈঠা, লাঠি নিয়ে তাঁরা তেড়ে যান। উদ্ধার করা হয় দুই মহিলাকে।
কিন্তু ভরা পর্যটন মরসুমে পিননিক স্পট এলাকায় এমন বাঘের হানা নিয়ে চিন্তিত প্রশাসন। পিয়ালি দ্বীপই এলাকার বাসিন্দাদের কাছে কেল্লা নামে পরিচিত। এখানে পিয়ালি নদী মাতলাতে এসে মিশেছে। ফলে প্রাকৃতিক ভাবে এ এলাকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৭২ সালে কংগ্রেস আমলে বাঁধ দিয়ে এই পিয়ালি নদীতে মাতলার নোনা জল ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। পিয়ালি আর মাতলার সংযাগস্থলে সেই বাঁধের লাগোয়া জঙ্গলাকীর্ণ ছোট্ট চরই পর্যটকদের প্রিয় হয়ে উঠেছে ক্রমশ।